খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল দেওয়ার অর্থ ভোক্তাদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া। ক্যান্সার সৃষ্টি, লিভার-কিডনি বিকল হওয়া, পাকান্ত্রিক রোগসহ আরো অনেক অসুখের সাম্প্রতিক বাড়বাড়ন্তের অন্যতম কারণও মনে করা হয় এই ভেজাল খাদ্যকে। বাজারে অনেক পণ্যেই এমন ক্ষতিকর ভেজাল পাওয়া যায়, যা ভোক্তার মৃত্যুর কারণও হতে পারে। শুধু ভেজাল নয়, খাদ্যদ্রব্যের পচন, পোকার আক্রমণ ঠেকাতে সরাসরি কীটনাশক প্রয়োগের প্রমাণও পাওয়া যায়। আর এই ভেজাল বা বিষাক্ত খাবার খেয়ে প্রতিবছর কত মানুষ মারা যাচ্ছে তার কোনো হিসাব কি আমরা করে রেখেছি? এগুলো রোধ করার জন্য সরকারের অনেক সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান থাকলেও মাঝেমধ্যে দু-একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ছাড়া তাদের সক্রিয়তা নেই বললেই চলে। ভেজাল প্রতিরোধে কঠোরতার অভাবে ভেজাল ক্রমে সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় দেশের উচ্চ আদালত যে সক্রিয়তা প্রদর্শন করছেন, তা আমাদের কিছুটা হলেও আশ্বস্ত করে। কিন্তু মূল কাজটি করতে হবে সরকার তথা সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকেই।
উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর মানহীন পণ্য উৎপাদনকারী সাতটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। আমাদের প্রশ্ন, তাদের লাইসেন্স প্রদানের সময় কি মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের শর্তগুলো সঠিকভাবে পরীক্ষা ও নিশ্চিত করা হয়েছিল? এত দিন ধরে প্রতিষ্ঠানগুলো এই মানহীন পণ্য বাজারজাত করল কিভাবে? উচ্চ আদালত থেকে যে ৫২টি পণ্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে, জানা যায় সেসব পণ্যই বাজারে বিক্রি হচ্ছে। সেগুলোর বিক্রি বন্ধ করার উদ্যোগ কোথায়? ভ্রাম্যমাণ আদালত হোটেলে পচা-বাসি খাবার কিংবা ভেজাল পণ্য উৎপাদনকারী লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পেলেও সামান্য কিছু টাকা জরিমানা করছেন। এতে কি এসব অপরাধ কমবে? চীনে কয়েক বছর আগে দুধে রাসায়নিক বস্তু মেশানোর হিড়িক পড়েছিল। এ ধরনের অপরাধকারী কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদানসহ ভেজালের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ায় দুধে ভেজাল মেশানোর ঘটনা দেশটিতে নেই বললেই চলে। আমরা কেন তেমন ব্যবস্থা নিতে পারি না? আমাদের দেশেও দুধে ক্ষতিকর সিসাসহ নানা উপাদান পাওয়ার খবর এরই মধ্যে পত্রপত্রিকায় আসতে শুরু করেছে। পশুখাদ্যেও ভেজাল দেওয়া হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে পশুর মাংস ও দুধে।
জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। সাধারণ মানুষের পক্ষে ভেজাল খাদ্য চিহ্নিত করা প্রায় অসম্ভব কাজ। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকেই তা করতে হবে। প্রয়োজনে খাদ্যমান নিশ্চিতকরণ এবং ভেজাল নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। পাশাপাশি তাদের কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান নিয়মিত করতে হবে এবং আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ভেজালকারীর শাস্তি আরো কঠোর করতে হবে এবং তা যথাযথভাবে কার্যকর করতে হবে। আমরা মনে করি, শুধু তখনই ভেজাল কমে আসবে।