‘আমাকে হত্যার জন্য গুলি চালানো হয়েছে’ ॥ গাড়ী বহরে আবারো ইটপাটকেল নিক্ষেপ

26

1426604902_63038কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দাবি করেছেন, তাকে হত্যার জন্য রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গাড়িবহরে হামলা চালিয়ে গুলি করা হয়েছে।  সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে জনসমর্থন দেখে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ায় এ হামলা চালানো হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) শান্তি নগরে দলের মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে কনকর্ড টাওয়ারের সামনে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত পথসভায় তিনি এ দাবি করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আমাকে হত্যার উদ্দেশে হামলা চালিয়ে গুলি করা হয়েছিল। এ সরকার আসলে উন্মাদ হয়ে গেছে। তারা ভেবেছিল, আমরা নির্বাচনে আসবো না। কিন্তু আমরা নির্বাচনে এসেছি এবং বিপুল জনসমর্থন পাচ্ছি বলে তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাই তারা আমার ওপর হামলা চালিয়েছে। আমাকে হত্যা করতে গুলি করেছে।
মির্জা আব্বাসের পক্ষে ভোট চেয়ে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আব্বাস যখন মেয়র ছিল, তখন অনেক কাজ করেছে। যখন মন্ত্রী ছিল, তখনও অনেক কাজ করেছে। এখন ঢাকায় গ্যাস নেই, বিদ্যুৎ নেই, নারী নির্যাতন হচ্ছে, টিএসসিতে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটছে; যদি সচেতন না হোন, তবে আপনাদের ছেলে মেয়েদের নিয়ে নিরাপদে এখানে থাকতে পারবেন না। আপনারা যদি সন্ত্রাসমুক্ত ঢাকা চান, মশামুক্ত, আবর্জনামুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত ঢাকা চান, তবে মির্জা আব্বাসকে ভোট দিন। আব্বাসকে ভোট দিলে ঢাকার ব্যাপক উন্নয়ন হবে, চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসমুক্ত ঢাকা হবে। ঢাকা হবে বাসযোগ্য।
আশুলিয়ায় ব্যাংক ডাকাতি প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, অপানারা নিশ্চয় টেলিভিশনে দেখেছেন ব্যাংক ডাকাতি করে ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এরা কারা? এরা আওয়ামী লীগের লোক। আপনারা যদি নিরাপদে থাকতে চান, তবে আব্বাসকে ভোট দিন। ছেলে মেয়েকে নিরাপদে রাখুন, ঢাকাকে নিরাপদ রাখতে আব্বাসকে ভোট দিন। আব্বাস নির্বাচিত হলে ঢাকায় শান্তি ফিরে আসবে।
অন্যায়-অবিচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনগণকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, যতদিন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবো না, ততদিন আমাদের নিপীড়নের স্বীকার হতে হবে। আমি আপনাদের কাছে ভোট চাইতে এসেছি। এর আগেও এসেছিলাম, আপনারা ভোট দিয়েছেন। এবারও দেবেন।
তিনি বলেন, মির্জা আব্বাসের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে প্রচারণায় বের হতে দেওয়া হয় না। তাই আমি আব্বাসের পক্ষে মগ মার্কায় ভোট চাইছি। আপনারা আব্বাসকে ভোট দিয়ে ঢাকাকে শান্তির নগরীতে পরিণত করুন। যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিলে দেশে শান্তি ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠা হবে। এখন দেশে গণতন্ত্র নির্বাসিত, আব্বাস নির্বাচিত হলে সেটিও ফিরে আসবে।
বক্তব্যের শেষে ঢাকাবাসীকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া। এরপর তিনি কনকর্ড টাওয়ারের সামনে থেকে নয়াপল্টনের উদ্দেশে রওয়ানা দেন।
রাত পৌনে ৮টার দিকে খালেদা নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অদূরে পলওয়েল সুপার মার্কেট এলাকায় আব্বাসের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে সেখানে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত পথসভায় বক্তৃতা করেন
এখানে সাত মিনিটের বক্তৃতায় খালেদা জিয়া বলেন, আমি সন্তান হারিয়েছি। আব্বাস আমার সন্তানের মতো, তাকে ভোট দিয়ে আমার সন্তান হারানোর কষ্ট ভোলার সুযোগ দিন।
তিনি নেতাকর্মী ও জনতার উদ্দেশে বলেন, দেশে অবৈধদের শাসন চলছে। এই সরকারের সময়ে আপনাদের মা-বোনরা নিরাপদ নয়। ঢাকায় নিরাপদ থাকতে আব্বাসকে ভোট দিন।
এছাড়া, ঢাকা শহরের নানা সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আবারও দল সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চান বিএনপি চেয়ারপারসন।
মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) টানা চতুর্থ দিনের মতো নির্বাচনী প্রচারণায় বের হলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিকেল সোয়া ৫টার পর তিনি তার গুলশানের বাসা থেকে বের হন। তার আগেই খালেদা জিয়ার জন্য পুলিশ প্রটোকলের গাড়িটি এসে বাসার অনতিদূরে অবস্থান নেয়।
আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে গত শনিবার (১৮ এপ্রিল) প্রথমবারের মতো নির্বাচনী প্রচারণায় নামেন খালেদা জিয়া। পরদিন রোববারও (১৯ এপ্রিল) নির্বাচনী প্রচারণা চালান তিনি। সোমবার (২০ এপ্রিল) টানা তৃতীয় দিনের মতো প্রচারণায় বেরিয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে তার গাড়ি বহর হামলার শিকার হয়।
মঙ্গলবার টানা চতুর্থদিনের মতো খালেদা জিয়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে দল সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মির্জা আব্বাসের পক্ষে ভোট চাইছেন।
বিকেলে খালেদার গাড়ি বহর বের হয়ে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে দিয়ে নতুন বাজারের দিকে এগিয়ে যায়। বহরে ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দল সেক্রেটারি শিরিন সুলতানা, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ।
নতুন বাজার থেকে তার গাড়ি বহর বাড্ডা-রামপুরা হয়ে মালিবাগ চৌধুরী পাড়ার কাছে হাজিপাড়ায় পৌঁছালে খালেদার গাড়িতে গ্যাস ভরা হয়।
এরপর সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বিএনপি প্রধানের গাড়িবহর উত্তর শাহজাহানপুর এলাকায় পৌঁছায়। ৬টা ২০ মিনিটে খালেদা জিয়া উত্তর শাহজাহানপুরে নেমে দোকানে দোকানে গিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের মগ প্রতীকের পক্ষে ভোট চান। ১০ মিনিট সেখানে গণসংযোগ ও ভোট চেয়ে আবার গাড়িতে চেপে বসেন বিএনপি প্রধান।
সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর শান্তি নগর এলাকায় পৌঁছায়। সেখানে প্রচারণা শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন নয়াপল্টন এলাকায় যান। এখানকার প্রচারণা শেষে বিএনপি প্রধানের গাড়িবহর ফকিরাপুল মোড় দিয়ে পার হতে চাইলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনের ইলিশ প্রতীকের সমর্থকদের বাধার মুখে পড়ে। এসময় খালেদা বহরে ঢিল ছোঁড়া হয় এবং লাঠি দিয়ে আঘাতও করা হয়। তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রটোকলে থাকা পুলিশ ও ওই এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশ মিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে খালেদার গাড়িবহরকে সামনে এগোনোর পথ করে দেয়।
বহরে খালেদা জিয়া সোমবারের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সবগুলো গাড়িই রেখেছেন। এই গাড়িগুলো কাছে থেকে ধরে দেখছেন নেতাকর্মী ও উৎসুক জনতা।