১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৫১তম অধিবেশনে প্রথমবারের মতো ভাষণ দিয়েছিলেন। জাতিসংঘের ৭৪তম অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বরাবরের মতো এবারও তিনি বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন। এবারও তিনি বাংলাদেশের অগ্রসরমাণ অর্থনীতির কথা তুলে ধরেছেন তাঁর ভাষণে।
বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা ও মন্দার পরও বাংলাদেশ ১০ বছর ধরে সমৃদ্ধি ধরে রেখেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেছেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের বিস্ময় হিসেবে সারা বিশ্বে আলোচিত। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জিডিপির আকার, রপ্তানি আয় ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির বিষয়গুলোও উঠে এসেছে তাঁর ভাষণে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংকট রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে নতুন করে বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গা জনস্রোত যখন নাফ নদ পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে, তার এক মাসের মাথায় সংকট সমাধানে জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শান্তিপূর্ণ সমাধানে মিয়ানমার সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় গত বছর জাতিসংঘ অধিবেশনে হতাশা প্রকাশ করে বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয়েছিল তাঁকে। এবার তাঁর ভাষণে চার দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন তিনি। প্রস্তাবগুলো হচ্ছে: ‘১. রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন এবং আত্তীকরণে মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পূর্ণ প্রতিফলন দেখাতে হবে। ২. বৈষম্যমূলক আইন ও রীতি বিলোপ করে মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থা তৈরি করতে হবে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন সফরের আয়োজন করতে হবে। ৩. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েনের মাধ্যমে মিয়ানমার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। ৪. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণগুলো বিবেচনায় আনতে হবে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যান্য নৃশংসতার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।’ মিয়ানমারের দমন অভিযানে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের অনিশ্চয়তা যে আঞ্চলিক সংকটের মাত্রা পেতে যাচ্ছে, তা বিশ্বকে উপলব্ধি করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি বাস্তবিকপক্ষেই দুঃখজনক যে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান না হওয়ায় আজ এই মহান সভায় এ বিষয়টি আমাকে পুনরায় উত্থাপন করতে হচ্ছে।’
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকের সাইড লাইনে তিনি বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। আলোচনায় আসামের নাগরিকপঞ্জিসহ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো স্থান পায় বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। সমন্বিত টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের ব্যাপক সফলতার জন্য গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই-গ্যাভি) তাঁকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননায় ভূষিত করেছে। পেয়েছেন ইউনিসেফের ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’। তাঁর এই অর্জন দেশের জন্যও গৌরব বহন করে।
সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে উজ্জ্বল বাংলাদেশকে তুলে ধরার পাশাপাশি সংকটের বিষয়টিও চিহ্নিত করে সমাধানের পথও দেখিয়েছেন। তাঁর প্রস্তাব বিশ্বনেতৃত্ব বিবেচনা করবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।