চিকিৎসকরা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে ওএসডি করে দিতে হবে – প্রধানমন্ত্রী ॥ রোগীর সেবা না দিলে দ্বিতীয় শ্রেণীর নার্সদের দরকার নেই

73

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসকদের বেসরকারী হাসপাতালে এসে যেন রোগী দেখতে না হয় সেজন্য হাসপাতালগুলোতেই ‘বিশেষ ধরনের সেবা’ চালুর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কর্মস্থলে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতিতে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সবার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। চিকিৎসকদের যেখানে বদলি করা হবে, তারা যদি সেখানে কাজ না করে তাহলে তাদের ওএসডি করে দিতে হবে। নতুন চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে। কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে তাৎক্ষণিক ওএসডি করতে হবে। আর নার্সরা যদি সেবা দিতে না চায়, তাহলে তাদেরও চাকরি ছেড়ে দিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। রবিবার সকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এমন নির্দেশ দেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ডাক্তাররা সব সময় প্রাইভেট চিকিৎসা দিতেই পছন্দ করেন। পৃথিবীর বহু দেশ আছে, সরকারী চাকরি যতদিন করে ততদিন প্রাইভেট চাকরি করতে পারে না। এমনকি সিঙ্গাপুরেও এনইউএইচের ডাক্তাররা প্রাইভেট চিকিৎসা করতে গেলে ওই হাসপাতালের মধ্যেই আলাদা ব্যবস্থা আছে।
বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিঃবিভাগে এ ধরনের একটি ব্যবস্থা চালু থাকার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কিন্তু আমরা অন্যান্য জেলা হাসপাতালেও করে দিতে পারি, যেন তাদের বাইরে না যেতে হয়। সন্ধ্যার পরে বা ছুটির সময় ওখানেই একটা প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ব্যবস্থা বা আলাদা একটা উইং করে দেয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, হাসপাতালে রোগী দেখার পরে প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে কেউ (চিকিৎসক) রাত ১২টা, একটা, দুটো পর্যন্ত নাকি অপারেশন করেন। যে ডাক্তার রাতভর অপারেশন করবেন, তিনি আবার সকাল আটটায় এসে রোগী দেখবেন কি করে? তার মেজাজ তো এমনিই খিটখিটে থাকবে। এটা যেন না হয় সেদিকে একটু দৃষ্টি দেয়া দরকার।
চিকিৎসার জন্য রেফারেল সিস্টেম চালুসহ দেশে প্রথম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটি হাসপাতালেই অনলাইন রেফারেল সিস্টেম চালু করতে হবে। তার সরকার দেশে চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে এবং নার্সদের প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে তিনি এ সময় নার্সদের পেশাকে দ্বিতীয় গ্রেডে উন্নীত করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে রোগীদের সেবার বিষয়ে তাদের আরও আন্তরিক হওয়ার নির্দেশ দেন।
অনেক নার্স ভালভাবে দায়িত্ব পালন না করার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের তো রোগীদের সেবা দিতে হবে। সেজন্যই আমরা তাদের পদমর্যাদা এবং সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছি। রোগীর সেবা না দিলে ঐ দ্বিতীয় শ্রেণীর নার্সদের দরকার নেই। আমার পরিষ্কার কথা, আমি তাদের সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছি। কারণ, রোগী যেন সেবা পায়। নার্সদের মাঝে মানসিকতা আছে যে তারা যেহেতু দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে উন্নীত হয়েছেন, তাই তারা রোগীকে সেবা দেবেন না। না, এটা হবে না। তাদের অবশ্যই রোগীকে সেবা দিতে হবে, আমরা তাদের এত সম্মান দিয়েছি যাতে তারা সেবা দেন।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, একজন নার্সের কাজ কিন্তু শুধু ওষুধ খাওয়ানো নয় বরং পাশ্চাত্যে নার্সরাই রোগীর সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে রোগী সম্পর্কে সার্বিক রিপোর্ট তৈরি করে ডাক্তারকে দেখায়, ডাক্তার সেই রিপোর্ট দেখে চিকিৎসা দেয় এবং রোগীর সার্বিক সেবা করাটাই নার্সের দায়িত্ব। তিনি বলেন, নার্সদের আমি সম্মান দিয়েছি ঠিক। কিন্তু রোগীর সেবাটা করতে হবে, এটা বাধ্যতামূলক। না করলে তারা কাজে থাকবে না, চলে যাবে। আমরা নতুন লোক প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়ে আসব।
সরকারপ্রধান এ সময় চিকিৎসকদের ইন্টার্নশিপ দু’বছর করে দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এক বছর তারা থাকবে যে প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রী নিয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানে এবং আর একটি বছর তাদের যুক্ত থাকতে হবে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। তার সরকার এটি চালুর উদ্যোগ নেয়ার পরে বিষয়টি এখন কি অবস্থায় রয়েছে তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। তিনি এ সময় তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশব্যাপী কমিউনিটি ক্লিনিক চালুতে তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, এটা কিন্তু পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হবে না। হাসপাতাল হবে উপজেলা হাসপাতাল। আর এখানে একটি প্রাথমিক চিকিৎসা বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে। এর পর হাসপাতালে সংশ্লিষ্ট রোগীকে রেফার করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসক এবং নার্সদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রতিটি হাসপাতালে সিসি ক্যামেরা ইনস্টল থাকা গুরুত্বপূর্ণ এবং রোগীর কিছু হলেই চিকিৎসকের ওপর চড়াও হওয়ার মতো মানসিকতা জনগণকে পরিবর্তন করার পরামর্শ দিয়ে ডাক্তার এবং নার্সদের উদ্দেশে বলেন, যখনই একটা রোগী আসে সঙ্গে সঙ্গেই তারা যেন চিকিৎসার ব্যবস্থাটা নেয়, ফেলে না রাখে। সেবামূলক মানসিকতাটা যেন চিকিৎসকদের মাঝে গড়ে ওঠে সেজন্য সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার। তিনি এজন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি ভালভাবে প্রচারের ওপর জোর দেয়ার পাশাপাশি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন কারিকুলাম যুগোপযোগী করার এবং দেশ-বিদেশে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচী আরও গতিশীল করার পরামর্শ প্রদান করেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালিক এবং প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।