আকাশে মেঘ দেখলেই কৃষকের বুক কেঁপে উঠে ॥ সুনামগঞ্জে অসম্পূর্ণ ফসল রক্ষা বাঁধ, অরক্ষিত ৪ হাজার কোটি টাকার ফসল

51

DSC_0064আতিকুর রহমান মাহমুদ, ছাতক থেকে :
আকাশে মেঘ দেখলেই সুনামগঞ্জের কৃষকের বুক কেঁপে উঠে। জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড ( পাউবো) দুর্নীতির কারণে ১১টি উপজেলার ৪২টি হাওরের ৪হাজার কোটি টাকার বোরো ফসল অরক্ষিত রয়েছে। হাওরে বোরো ফসল কাটা শুরু হলেও ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ এখনও শেষ হয়নি। বাঁধের কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে অজানা আতংক দেখা দিয়েছে। জেলার জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন এলাকার বাঁধ পরিদর্শন করে পাউবোর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পাউবোর দুর্নীতির কারণে অতীতেও অকাল বন্যায় হাজার হাজার কোটি টাকার পাকা বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হয়। জেলার প্রায় ২২ লক্ষ মানুষের জীবন- জীবিকার একমাত্র অবলম্বন বোরো ধান। অভিযোগ উঠেছে, পাউবোর অসাধু দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে এ বছর দু’দফা সময়সীমা বাড়িয়েও ফসল রক্ষা বাঁধ সম্পন্ন হয়নি। এতে লাভবান হচ্ছে অসাধু কর্তাব্যক্তি আর ক্ষতিগ্রস্তের সম্মুখীন হচ্ছেন হাজার হাজার কৃষক।
জানা যায়, ২৮ ফেব্র“য়ারী  হাওরের বাঁধ নির্মাণ কাজের সময়সীমা শেষ হয় অথচ দ’দফা ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়সীমা বাড়িয়েও হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি পাউবো। এ কারণে প্রায় ৪হাজার কোটি টাকার বোর ফসল বর্তমানে অরক্ষিত রয়ে গেছে। পাউবো হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ ৯০ভাগ সম্পন্ন হয়েছে দাবী করলেও জনপ্রতিনিধি ও কৃষকদের দাবী ৭৫ভাগ কাজও হয়নি এখন পর্যন্ত। পাহাড়ী ঢল ও অকাল বন্যার হাত থেকে হাওরের বোর ফসল রক্ষা করতে সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বাঁধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়। কিন্তু দুর্নীতির কারণে পাকা ধান পানিতে তলিয়ে যায়। জেলার ৪২টি হাওরের ১৪৮ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ পায় ২৫১টি প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি (পিআইসি)। এ কাজের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ২০ কোটি ১৪ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে পিআইসি কাজ করেছে ১১৫ কিলোমিটার বাঁধ। এজন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ১৫ কোটি টাকা এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ৩৩ কিলোমিটার বাঁধের কাজ পায়। তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫ কোটি ১ লক্ষ টাকা। পিআইসির সদস্যরা জানান, সময়মত বরাদ্দের টাকা পাওয়া যায়নি। প্রথম দফা কাজের ১০ভাগ টাকা এখনও পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় দফার ৪২ ভাগ টাকা পিআইসিকে পাউবো দিয়েছে। যার কারণে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ সময় মতো শেষ করা সম্ভব হয়নি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জনা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ করার আদেশ থাকলেও হাওরের পানি দেরিতে কমায় এবং সংসদ সদস্যদের মনোনীত প্রতিনিধিদের নামের তালিকা সময় মতে না দেওয়ার কারণে সময় মতো কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলার ১১টি উপজেলায় ২ লক্ষ ১৪ হাজার হেক্টর জমি বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে ২ লক্ষ ১৮হাজার ৫৬৪হেক্টর। আবাদকৃত জমিতে প্রায় ২৫ লক্ষ ৫০হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপন্ন হবে। যার বাজার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৪হাজার কোটি টাকা।
জেলার দেখার হাওর পারের রনশি গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দিন ও সাঈদুর রহমাান জানায়, দেখার হাওরের হাওর রক্ষা বাঁধগুলো নির্মাণ করা হয়েছে দুর্বল ও নি¤œমানের। সামান্য বৃষ্টিপাত হলে বাঁধ ধসে ভেঙ্গে যাবে। এতে দেখার হাওর তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ছাতকের কামরাঙ্গী গ্রামের কৃষক ঝিনুক মিয়া বলেন, আকাশে মেঘ দেখলেই বুক কেঁপে উঠে। বৃষ্টিপাত হলে নি¤œমানের দুর্বল হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে  পাকা ধান তলিয়ে যাবে এই ভয়ে বুক কেঁপে উঠে বলে তিনি জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাঈদ আহমদ জানান, হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ ৯০ভাগের অধিক হয়েছে। যতটুকু অসমাপ্ত কাজ বাকি রয়েছে তা দ্রুত গতিতে চলছে।