হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে রংপুরের জয়

23

স্পোর্টস ডেস্ক  :
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) তৃতীয় আসরের প্রথম ম্যাচে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে নির্ধারিত ২০ 2015_11_22_19_49_58_Gxq4JNVgAy7pzKDxpEeF2lSLbSCECT_originalওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে চিটাগং ভাইকিংস ১৮৭ রান সংগ্রহ করে। টানটান উত্তেজনা ছড়ানো ম্যাচে দুই উইকেট হাতে রেখে শেষ বলে জয় তুলে নেয় রংপুর রাইডার্স। ফলে, নিজেদের প্রথম ম্যাচেই জয় পেলো সাকিব-সৌম্য-স্যামি-মিসবাহদের রংপুর।
এর আগে দলের হয়ে দারুণ একটি অর্ধশতক হাঁকান দলপতি তামিম ইকবাল। এছাড়া ব্যাট হাতে উজ্জ্বল ছিলেন এনামুল হক বিজয়। ক্রিজে ঝড় তুলেছিলেন শ্রীলঙ্কার জীবন মেন্ডিস। অসাধারণ বোলিং করেন রংপুরের সাকলাইন সজীব, আবু জায়েদ। ব্যাটিংয়ে নেমে ঝড় তুলেছিলেন পাকিস্তানের তারকা মিসবাহ এবং লঙ্কান তারকা থিসারা পেরেরা। চিটাগংয়ের হয়ে বোলিংয়ে দারুণ পারফর্ম করেন পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমির।
গতকাল রবিবার (২২ নভেম্বর) দুপুর দুইটায় মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী ম্যাচে দেশি-বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে মাঠে নামে সাকিব আল হাসানের রংপুর রাইডার্স এবং তামিম ইকবালের চিটাগং ভাইকিংস। টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন চিটাগং অধিনায়ক তামিম।
দিনের প্রথম ম্যাচে চিটাগংয়ের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন তামিম ইকবাল এবং দিলশান। রংপুরের হয়ে বোলিং শুরু করেন সাকিব আল হাসান।
দলীয় ৫২ রানের মাথায় আবু জায়েদের বলে আরাফাত সানির তালুবন্দি হয়ে আউট হন শ্রীলঙ্কান ওপেনার দিলশান। বিদায় নেওয়ার আগে ১৬ বলে দুটি চার আর তিনটি ছক্কায় তিনি ২৯ রান করেন।
লঙ্কান তারকা দিলশান বিদায় নিলেও উইকেটে থেকে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান তামিম ইকবাল। ২৯ বলে ৬টি চার আর একটি ছক্কায় তিনি অর্ধশতক পূরণ করেন। তবে, ইনিংস লম্বা করতে পারেননি তামিম। ৩২ বলে ৫১ রান করে সাকলাইন সজীবের করা ১৩তম ওভারে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে মিসবাহর হাতে ধরা পড়েন ভাইকিংস দলপতি। একই ওভারে সজীব ফিরিয়ে দেন ৩৬ রান করা এনামুল হক বিজয়কে। ৩০ বলে ৫টি চারের সাহায্যে বিজয় তার ইনিংসটি সাজিয়ে স্যামির হাতে ধরা পড়েন।
এক ওভার পর আবারো আক্রমণে এসে সজীব বিদায় করেন জিয়াউর রহমানকে। ব্যক্তিগত ২ রান করে সজীবের তৃতীয় শিকারে দলীয় ১২২ রানের মাথায় জিয়া আউট হন। ১৬তম ওভারে আবু জায়েদ নিজের দ্বিতীয় ও দলের হয়ে পঞ্চম উইকেট তুলে নেন। ভাইকিংসের দলীয় ১৩৪ রানের মাথায় ফিরিয়ে দেন এলটন চিগুম্বুরাকে। সাকিবের তালুবন্দি হয়ে বিদায় নেওয়ার আগে জিম্বাবুইয়ান দলপতি করেন এক রান।
