জগন্নাথপুরে পানির অভাবে ৬টি হাওর অনাবাদি, কৃষকদের মাথায় হাত

64

potoমোঃ শাহজাহান মিয়া, জগন্নাথপুর থেকে :
জগন্নাথপুরে পানি সেচের অভাবে দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে ৬টি হাওরের প্রায়  ২ হাজার হেক্টর জমি আবাদ হচ্ছে না। জমিগুলো অনাবাদি থাকায় কৃষকদের মাথায় হাত উঠেছে। বিভিন্ন সেতু, কালভার্ট, স্লুইচগেইট, বেড়িবাঁধ, রাস্তা নির্মাণ ও বাঁধ ভাঙনের কারণে দিনেদিনে হাওরগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি সংকটের জন্য জমি আবাদ করা যাচ্ছে না। প্রতি বছরের বর্ষা মৌসুমে এসব সেতুপথ ও ভাঙন দিয়ে নদীর পানি হাওরে প্রবেশ করে। এ সময় পানির সাথে পলিমাটি গিয়ে ক্রমান্বয়ে হাওরগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া পাহাড়ি ঢলের সাথে নেমে আসা পলিমাটিতে ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে পানির ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে নদীগুলো। ফলে অকাল বন্যার কবলে পড়ে হাওর রক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকে পড়ে। এসব ভাঙন দিয়ে হাওরে পানি প্রবেশের কারণেও হাওরগুলো ভরাট হচ্ছে। নদী ও খাল-বিল ভরাট হয়ে যাওয়ায় জমি আবাদ মৌসুমে পানি থাকে না। শুধু পানি সংকটের কারণে বিশাল আয়তনের এসব জমি আবাদ করা যায় না। যার প্রভাব পড়ছে কৃষিখাতের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায়। সেই সাথে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।
জানা গেছে, গত প্রায় ২০ বছর ধরে জগন্নাথপুর উপজেলার মইয়ার হাওর, মমিনপুর হাওর, দলুয়ার হাওর, হবিবপুরের পূর্বের হাওর, বাদাউড়া হাওর ও নলুয়ার হাওরের একাংশের জমি পানির অভাবে আবাদ হচ্ছে না। জগন্নাথপুর-রাণীগঞ্জ সড়কে ঘনঘন সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের কারণে প্রতি বছর মইয়ার হাওরে পানি ঢুকে হাওরটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ইতোপূর্বে বিশাল আয়তনের এ হাওরটির প্রায় অর্ধেক জমি পলিমাটিতে ভরাট হয়ে গেছে। বাকি জমিগুলোও ক্রমান্বয়ে ভরাট হচ্ছে। বর্তমানে মইয়ার হাওরের অর্ধেক জমি আবাদ হলেও বাকি জমি পতিত থাকে। জগন্নাথপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের মমিনপুর নামক স্থানে একটি একটি সেতুপথ দিয়ে প্রতি বছর মমিনপুর হাওরে পানি প্রবেশের কারণে দিনেদিনে হাওরটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পানি সংকটের কারণে মমিনপুর হাওরের কোন জমি আবাদ করা হয় না। হবিবপুর গ্রামের দক্ষিণ ও সৈয়দপুর গ্রামের পশ্চিমে দলুয়ার হাওর, হবিবপুর গ্রামের পূর্ব দিকের হাওর ও পৌর এলাকার বাদাউড়া হাওরটি পানির অভাবে আবাদ হচ্ছে না। এছাড়া উপজেলার আরো বিভিন্ন হাওরের আংশিক জমি একই ভাবে আবাদ হচ্ছে না। জগন্নাথপুর উপজেলার সর্ববৃহৎ নলুয়ার হাওরটি হুমকির মুখে রয়েছে। প্রতি বছরের বর্ষা মৌসুমে অকাল বন্যার পানি বিশাল আয়তনের হাওরটির বেড়িবাঁধ ভেঙে বিভিন্ন স্থান দিয়ে হাওরে পানি প্রবেশ করে ক্রমান্বয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া জগন্নাথপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের পৌর এলাকায় অবস্থিত স্লুইচগেইট দিয়ে হাওরে পানি প্রবেশ করে থাকে। গত প্রায় ৪ বছর আগে নলুয়ার হাওরের রাণীগঞ্জ বাজারের পশ্চিম দিকে কাশেমের ভাঙা নামক স্থান দিয়ে কুশিয়ারা নদীর উত্তাল ঢেউ ও অকাল বন্যায় বেড়িবাঁধ ভেঙে বিশাল আয়তনের ভাঙন হয়। এ ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকে নলুয়ার হাওরের দক্ষিণাঞ্চলের জমি পলিমাটিতে ভরাট হয়ে যায়।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, বিগত প্রায় ২০ বছর আগেও এসব হাওরের জমিতে বোরো ও আমন ধান চাষাবাদ করা হতো। জমিতে উৎপাদিত হতো সোনার ফসল। এসব হাওরের অনেক জমি আজ পলিমাটিতে ভরাট হয়ে গেছে। পানি সংকটের কারণে জমিগুলো আবাদ করা যাচ্ছে না। হেমন্ত মৌসুমে উপজেলার কুশিয়ারা ও বাদাউড়া নদীতে পানি থাকলেও নলজুর নদী শুকিয়ে যায়। নলজুর নদী ও খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় জমি আবাদ মৌসুমে পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। বর্তমানে এসব হাওরের জমি চাষাবাদ করতে হলে হাওরে-হাওরে গভীর নলকূপ বসিয়ে পানি সেচের সহজ ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে এসব হাওরের পতিত জমি আবার আবাদ করা যাবে। এসব হাওরের মধ্যে নলুয়ার হাওর ব্যতীত বাকি হাওরগুলোর জমি উঁচু এলাকায় হওয়ায় অকাল বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। অনেকটা নিরাপদ ও সুবিধাজনক হওয়ায় পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা হলে এসব হাওরের জমিগুলো চাষাবাদ করতে কৃষকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হবে। তাই এসব সুবিধাজনক ফসলি জমি আবারো আবাদ করার জন্য পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করে দিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান ভুক্তভোগী কৃষকরা।
জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি অফিসার হাসানুদ্দৌলা জানান, জগন্নাথপুর উপজেলার অনাবাদি জমি আমি নিজে গিয়ে পরিদর্শন করবো এবং কিভাবে জমিগুলো আবার আবাদ করা যায় এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করবো। তবে জমিগুলো যখন ভরাট হয়ে গেছে, সেখানে ধানের পরিবর্তে সবজি আবাদ করলে ভাল ফলন উৎপাদন হতো। জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির জানান, কিভাবে পানি সংকট দূর করা যায় এ বিষয়ে বিএডিসিসহ আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনাক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।