সিলেট বিভাগের ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিড-ডে এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ॥ সিলেট কারিগরি শিক্ষায় পিছিয়ে রয়েছে

44
সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে মিড- ডে মিল খাচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

স্টাফ রিপোর্টার :
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, সারা দেশে শিক্ষার মান উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে মিড-ডে মিল শুরু করেছে সরকার। সিলেট বিভাগের ৬২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মিড-ডে মিল চালু করা হয়েছে। গতকাল রবিবার দুপুরে সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল কার্যক্রমের উদ্বোধন শেষে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান সমস্যা সমাধানে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দুই-একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সমস্যা হলেও বাকি সব বিশ্ববিদ্যালয় সঠিকভাবে চলছে। তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এর আগে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সিলেটের চার জেলার নতুন ১৫টি শিক্ষা প্রতষ্ঠানেও মিড-ডে মিল কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। উদ্বোধন হওয়া ১৪টি বিদ্যালয়ের মধ্যে সিলেটে ২, মৌলভীবাজারে ৩, হবিগঞ্জে ৪ এবং সুনামগঞ্জের ৫টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এরপর শিক্ষার্থীদের সাথে মিড-ডে মিলের খাবার খান শিক্ষামন্ত্রী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বেলা ১২ টার দিকে বিমানযোগে সিলেটে এসে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
এদিকে, গতকাল রবিবার বিকেলে সিলেটে জেলা স্টেডিয়ামে ৪৮তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমপিওভুক্তির তালিকা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই তা প্রকাশ করা হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আরো বলেন, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিক্ষাখাতের সামগ্রিক সংস্কারে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছেন। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। একটি সমন্বিত শিক্ষা আইন প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
ডা. দীপু মনি বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ নিয়মিত লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডসহ সহপাঠ কার্যক্রমের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আমি আশা করি আমাদের ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলার মাধ্যমে সুস্থ্য শরীর ও মনন গঠন করবে। মাদক ও জঙ্গিবাদ থেকে আমাদের ছেলে মেয়েদের বিরত রাখতে খেলাধুলা একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
৬৪০টি প্রতিষ্ঠানে কারিগরি শিক্ষা ট্রেড চালু হচ্ছে : ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কারিগরি শিক্ষার ট্রেড চালু হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেছেন, টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে হলে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। এজন্য সরকার কারিগরি শিক্ষার বিস্তারে কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে এ বছর দেশের ৬৪০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার ট্রেড চালু করা হবে।
গতকাল রবিবার বিকেলে নগরীর দক্ষিণ সুরমায় সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে কারিগরি শিক্ষা বিস্তারে করণীয় বিষয়ে কর্মশালা ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিতরা কর্মক্ষেত্রে কখনো পিছিয়ে থাকতে পড়ে না। কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প-’৪১ বাস্তবায়নে কারিগরি শিক্ষা এক ভাগ থেকে ১৭ ভাগে উন্নিত করা হয়েছে। তবে প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে এখনও পিছিয়ে আছে। কারিগরি শিক্ষার বিস্তার ঘটলে প্রবাসে গিয়ে ভাল চাকুরীর সুযোগ পাওয়া যায়। তিনি শিক্ষকদেরকে কারিগরি শিক্ষার প্রতি আন্তরিক হয়ে শিক্ষার্থীদেরকে দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করার আহবানও জানান।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) রওনক মাহমুদ এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল এমপি বলেন, কারিগরি শিক্ষায় এখনো আমরা পিছিয়ে রয়েছি। বর্তমান বিশে^ কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাই বেকারত্ব দূরীকরণে ও দক্ষ মানব সম্পদ তৈরী করার লক্ষ্যে সরকার কারিগরি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে।
সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এর অধ্যক্ষ ড. ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আব্দুল্লাহ’র পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সিনিয়র সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুন্সী শাহাব উদ্দীন আহমেদ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মুরাদ হোসেন মোল্লা। কর্মশালায় সিলেটের ১৪৫টি স্কুল ও মাদরাসার শিক্ষকগণ অংশ গ্রহণ করেন।