৭ গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার উচ্ছেদ আতংকে ॥ কুলাউড়ায় বাগানের নামে জনবসতি লিজ নেওয়ার চেষ্টা

69

শাহ আলম শামীম, কুলাউড়া থেকে :
কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে রাজানগর চা বাগান প্রায় ৫শ একর ভূমি লীজের জন্য আবেদন করে। আবেদনকৃত এই জমির মধ্যে ৭টি গ্রামের সহস্রাধিক পরিবারের কমপক্ষে ৭ হাজার লোকের বসবাস। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এমনকি বিজিবি ক্যাম্প অবস্থিত। বাগানের লীজ আবেদনের বিষয়টি জানার পর এই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে উচ্ছেদ আতংক বিরাজ করছে। এলাকাবাসী ইতোমধ্যে উক্ত জায়গাটি বাগানের নামে লীজ না দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের নামে লীজ দেয়ার আবেদন জানিয়েছেন।
কর্মধা ইউনিয়নের মেম্বার আব্দুল কাদির, মুক্তিযোদ্ধা মো. রহমত আলী, মো. আব্দুল মুসলিম, মো. আব্দুল খালিক জানান, রাজানগর চা বাগান তাদের অজান্তে ২০১৩ সালের ২ মে বাগানের নামে ৪৮৯ দশমিক ৪৮ একর ভূমি বন্দোবস্তের জন্য আবেদন করে। যে জমির জন্য রাজানগর চা বাগান আবেদন করেছে সেই জায়গাটি কর্মধা ইউনিয়নের টাট্রিউলি, পূর্বটাট্রিউলি, হেবাইরথল, ধামুলী, গণকিয়া ও শিকড়িয়া এই ৭টি গ্রামের অবস্থান। এই ৭টি গ্রামের সহ¯্রাধিক পরিবারে ৭হাজারেরও বেশি মানুষ বসবাস করেন। এরমধ্যে ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি উচ্চ বিদ্যালয়, ৬টি জামে মসজিদ, ৪টি মাদ্রাসা, ১০টি ব্র্যাক স্কুল, ৬টি কবরস্থান, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি মিশন হাসপাতাল, মুরইছড়া বিজিবি ক্যাম্প,  ৪টি বাজার, ১৫টি পানপুঞ্জির কয়েক হাজার খাসিয়া গারো এবং তাদের ১৫টি স্কুল ও গীর্জা রয়েছে। এই ভূমি পৃথিমপাশা স্টেইট হতে সাবরেজিস্টার ও আনরেজিস্ট্রারী দলিল, পাট্রা কবুলত ও দেওয়ানী মামলায় রায় প্রাপ্ত হয়ে মালিকানা পেয়ে স্থানীয় লোকজন ভোগ দখল করে আসছেন। সর্বশেষ ২০০৬ সালের স্যাটেলমেন্ট জরিপে ভূমি মালিকদের নামে মাঠপর্চা দিয়েছেন এবং ২০০৮ সালে তসদিক (মাঠপর্চা এ্যাটাস্ট) করে দিয়েছেন। এরপর থেকে ভূমি মালিকরা নিয়মিত খাজনাও প্রদান করে আসছেন। সম্প্রতি মুরইছড়া মৌজায় ৩০ ধারা কার্যক্রম শুরু হলে ভূমি মালিকদের নামে নোটিশ ইস্যু করা হয়। ভূমি মালিকরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তাদের বসত ভিটায় ৩০ ধারায় আপত্তি (মামলা) দিয়েছে রাজানগর চা বাগান পক্ষ। এলাকাবাসী তাদের বসবাসরত ভূমি থেকে উচ্ছেদ না করার জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন। এলাকাবাসীর দাবি যদি লীজ দিতে হয়, তাহলে বসবাসরত মানুষকেই যেন লীজ দেয়া হয়। এলাকাবাসী তাদের লিখিত আবেদনের অনুলিপি দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওসহ বিভিন্ন দফতরে।
রাজানগর চা বাগান মালিক পক্ষে নবাব আলী সাজ্জাদ খান জানান, বাগান জায়গাটি লীজ নিতে আবেদন করেছে। এই জায়গাটি টি বোর্ডের। তবে কিভাবে এই জায়গায় জনবসতি গড়ে উঠেছে তা জানা নেই। তারা যদি বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারে তবে তারা থাকবে।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আসম কামরুল ইসলাম জানান, আমি এলাকাবাসীর একটি আবেদন পেয়েছি। তবে চা বাগানের লোকজন বিভিন্নস্থানে ভূমি লীজ নিতে উক্তস্থানে লোকবসতি নেই দেখিয়ে গোপন প্রতিবেদন দেয়া হয়। তবে লীজে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, যে স্থানে বসতি রয়েছে তা লীজের আওতামুক্ত থাকবে।