আগামী ২০১৮-১৯ অর্ধবছরের বাজেটে প্রায় এক কোটি মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। দেশের দুস্থ, অবহেলিত, সমস্যাগ্রস্ত ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীসহ হাওড় অঞ্চলের দরিদ্রদের নিয়ে আসা হবে এই কর্মসূচীর আওতায়। বর্তমানে ৬৭ লাখ উপকারভোগী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় বিভিন্ন ধরনের ভাতা পাচ্ছেন। এসবের মধ্যে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বিধবা ভাতা, বীরাঙ্গনা ভাতা, শিশু ও মাতৃকল্যাণ, দরিদ্র ও দুস্থ ভাতা, বয়স্ক ভাতা, জেলেদের জাটকা ধরা বন্ধ থাকাকালীন সাময়িক ভাতা, কাবিখা, টাবিখা ইত্যাদি। এ বিষয়ে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই যে, বর্তমান গণমুখী সরকার সর্বদাই নানাবিধ সামাজিক কর্মসূচীর আওতা সম্প্রসারণসহ উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর দিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এর পাশাপাশি সরকার যদি ওবামাকেয়ারের আদলে হেলথকেয়ার তথা স্বাস্থ্যসেবায় ভর্তুকি প্রদানসহ আপাতত সীমিত পর্যায়ে হলেও বেকার ভাতা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে সর্বস্তরের মানুষ উপকৃত হবে। কেননা বর্তমানে চিকিৎসা উপকরণসহ ওষুধপত্রের দাম বেড়েছে বহুলাংশে। সরকারী হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রের সুযোগ-সুবিধাও সীমিত। বিশেষায়িত চিকিৎসা অপ্রতুল। সে অবস্থায় হেলথকেয়ার তথা স্বাস্থ্যসেবায় ভর্তুকির বিষয়টি বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে বৈকি। তদুপরি অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি বেসরকারী চাকরিজীবীদেরও পেনশন স্কিম চালু করার চিন্তাভাবনার কথা বলেছেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য মোতাবেক দেশে নির্ভরশীল মানুষের অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৫৪ ভাগ। অর্থাৎ প্রতি এক শ’ কর্মে নিয়োজিত মানুষের ওপর নির্ভরশীল ৫৪ জন। এটি অস্বাভাবিক নয়। বিবিএসের তথ্যানুযায়ী ২০০২ সালে প্রতি এক শ’ জন কর্মে নিয়োজিত মানুষের বিপরীতে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর অনুপাত ছিল ৮০ জন। ২০১১ সালে এই অনুপাত নেমে আসে ৬৮ দশমিক ৪ জন। গত পাঁচ বছর ধরে এই অনুপাত ঘুরপাক খাচ্ছে সাড়ে ৫৫ ভাগে। এ থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্রমোন্নতি সম্পর্কেও ধারণা মেলে বৈকি।
নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে বিশ্বে। প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কর্মসূচীসহ নারী ও শিশু মৃত্যুর হার প্রতিরোধেও বাংলাদেশের সাফল্য প্রশংসনীয়। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ইতোমধ্যে ৭.৫ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। বেড়েছে মাথাপিছু আয়। নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ থেকে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে ধাবমান বাংলাদেশ। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৮ শতাংশ অতিক্রম করা। সেটা অতিক্রম করতে হলে ইউএনডিপি উল্লিখিত ৬৬ শতাংশ কর্মক্ষম জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। অদক্ষ জনশক্তিকে রূপান্তরিত করতে হবে দক্ষ জনশক্তিতে। জোর দিতে হবে কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণের ওপর। বাড়াতে হবে শিক্ষার মান। জ্ঞান-বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের দিকে নজর দিতে হবে। সর্বোপরি কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য জোর দিতে হবে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের ওপর। বাড়াতে হবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী।