দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অন্তর্র্বর্তী সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, কিন্তু তার প্রতিফলন বাজারে খুব একটা নেই। বেশ কিছু খাদ্যপণ্যের ওপর শুল্কছাড় দিলেও স্বস্তি ফেরেনি বরং নিত্যপণ্যের দাম আরও বেড়েছে। দাম লাগামহীন হয়ে যাওয়ায় সরকার আলু ও পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্কছাড় প্রত্যাহার করেছে। তার পরও দাম কমেনি এই দুই পণ্যের। বেশি বেড়েছে সোয়াবিন তেল, পেঁয়াজ, আলু, ব্রয়লার মুরগির দাম। সবজির দাম কিছুটা কমেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ১০ দশমিক ৮৭, যা গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
খাদ্যমূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। উচ্চমূল্যস্ফীতির কারণে ভর্তুকিমূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে মানুষের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এনবিআরের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পেঁয়াজের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ও সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হলো। এই প্রজ্ঞাপন জারির ফলে আমদানির পরিমাণ বেড়ে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়বে এবং মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে বলে সংস্থাটি মনে করে। কিন্তু প্রজ্ঞাপনের ১০ দিন অতিবাহিত হলেও বাজারে পেঁয়াজের ঝাঁজ রয়েই গেছে।
বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হিমাগার পর্যায়ে আট মাসে আলুর দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে। নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি ও সরবরাহব্যবস্থা তদারক ও পর্যালোচনা করতে গত ৭ অক্টোবর থেকে জেলা পর্যায়ে ১০ সদস্যের বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করছে।
অভিযোগ উঠেছে, অনেক ব্যবসায়ী আমদানির সুযোগ পেয়েও সমন্বয়হীনতার কারণে কিছু পণ্য আমদানি করতে পারেননি। আমদানি বাড়ানোর জন্য সরকার বিভিন্নমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তা সেভাবে বাড়েনি। ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও ডিম পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রজ্ঞাপন জারি করায় ব্যবসায়ীরা আমদানিতে উৎসাহ হারাচ্ছেন। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার কয়েক দফায় বাড়িয়েছে এবং কিছু নিত্যপণ্যের আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। তার পরও নিত্যপণ্যের দাম অনেক বেশি। খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে ওএমএস কর্মসূচির আওতায় চাল ও আটা বিক্রি বাড়াতে হবে সরকারকে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ১০টি কৃষিপণ্য সুলভ মূল্যে বিক্রি করছে। এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে ১৫ অক্টোবর থেকে। যা সংক্ষেপে কৃষি ওএমএস কর্মসূচি নামে পরিচিত। টিসিবির ট্রাকসেল ভর্তুকিমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি করছে। অনেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও পণ্য না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
নিত্যপণ্য বিক্রিতে টিসিবি ও খাদ্য অধিদপ্তরের কার্যক্রম আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এতে সাধারণ মানুষ সুফল পাবে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি যুগোপযোগী করতে হবে। শুল্ক কমানোর পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা যাতে আমদানিতে উৎসাহী হয় সেদিকটায় নজর দিতে হবে। অর্থাৎ আমদানি প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। বাজার তদারকি কমিটির কার্যক্রম শক্তিশালী করতে হবে। চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। বাজারে যারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যের দাম বাড়ায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সরবরাহ ও দাম ঠিক রাখতে ব্যবসায়ীদের স্বচ্ছতা ও আন্তরিকতার প্রয়োজন। বাজারে স্বস্তি ফেরাতে সরকারকে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, যাতে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে পৌঁছায়। অন্তর্র্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। সেসব উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন হোক, সেটিই কাম্য।