এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশন থেকে আগেই জানানো হয়েছে। ১৯৮৫ সালে উপজেলা পরিষদ চালু হওয়ার পর ১৯৯০ ও ২০০৯ সালে এক দিনেই সব উপজেলায় ভোট হয়েছিল। ২০১৪ সালে ছয় ধাপে ভোট করেছিল তৎকালীন ইসি। সেই ধারা বজায় রেখে এবার বিভাগওয়ারি ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। সে ক্ষেত্রে প্রথমে আট বিভাগের ভোট হবে চার দিনে। এক দিনে দুই বিভাগের ভোট হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ কবে হচ্ছে তা দেখে বাকিগুলোর ভোট হবে পঞ্চম ধাপে। উপজেলা ভোটেও ইভিএম ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবারও এককভাবে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দেবে বলে জানিয়েছে। দেশের অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি এখন পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন দলের জোটভুক্ত দলগুলো উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আগে স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনই দলীয় প্রতীকে হতো না। আইন সংশোধনের পর দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হচ্ছে। আশা করা যেতে পারে, এবারের উপজেলা নির্বাচনে একাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো সব দল অংশ নেবে। উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। ধাপে ধাপে নির্বাচন হওয়ায় অনেক সময়জুড়ে ভোটের আমেজ থাকবে দেশজুড়ে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে অভাবনীয় জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতাসীন দলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ থাকবে বেশি। এরই মধ্যে দলটি উপজেলা নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী লীগের সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে গ্রামগুলোয় শহরের মতো নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকায় উপজেলা নির্বাচনকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ তৃণমূলেও ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখতে সংসদ সদস্যদের আত্মীয়দের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে দল রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে বলে মনে করা যেতে পারে। একদিকে যেমন এলাকায় পরিবারতন্ত্র কায়েমের চেষ্টা থেকে ক্ষমতাসীনদের বিরত রাখা যাবে, তেমনি দলের অভ্যন্তরেও কোনো বিরোধ থাকবে না।
স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হলেও উপজেলা পরিষদের গুরুত্ব রয়েছে। দেশের সব রাজনৈতিক দলকেই বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করতে হবে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জনের পর ভারসাম্য রক্ষার একটি মাধ্যম হতে পারে উপজেলা। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়ে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। আশা করা যেতে পারে, দেশের সব রাজনৈতিক দল বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবে না। উপজেলা নির্বাচনেও সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হোক।