বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে এক ধরনের শূন্যতা বিরাজ করছে, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশে অবসরের পর পেশাজীবীরা যেভাবে রাজনৈতিক দলে ঢুকে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী বনে যান, তা রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের পথে বাধার সৃষ্টি করছে।’ রাজনৈতিক দলগুলোকে এসব ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ব্যবসায়ী-শিল্পপতি থেকে শুরু করে পেশাজীবীরা সরাসরি রাজনীতিতে এসে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণেই রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন হচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি। তাঁর মতে, রাজনীতিতেও এক্সপার্টের প্রয়োজন আছে। তবে রাজনীতিবিদদের উঠে আসতে হবে গণমানুষের মধ্য থেকে। কিন্তু আমাদের রাজনীতিতে যেন এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগীর আগমন ঘটেছে। রাজনীতিতে অর্থ ও পেশিশক্তির দাপটও স্পষ্ট। এ অবস্থা থেকে রাজনীতিকে মুক্ত করার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। দলগুলোকে রাজনীতি নিয়ে ভাবতে বলেছেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেছেন, ‘…সব রাজনৈতিক দলকে এটা চিন্তা করা উচিত।…এক্সপার্টের দরকার আছে।’ এক্সপার্টদের দলের উপদেষ্টা করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। রাজনীতিতে অবাঞ্ছিতদের অনুপ্রবেশ বন্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতি সত্যিকার অর্থেই এক ক্রান্তিকাল পার করছে। রাজনীতি এখন অনেকের কাছেই হয়ে উঠেছে বিত্তবৈভব অর্জনের হাতিয়ার। একাদশ সংসদ নির্বাচনের দিন এগিয়ে আসছে। এখন থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নানামুখী কর্মকাণ্ড চোখে পড়তে শুরু করেছে। এলাকায় গণসংযোগ থেকে শুরু করে শোডাউন হচ্ছে। কিন্তু এই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কতজন সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত? কতজনের সঙ্গে গণমানুষের সরাসরি যোগাযোগ আছে? শুধু টাকা-পয়সা ঢেলেই কি ভোটের রাজনীতিতে ভোটারের মন জয় করা সম্ভব? অস্বীকার করার উপায় নেই, রাজনীতি আজ সমষ্টির কল্যাণের চেয়ে ব্যক্তির উদরপূর্তির মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনে দিনে এটাই যেন একটি ধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে ভবিষ্যতের রাজনীতি আরো অনেক বেশি নোংরা হবে। রাজনীতির অধঃপতন রাষ্ট্রপতিকে ব্যথিত ও মর্মাহত করেছে বলেই তিনি তাঁর নির্ধারিত বক্তব্যের বাইরে গিয়ে রাজনীতি নিয়ে কথা বলেছেন। তাঁর এই মূল্যবান উপলব্ধি যদি দেশের রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্ব উপলব্ধি করতে পারে, তাহলেই মঙ্গল।
দেশের রাজনীতিকে অবশ্যই উদারনৈতিকতার পথে ফিরতে হবে। এর জন্য তৃণমূল পর্যায় থেকে চেষ্টা করা দরকার। ডাকসু নির্বাচনে আশার আলো দেখছেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেছেন, ডাকসু নির্বাচন হয়ে গেলে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্রসংসদের নির্বাচন হবে। এর মধ্য দিয়ে নেতৃত্বের শূন্যতা দূর হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। একটি নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে নেতৃত্বের বিকাশ হলে ভবিষ্যতে রাজনীতিতে ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’র সুযোগ থাকবে না। আর সে জন্যই রাজনীতির গুণগত মানের পরিবর্তন দরকার। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।