এইচএসসি ও সমমানের ১২ লাখ পরীক্ষার্থী উদ্বিগ্ন

27

ssc1কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিএনপি জোটের টানা অবরোধের পাশাপাশি হরতালে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রায় ২৭ লাখ শিক্ষার্থী। ইতোমধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দিচ্ছে প্রায় পৌনে ১৫ লাখ পরীক্ষার্থী। আর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সময়সূচি তালগোল পাকিয়ে যাওয়ায় উৎকণ্ঠিত আসন্ন এইচএসসি ও সমমানের প্রায় ১২ লাখ পরীক্ষার্থী। কেননা ২ ফেব্র“য়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষার একটিও সময়সূচি অনুযায়ী হতে পারেনি। এখনও আরও দশ দিনের লিখিত পরীক্ষাই বাকি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ইতোমধ্যে পিছিয়ে যাওয়া তিন দিনের পরীক্ষার পরিবর্তিত সময়সূচি জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট কাল রোববার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে। এর মধ্যে রবিবার ও মঙ্গলবার দু’দিনই পরীক্ষা আছে। বিগত সপ্তাহের অভিজ্ঞতায় হরতালের সময় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সব মিলিয়ে বাকি পরীক্ষাগুলোও সময়সূচি অনুযায়ী হবে না বলে মনে করছে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। চরম উৎকণ্ঠা নিয়ে তাই সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র-শনিবারের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের।
আর আগামী ১ এপ্রিল থেকে এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও গতকাল এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন ঢাকায় গভ. ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, যেভাবেই হোক আগামী ১ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর আগেই এসএসসি শেষ করা হবে। আর পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ করা হবে। কারণ এখন শুধু শুক্র-শনিবার পরীক্ষা হচ্ছে। শিক্ষকরা খাতা মূল্যায়নের জন্য পাঁচ দিন সময় পাচ্ছেন।
এইচএসসি পরীক্ষার্থী সামিউল হাসান খানের বাবা মো. শাহজাহান খান বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষা যথাসময়ে হচ্ছে না। এখন এইচএসসি পরীক্ষা ১ এপ্রিল থেকে শুরু হবে কি না তা বুঝতে পারছি না। একদিকে পরীক্ষা নিয়ে টেনশনে আছি। আবার হরতাল-অবরোধে ছেলের নিরাপত্তা নিয়ে আরেক টেনশন।’ তিনি জানান, ঘোড়াশালের বাসা থেকে অটোরিক্সা করে ছেলের কলেজে যেতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লাগে। এদিকে কলেজে মডেল টেস্ট শুরু হয়েছে। তাই নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে গত ২ ফেব্র“য়ারি থেকে ছেলেকে তিন মাসের জন্য কলেজের হোস্টেলে দিয়ে এসেছেন। এজন্য বাড়তি ১০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে তার। তিনি বলেন, ‘এমন খারাপ পরিস্থিতিতে বাড়তি খরচ করা আমাদের জন্য কষ্টকর। কিন্তু হরতাল-অবরোধে ছেলের রাস্তায় বের হওয়ার ঝুঁকি থাকছে না বলে চিন্তা কিছুটা কমেছে। কলেজ থেকে বলেছে পরীক্ষা শুরু হলে প্রতিষ্ঠানের গাড়িতে করেই পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে নিয়ে যাবে।’
এসএসসি পরীক্ষার সময়সূচি বিশ্লেষণ করে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, অবরোধ থাকলেও পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী গত ২ ফেব্র“য়ারি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু বিএনপি জোট পরীক্ষা শুরুর আগের দিন থেকে হরতাল ডাকায় পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এ পর্যন্ত এসএসসি বা সমমানের প্রতিটি পরীক্ষাই পেছাতে হয়েছে। এর মধ্যেই ১০ দিনের ১৭৩টি বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার করে গতকালেরটিসহ পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়েছে ছয় দিন। আর বাকি পরীক্ষাগুলোও পরিবর্তিত তারিখ অনুযায়ী আগামী দুই সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার নেওয়ার জন্য নির্ধারণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ২২ ফেব্র“য়ারির পরীক্ষা ২৮ ফেব্র“য়ারি, ২৪ ফেব্র“য়ারির পরীক্ষা ৬ মার্চ এবং ২৬ ফেব্র“য়ারির পরীক্ষা ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ ছাড়া ১২ ফেব্র“য়ারির স্থগিত পরীক্ষাগুলোর পরিবর্তিত তারিখ পরবর্তীতে জানাবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে। এভাবে শুক্র ও শনিবার করে পরীক্ষা নিলে এসএসসি ও সমমান শেষ করতেই মার্চ মাস পুরো লেগে যাবে।
গত ১২ ফেব্র“য়ারিরটি ছাড়াই সময়সূচি অনুযায়ী আরও পাঁচ দিন পরীক্ষা রয়েছে। এ পরীক্ষাগুলোও যদি শুক্র ও শনিবার নিতে হয় তাহলে ছয় দিনের পরীক্ষার জন্য আরও তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। অর্থাৎ ২৮ মার্চ এসএসসি ও সমমানের লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে। কিন্তু সময়সূচি অনুযায়ী লিখিত পরীক্ষা ১০ মার্চ শেষ হওয়ার কথা ছিল। আর ১১ থেকে ১৬ মার্চের মধ্যে ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়ার কথা রয়েছে। পরীক্ষার দিনগুলোতে হরতাল থাকলে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শেষ হতে আরও প্রায় ২৫ দিন সময় বেশি লাগবে। এতে পরীক্ষার ফল প্রকাশেও বিলম্ব হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবুবক্কর ছিদ্দিক বলেন, ‘আমরা আশা করছি এসএসসির বাকি পরীক্ষাগুলো যথাসময়ে হবে। তারপরও পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি শুক্র-শনিবার করে নিলেও মার্চের মধ্যেই এ পরীক্ষা শেষ করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া আশা করছি, এইচএসসি পরীক্ষা ঘোষণা অনুযায়ী ১ এপ্রিল থেকেই শুরু করা সম্ভব হবে। এ পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সব বোর্ডের প্রস্তুতি রয়েছে। পরীক্ষা নেওয়া, ফল প্রকাশ, কলেজে ভর্তি সব কিছুই যেন নির্ধারিত সময়ে হয় সেজন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।’ তিনি জানান, এসএসসি পরীক্ষার ফল আগের নির্ধারিত ৬০ দিনের মধ্যে দেওয়ার জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শিগগিরই সব বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।