তবে, ব্যাটিং ক্রিজের অপর প্রান্ত ধরে রেখে ব্যাটে ঝড় তুলেছিলেন লঙ্কান জীবন মেন্ডিস। মাত্র ১৮ বলের ইনিংসে তিনি তিনটি করে চার ও ছক্কা হাঁকান। শেষ ওভারে রান আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৩৯ রান। একই ওভারে রান আউট হন পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমিন। তবে, আসিফ আহমেদ ১৫ বলে ১৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন।
রংপুরের হয়ে ৪ ওভারে ২৬ রান খরচায় তিনটি উইকেট তুলে নেন সাকলাইন সজীব। আবু জায়েদ ৪ ওভারে ২৬ রান খরচ করে দখল করেন আরও দুটি উইকেট। সাকিব ২ ওভারে ২২ রান দিয়ে ছিলেন উইকেট শূন্য। আরাফাত সানি ৩ ওভার বল করে ৩৮ রান দিয়ে ছিলেন উইকেট শূন্য।
চিটাগং ভাইকিংসের দেয়া ১৮৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ২৩ রানের মাথায় চারটি উইকেট হারায় রংপুর রাইডার্স। দুই ওপেনার লেন্ডল সিমন্স (১) ও সৌম্য সরকারকে (২০) প্যাভিলিয়নে ফেরান পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির। এরপরই মোহাম্মদ মিথুনকে (০) এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তাসকিন আহমেদ। এক রান যোগ হতেই শফিউল ইসলামের বলে উইকেটরক্ষক আনামুল হকের গ্লাভসবন্দি হন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান (১)।
এরপর দলের হাল ধরেন মিসবাহ এবং আল আমিন। এ দু’জন স্কোরবোর্ডে আরও ৬৪ রান যোগ করেন। দলীয় ১৩তম ওভারে চিগুম্বুরা বোল্ড করেন আল আমিনকে। আউট হওয়ার আগে এ ব্যাটসম্যান ২৮ বল মোকাবেলা করে তিনটি চার আর একটি ছয়ে ৩৮ রানের ইনিংস সাজান।
ব্যাটিংয়ে নেমে বিপাকে পড়লেও পাকিস্তানি তারকা ব্যাটসম্যান মিসবাহ উল হক রংপুরকে টেনে নিয়ে চলেন। একপ্রান্তে ব্যাটে ঝড় তুলে ৩৯ বলে তিনটি চার আর চারটি ছক্কায় মিসবাহ করেন ৬১ রান। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন লঙ্কান তারকা থিসারা পেরেরা। মাত্র ১৭ বলে ৪টি চার আর তিনটি ছক্কা হাঁকিয়ে তিনি করেন ৪৩ রান। এ জুটি থেকে আসে ৮০ রান। ১৯তম ওভারে দু’জনকেই ফিরিয়ে দেন মোহাম্মদ আমির।
মিসবাহ-পেরেরার বিদায়ে ব্যাটিংয়ের হাল ধরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তারকা ড্যারেন স্যামি ৭ বলে ১৮ রান করে এক বল বাকি থাকতে রান আউট হন। তবে, জয় বঞ্চিত হয়নি রংপুর। শেষ বলে এক রান নিয়ে পূর্ণ দুই পয়েন্ট অর্জন করে সাকিবের দল।
চিটাগংয়ের হয়ে ৪ ওভারে একটি মেডেনসহ ৩০ রান খরচায় ৪টি উইকেট তুলে নেন মোহাম্মদ আমির। তাসকিন, শফিউল আর চিগুম্বুরা নেন একটি করে উইকেট।
রংপুর রাইডার্স স্কোয়াড: সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), সৌম্য সরকার, আরাফাত সানি, মোহাম্মদ মিথুন, সাকলাইন সজীব, আবু জায়েদ চৌধুরি, ড্যারেন স্যামি, লিন্ডল সিমন্স, থিসারা পেরেরা, মিসবাহ উল হক ও মোহাম্মদ আল আমিন।
চিটাগং ভাইকিংস স্কোয়াড: তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), দিলশান, তাসকিন আহমেদ, জিয়াউর রহমান, এনামুল হক বিজয়, শফিউল ইসলাম, এনামুল হক (জুনি:), আসিফ আহমেদ রাতুল, মোহম্মদ আমির, জীবন মেন্ডিস ও এলটন চিগুম্বুরা।
স্কোর: চিটাগং: ১৮৭/৭ (২০ ওভার)
রংপুর: ১৮৮/৮ (২০ ওভার)
ফল: রংপুর রাইডার্স জয়ী দুই উইকেটে।