হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
সিলেট বিভাগে ২ লাখ হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর আবাদ করা হয়েছিল ১ লাখ ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে। শুক্রবার হবিগঞ্জে আউশ ও ভুট্টা আবাদ বৃদ্ধিতে করণীয় শীর্ষক কর্মশালায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ হলরুমে আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সনৎ কুমার সাহা এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বোরো ধান উৎপাদনে ব্যয় এবং ঝুকি দু’টিই বেশি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এটির ক্ষতিও বেশি হয়। কৃষকরা ঝুকিতে পড়েন। খরচও বেশি। সার, সেচ দু’টিই বেশি পরিমানে দিতে হয়। ১ কেজি বোরো ধান উৎপাদনে ৩২শ’ লিটার পানি লাগে। কিন্তু আউশের ক্ষেত্রে খরচ কম। সারও কম লাগে। ফলনও বেশি হয়। এক বিঘা জমিতে ১৬ থেকে ২০ মন ধান উৎপাদন হয়। সেচের খুব প্রয়োজন হয়না। তবে ধান শুকাতে গিয়ে কিছু চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়। কারণ এ সময় বৃষ্টিপাত প্রচুর হয়। টানা ৪/৫ দিনও বৃষ্টি হয়। ফলে সরকার ডায়ার দিয়ে শুকানোর ব্যবস্থা করছে। ভুট্টা উৎপাদনের প্রতি জোর দিয়ে তিনি বলেন, ভূট্টা উৎপাদনে খরচ কম। ফলন বেশি পাওয়া যায়। দামও বেশি মেলে। এতে কৃষক অধিক লাভবান হবেন। ক্ষতি দিয়ে খুব বেশিদিন কৃষকদের ধরে রাখা যাবেনা। ফলে যে ফসল উৎপাদনে কৃষকরা লাভবান হবেন সেদিকে সরকার বেশি জোর দিচ্ছে। ভুট্টা বিক্রির জন্য যে কোম্পানীগুলো পশু ও মাছের খাবার তৈরী করে তাদের সাথে কৃষকদের যোগসূত্র তৈরী করে দেয়া হবে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন পরিচালক ড. সৈয়দ নূরুল আলম ভুট্টা উৎপাদনের পদ্ধতি তুলে ধরে বলেন, আমেরিকার এক ধরণের রাক্ষুকে পোকা আর্মিওয়ার্ম বাংলাদেশে এসেছে। সম্প্রতি ভুট্টা গাছে এ পোকার আক্রমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২০১৮ সালের মে মাসে এটি প্রথম ভারতে দেখা যায়। এ জাতের একেকটি নারী পোকা ১৫শ থেকে ২ হাজার ডিম পাড়ে। যা অন্য কোন পোকা পাড়তে পারেনা। এরা পাতার নীচ অংশে ডিম পাড়ে। প্রতিটি পাতায় তারা ১৫০ থেকে ২০০টি ডিম পাড়ে। এক রাতে তারা হাজার মাইল পর্যন্ত উড়ে যেতে পারে। গাছের নতুন পাতা গজানোর সময় নরম অংশে ঢুকে তারা ক্ষতি করে। এক সঙ্গে অনেকগুলো পোকা আক্রমণ করে বলে এটিকে আর্মিওয়ার্ম নাম দেয়া হয়েছে। এটি নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। এগুলোকে বাংলাদেশে উৎপাদিত ফেরোমন ফাঁদ দিয়ে ধংস করা যায়। পাশাপাশি কৃষকদের বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন করার পরামর্শ দেন তিনি।
সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আলতাবুর রহমানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মূখ্য কর্মকর্তা দেবাশীষ সরকার ও হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক ফজলুল জাহিদ পাবেল। কর্মশালায় সিলেট বিভাগের ৪টি জেলার কৃষি কর্মকর্তারা ছাড়াও কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন।