যে দল যত ভোট পাবে, সেই হারে সংসদীয় আসন – সিইসি

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সংসদ নির্বাচন আসনভিত্তিক না হয়ে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে করার পক্ষে মতামত তুলে ধরলেন প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেন, যে দল যত সংখ্যক ভোট পাবে, সেই হারে জাতীয় সংসদের আসন পাবে- এমন বিধান আনলে আমাদের পরিশ্রম অর্ধেক কমে যাবে।
কমবে পেশি শক্তির প্রভাবও।
সোমবার (১৮ জুলাই) বিকেলে নির্বাচন ভবনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এ মত প্রকাশ করেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা কিন্তু কোনো প্রাপ্তির আশায় আসিনি। আমরা যথেষ্ট পরিশ্রম করি। অনেকগুলো কাজে লাগে, অনেকগুলো কাজে লাগে না। সংসদ নির্বাচন সংখ্যানুপাতিক হলে ক্ষতি কী? সংখ্যানুপাতিক যদি হয়, প্রত্যেকটা দল নির্বাচনে দাঁড়াবে। আপনি আপনার ৩০০ জন, আমি আমার ৩০০ জন, উনি উনার ৩০০ জন প্রার্থী দেবেন। এক বছর পর গিয়ে নির্বাচন হবে। একটা দল যদি ৫০ শতাংশ ভোট পায় তাহলে ১৫০ আসন নিয়ে ফেলবে। ৩০০ নিতে পারবে না। আরেকটা দল যদি ২০ শতাংশ পায় ৬০টি, ৫ শতাংশ হলে ১৫টি আসন পাবে। আমি এতে ত্রুটি দেখি না। এটা হলে আমরা যে পরিশ্রম করি ৫০ শতাংশ কমে যেতো।
তিনি আরও বলেন, এতে সেন্টারে সেন্টারে মাস্তানি, পেশিশক্তির, অস্ত্রশক্তির প্রভাব কমে যেতো। এই ধরনের বেসিক সংস্কার ছাড়াৃ এটা আমার কিন্তু দায়িত্ব নয়। এগুলো হচ্ছে পলিটিক্যালিৃ কিন্ত এগুলো চাই। রাজনৈতিকবাবেই এগুলো বারবার চাইতে হবে। চাইতে চাইতে মানুষ বুঝবে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব জিনিসট কী। আমরা কেবল এগুলো ভাবতে পারি। কিন্তু আমার তো রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম নাই। আমি নগণ্য একজন ব্যক্তি।
বিএনপি ছাড়া নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না:
খেলাফত মজলিসের সঙ্গে এর আগে সংলাপে বসে সিইসি বলেন, এটা কিন্তু অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, সংশয় সৃষ্টি করেছে। বিএনপি যদি অংশ না নেয়, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করার যে উদ্দেশ্য, সেটা হয়তো সফল হবে না। আমরা হয়তো নির্বাচন করবো। বিএনপি কিন্তু অন্য দলের সঙ্গে বসে বিশেষ করে শাসক দলের সুরাহা করতে পারে, একটা ঐক্যমতে পৌঁছতে পারে। তাহলে সেই ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্বাচন হতে কোনো বাধা নেই। সে প্রতিশ্রুতি আমরা পাচ্ছি না। সেই অবস্থাটা আসেনি। এখনো একটা সংশয়, দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে আছি যে আল্টিমেটলি বিএনপি কী নির্বাচনে আসছে? না ওই অবস্থাটা সরকারের সঙ্গে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটা অবস্থান সৃষ্টি করবে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে এক টেবিলে বসার তাগাদা:
দুপুরে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের সঙ্গে সংলাপে বসে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমি যেটা মনে করি সরকারি দল, তারা যদি বসতেন, বসে যদি পাঁচ সাতটা মিটিং করতেন সলভ হয়ে যেতো। তারা ভিন্ন ভিন্ন মঞ্চে মিটিং করছেন। একসঙ্গে কোনো মিটিং করেননি। কিন্তু আমাদের ধারণা, সীমিত জ্ঞান হলো- আমাদের ফ্যামিলিতে কোনো সমস্যা হলে মীমাংসায় বসি। মুরুব্বিদের ডাকা হয়। এটা তো প্রচলন আছে। ওখানে বসতে হয়। ’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা দেখতে পারছি না যে আওয়ামী লীগের নেতারা, বিএনপির নেতারা একসঙ্গে বসছেন। টেবিলে বসে আলোচনা করলে অনেক ভালো হতো এবং একটা সুরাহা হতো।
নির্বাচনের নামে নাটক নয়:
সকালে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসে সিইসি বলেন, নির্বাচনের নামে নাটক মঞ্চস্থ হোক এটা কখনো চাইবো না। ইসির অনেক ক্ষমতা আছে, তা প্রয়োগের চেষ্টা করবো। বিএনপি যদি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে নতুন কোনো ব্যবস্থায় নির্বাচনে আসে, তাতে ইসির কোনো আপত্তি থাকতে পারে না। আমরা চাই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। অনুকূল পরিবেশ ও সমতল ভিত্তি তৈরি করতে চাই। একটি জবাবদিহিমূলক দায়িত্বশীল সংসদ দরকার।
তিনি বলেন, দায়িত্ব থেকে বিতাড়িত করতে হবে না। দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে পথ সুগম করে দেবো। যে কোনো উপায়ে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অপরিহার্য।
দ্বিতীয় দিনের সংলাপে চারটি দলই অংশ নিয়েছিল। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট নির্বাচনের সময় স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষাসহ পাঁচটি মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে আনার প্রস্তাব করেছে। এছাড়া জেলা প্রশাসকের পরিবর্তে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ, ‘জনতার মুখোমুখি সংসদ সদস্য প্রার্থী’ শিরোনামে উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজনসহ বেশকিছু সুপারিশ করেছে।
নির্বাচনকালীন জাতীয় পরিষদ গঠনের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, যেখানে সব দলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। আর জাতীয় পরিষদই নির্বাচনকালীন সরকারের ভূমিকা পালন করবে।
নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নয় এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারসহ চারটি সুনির্দিষ্ট দাবি জানিয়েছে খেলাফত মজলিস।
এছাড়া জাতীয় সংসদের নারী আসন ৬৪টিতে উত্তীর্ণকরণ এবং সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, নির্বাচনী ব্যয়সীমা পাঁচ লাখে আটকে দেওয়া, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার প্রচলনসহ ২০টি দাবি তুলেছে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।
দুই দিনে মোট সাতটি দলের সঙ্গে সংলাপ সম্পন্ন করল ইসি। প্রথম দিন রোববার (১৭ জুলাই) তিনটি দল- জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন- এনডিএম, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ ও বাংলাদেশ কংগ্রেস সংলাপে এসেছিল। দ্বিতীয় দিন সোমবার বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট, খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সংলাপ করেছে ইসি সঙ্গে। প্রথমদিন সংলাপে আসেনি বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল।
আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত ধারারবাহিকভাবে দলগুলোর সঙ্গে সংসদ নির্বাচনী সংলাপের আয়োজন করেছে ইসি। মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্য জোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল-এমএল; এই চারটি দল ইসিতে আসার জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছে।