কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রত্যন্ত অঞ্চলে উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালে সবধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পরও ডাক্তাররা থাকেন না, এটা নিয়ে নিজের দুঃখের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘একটা দুঃখের কথা আমি বলতে চাই। সেটা হলো, উপজেলা হাসপাতালগুলোকে উন্নতমানের করার জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি, যেখানে আমাদের ৫০ বেডের একটি হাসপাতালে কমপক্ষে ১০ জন চিকিৎসক প্রয়োজন, সেখানে কোথাও একজন কোথাও কোথাও খুব বেশি হলে চারজন ডাক্তার রয়েছেন। সেখানে কিন্তু ডাক্তার থাকেন না। মানুষ তাহলে সেবা পাবে কীভাবে। এটা আমার প্রশ্ন।’
রবিবার বিকালে বিকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ‘চিকিৎসক সম্মেলন-২০১৮’তে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার অনুরোধ থাকবে চিকিৎসক ভাই-বোনদের কাছে- মানুষের সেবা করাটা কিন্তু সর্বপ্রথম কর্তব্য। তিনি বলেন, পদ আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি কিন্তু এখানে আমরা ডাক্তার পাই না, নিয়োগও আমরা দিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু কেন এই অবহেলা, মানুষের প্রতি। এটা নিশ্চয়ই জনগণ প্রত্যাশা করে না। সেটা আমি আপনাদেরকে ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করবো।
প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার আগামী ভোটে পুনরায় নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসতে পারলে প্রত্যেক বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার উপজেলা পর্যায়ে বহুতল আবাসন সুবিধা সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারদের সুবিধার জন্য এবং তাদের শহরমুখিতা প্রতিরোধেই এটা করা হচ্ছে। এসব ফ্ল্যাটে তারা (চিকিৎসকরা) ভাড়া থাকার সুযোগ পাবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবাটা নিশ্চিত করা সরকার হিসেবে এবং মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্বও কর্তব্য বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, সেজন্য বিশেষায়িত চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান, নার্সিং থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে আমাদের প্রশিক্ষণ প্রদান একান্তভাবে প্রয়োজন। তার জন্য আমরা যেমন ইনস্টিটিউশনগুলোও করে দিয়েছি তেমনিভাবে চিকিৎসার সুযোগটাও আরো ব্যাপকভাবে সৃষ্টি করতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বর্তমান আধুনিক যুগে স্বাস্থ্যখাত বা চিকিৎসাসেবারও অনেক আধুনিকায়ন হয়ে গেছে। নতুন নতুন ডেফিনেশন এসে গেছে। নতুন নতুন চিকিৎসা শাস্ত্রও কিন্তু চলে এসেছে- কাজেই তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের চিকিৎসা সেবা ও শিক্ষার মানটা বাড়াতে হবে। যেন আমরা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে প্রাইভেট হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজ খুব বেশি ছিল না, প্রথমবার সরকারে থাকার সময়ই আমি মেডিকেল যন্ত্রাংশ থেকে সকল ট্যাক্স প্রত্যাহার করে নেই বা কমিয়ে দেই যাতে করে আমাদের দেশের বেসরকারি খাতটা আরো উন্মুক্ত হয় এবং বেসরকারি খাতে আরো হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজ গড়ে উঠতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেজন্য আজকে চিকিৎসকও যেমন তৈরি হচ্ছে সেভাবে মানুষ সেবাটাও পাচ্ছে। কিন্তু সেবার মানটাকে আরো উন্নত করতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামগুলোর দিকে আরও মনযোগ দেয়া দরকার, যাতে চিকিৎসা সেবাটা তারা যথাযথভাবে করতে পারেন।
আমাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজের অত্যন্ত পুরাতন জরাজীর্ণ অবস্থা। সেখানে শত বছরের পুরাতন ভবনও রয়েছে যদিও কেউ কেউ সেগুলোকে হেরিটেজ বলে। তবে, সেই হেরিটেজ মাথায় ভেঙে পড়লে প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে আশংকা ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি নতুন প্ল্যান তৈরি করেছি একটি অত্যন্ত আধুনিক মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল সেখানে আমরা নির্মাণ করে দেব। ইতোমধ্যেই দ্বিতীয় ইউনিট করে এর শয্যা সংখ্যা ৮০০ থেকে বাড়িয়ে ১৩০০ করা হয়েছে এবং নতুন হাসপাতাল করা হলে এই শয্যাসংখ্যা আরো বাড়ানো হবে।
সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে মোট মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ১১১টি। যার মধ্যে সরকারি ৪২টি এবং বেসরকারি ৬৯টি। তিনি বলেন, তার সরকার প্রতিটি জেলায় একটি করে মেডিকেল কলেজ তৈরি করতে চায়। যাতে করে নতুন চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি জেলার জনগণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা গ্রহণের সুযোগ পান। রাজশাহী ও চট্টগ্রামে নতুন দু’টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় চালু করার জন্য উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সিলেটে আরও একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালিক এবং কনফেডারেশন অব মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন অব এশিয়া অ্যান্ড ওশেনিয়া অঞ্চলের সভাপতি ডা. রবীন্দ্রান আর নাইডু অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) সভাপতি ড. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া এবং বিএমএ মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিএমএ মহাসচিবকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় পতাকা এবং সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করে চিকিৎসক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এ সময় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। পরে তিনি শান্তির প্রতীক পায়রা ওড়ান। প্রধানমন্ত্রী সম্মেলন উপলক্ষে অনুষ্ঠানে স্মরণিকারও মোড়ক উন্মোচন করেন।