পাসপোর্ট অফিসে অব্যবস্থাপনা

47

বাংলাদেশের মানুষ ঘরকুনো এ কথা বলার অবকাশ আর নেই। বিভিন্ন কারণে তাদের সংযোগশীলতা বাড়ছে। কর্মসংস্থানের প্রয়োজনে, চিকিৎসার প্রয়োজনে, শিক্ষার প্রয়োজনে বা ভ্রমণের প্রয়োজনে এ দেশের প্রচুর মানুষ এখন বিদেশে যান। তাঁদের সবার জন্য যে জিনিসটি খুবই জরুরি সেটি হলো পাসপোর্ট। অনেকেই হয়তো বা সত্বর বিদেশে যাবেন না, কিন্তু পাসপোর্ট করে রাখেন। সংযোগশীলতা যে হারে বাড়ছে, সে হারে বাড়ছে না পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সেবা। যে পরিমাণে আধুনিক ও চৌকস সেবা প্রয়োজন, সে পরিমাণে তা দিতে ব্যর্থ সংশ্লিষ্ট সংস্থা। ফলে নতুন পাসপোর্টের জন্য বা পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদনকারী ব্যক্তিদের ভোগান্তির শেষ নেই। দিনের পর দিন, কখনো মাসের পর মাস তাঁদের আবেদন ঝুলে থাকছে। অথচ সাধারণ পাসপোর্ট ২১ দিনের মধ্যে এবং জরুরি পাসপোর্ট সাত দিনের মধ্যে সরবরাহ করার বিধান রয়েছে। সময়মতো পাসপোর্ট না পাওয়ায় অনেকেই জরুরি প্রয়োজনে দেশের বাইরে যেতে পারছেন না। ফলে প্রয়োজন মিটছে না। পাসপোর্ট অফিস থেকে এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় না। ডিজিটাল যুগে এ ধরনের অব্যবস্থাপনা, কর্মসম্পাদনে অপটুতা কাম্য হতে পারে না।
মূলত পাসপোর্ট বইয়ের সংকটের কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যে বই সঞ্চয়ে রয়েছে, সেগুলো আগারগাঁও অফিসেই বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। জেলায় জেলায় থাকা পাসপোর্ট অফিসে চাহিদার অর্ধেকও সরবরাহ করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার আবেদন করা হয় কিন্তু সময়মতো পাসপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না। সম্প্রতি এ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রায় আড়াই লাখ পাসপোর্ট আবেদন আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে ৫০ লাখ পাসপোর্ট বই ছাপিয়ে আনা হচ্ছে ইংল্যান্ড থেকে। এ পর্যন্ত ১০ লাখ বইয়ের শিপমেন্ট হয়েছে বলে জানা গেছে। অবশ্য এগুলো এখনো হাতে এসে পৌঁছায়নি। কর্তৃপক্ষ বলছে, বইয়ের চেয়েও বড় সমস্যা আবেদনের হার বেড়ে যাওয়া। সবাইকে পাসপোর্ট দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে তারা। দাপ্তরিকভাবে এ কথা বলা হলেও পাসপোর্ট নিয়ে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
পাসপোর্ট সংকটের এ অবস্থার মধ্যেও বিপরীতধর্মী ঘটনা ঘটছে। চট্টগ্রাম পাসপোর্ট অফিস থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে পাসপোর্ট ইস্যু করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার এসব পাসপোর্টের বেশির ভাগই ইস্যু করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের জন্য। অন্যদিকে অব্যবস্থাপনার কারণে ই-পাসপোর্টের ব্যবস্থাও চালু হচ্ছে না। ই-পাসপোর্ট বইয়ের জন্য অপেক্ষায় থাকতে থাকতে হাতে থাকা বইও নিঃশেষিত প্রায়। দালালদের তৎপরতাও বড় এক সমস্যা। সঙ্গে রয়েছে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি। এসব সমস্যার সমাধান দরকার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করি।