বাবা-মাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ॥ নুসরাত হত্যাকারী কেউই রেহাই পাবে না

54
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফেনীর সোনাগাজীতে নিহত মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাৎ করতে আসলে প্রধানমন্ত্রী তাদের সান্ত্বনা দেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকারীরা রেহাই পাবে না। নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাকারীদের কেউই আইনের হাত থেকে রেহাই পাবে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিবাদ করে নুসরাত এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অগ্নি সন্ত্রাসের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণকারী নুসরাতের বাবা একেএম মুসা এবং মা শিরীনা আক্তার তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাত করতে এলে প্রধানমন্ত্রী তাঁর এই দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী নুসরাতের এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান। প্রেস সচিব আরও জানান, সাক্ষাতকালে প্রধানমন্ত্রী নুসরাতের পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা আশ্বাস দেন। এ সময় নুসরাতের বাবা-মা এই দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সাক্ষাতকালে বাবা-মা ছাড়াও নুসরাতের দুই ভাই এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাতের সময় নিহত নুসরাত জাহান রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানকে শর্তসাপেক্ষে চাকরি দিয়েছে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক। গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন হলেই নোমান ব্যাংকটিতে ‘ট্রেইনি এ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার’ হিসেবে যোগ দেবেন। নোমানের হাতে এনআরবি ব্যাংকের নিয়োগপত্র তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উল্লেখ্য, গত ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে নুসরাত। গত ৬ এপ্রিল দুষ্কৃতিকারীরা তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিলে মারাত্মক দগ্ধ হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী এই ঘটনার পর নুসরাতের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রতি নির্দেশ দেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ সার্বিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। যে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে তা অব্যাহত থাকবে। বিশ্ব দরবারে বাঙালী জাতি সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলবে। বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। সমগ্র দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধভাবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
রবিবার গণভবনে আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের সকল কর্মের মধ্য দিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণ করে যাব। বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন। বাংলা নববর্ষ সবার জীবনকে সুন্দর এবং উদ্ভাসিত করে তুলবে এবং বাংলাদেশে তার সরকারের নেতৃত্বে চলমান উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে বলেও প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বাংলা নতুন বছর-১৪২৬‘র নতুন সূর্য সবার জীবনকে সুন্দর করুক, উদ্ভাসিত করুক, সফল করুক সেটাই আমি কামনা করি। তিনি আরও বলেন, পুরাতন বছরকে পেছনে ফেলে আমরা নতুন বছরে পদার্পণ করছি। সমগ্র বাঙালী জাতিকে এই নববর্ষে আমি শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। শুভ নববর্ষ!
নতুন বছর বাঙালী জাতির জন্য নতুন বার্তা বয়ে আনুক, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এমন সময় জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করব এবং আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব যখন বাংলাদেশে হতদরিদ্র বলে কিছু থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী এ সময় গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করায় দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ সমগ্র দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ এবং আমাদের সহযোগী সংগঠনের সকল নেতাকর্মীকে আমি বিশেষভাবে শুভেচ্ছা জানাই, শুভেচ্ছা জানাই গত নির্বাচনে যারা আওয়ামী লীগকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে জাতির সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন তাদেরকে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। আজকে আমাদের লক্ষ্য জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। আমরা তা করতে পারব। তিনি এ সময় পুনরায় দেশে এবং প্রবাসে অবস্থানকারী সকল বাঙালীকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। বক্তব্যের শুরুতেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, চার জাতীয় নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং সম্ভ্রমহারা দুই লাখ মা-বোনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের উপনেতা এবং দলের জ্যেষ্ঠ সভাপতিম-লীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, এইচটি ইমাম, সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম এবং এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন।
প্রধানমন্ত্রীর কন্যা এবং বিশ্ব অটিজম আন্দোলনের অগ্রপথিক সায়মা ওয়াজেদ হোসেন এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থল গণভবনের ব্যাংকোয়েট হলে প্রবেশ করলে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের শিল্পীবৃন্দ বিখ্যাত রবীন্দ্র সঙ্গীত এবং বর্ষবরণের গান ‘এসো হে বৈশাখ’, ‘আনন্দালোকে মঙ্গলালোকে’, ‘আলো আমার আলো’সহ কয়েকটি গান পরিবেশন করেন। আনন্দালোকে-মঙ্গলালোকে গানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকেও কণ্ঠ মেলাতে দেখা যায়। পরে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ এবং সভাপতিম-লীর সদস্যসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুলের তোড়া দিয়ে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। অনুষ্ঠানে অতিথিদের বাঙালি খাবার যেমন মোয়া, মুড়কি, মুরলি, কদমা এবং জিলেপি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।