সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি অনেক দিনের। এ নিয়ে আন্দোলন হয়েছে অনেক দিন ধরে। সাম্প্রতিক সময়ে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বিষয়টির পর্যালোচনাপূর্বক সুপারিশের জন্য সচিব কমিটি গঠন করে। কমিটি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সুপারিশ করে। তাদের সুপারিশ নিয়েও নানা কথা হয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেছে, তারা কোটা বাতিল নয়, সংস্কার চেয়েছে। অন্যদিকে মন্ত্রিপরিষদসচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ছয় দফা দাবিতে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ড।
স্মারকলিপি দিতে যাওয়ার আগে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করে। সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক। তাঁরা বলেছেন, কোটা পর্যালোচনা কমিটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। কোটার সংস্কার হতে পারে কিন্তু বাতিল করা সংবিধানসম্মত নয়। অন্যদিকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে একটি মানববন্ধন কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা কোটা সংস্কার চায়, বাতিল নয়। কোটা বাতিলের সুপারিশ নতুন চক্রান্ত। একজন মন্ত্রীও কমিটির সুপারিশে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের অভিমত, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩’ অনুযায়ী যেকোনো সরকারি নিয়োগে প্রতিবন্ধী কোটা রাখার ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সুপারিশ অনুযায়ী প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বিলুপ্ত করতে হলে আইন বদলাতে হবে। আইন বলবৎ রেখে প্রতিবন্ধী কোটা বাদ দেওয়া যাবে না।
শুধু প্রতিবন্ধী কোটাই নয়, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, নারী প্রভৃতি কোটা রাখার বিষয়েও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যা হোক, সরকার অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোটা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য সচিব কমিটির সুপারিশে সায় দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বুধবার তাঁর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংস্কার/বাতিল’ শীর্ষক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
বৈঠকের পর সচিবালয়ে সংবাদ অবহিতকরণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদসচিব জানান, সংশ্লিষ্ট পর্যালোচনা কমিটির প্রতিবেদনে তিনটি সুপারিশ ছিল। তিনটি সুপারিশই অনুমোদন করা হয়েছে। এ অনুমোদনের পর যদি কখনো অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটার প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে সরকার সে ব্যবস্থা করতে পারবে। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বহাল আছে।
সরকারের এ সিদ্ধান্ত সঠিক কি না এখন সে আলোচনা শুরু হবে। বিতর্ক দেখা দিতে পারে; হয়তো এর ফলে বঞ্চিত বা অনগ্রসর বিভিন্ন গোষ্ঠী বা সম্প্রদায় আন্দোলন শুরু করবে। অধিকার সংরক্ষণের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার প্রশ্ন উঠবে এবং আদালতে রিটও হতে পারে। সেসব ভবিষ্যতের বিষয়। সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সময়ের বিবেচনায় যৌক্তিক বলেই আমরা মনে করি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া সাহসিকতার পরিচয়ও বটে। প্রয়োজন দেখা দিলে বঞ্চিত বা অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা আশা করি।