অসাধু প্রক্রিয়া বন্ধ করুন

9

বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষ তো বটেই; মধ্যবিত্তের জীবনেও রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠে গেছে। আমনের ভরা মৌসুমেও চালের দাম কমছে না। আটার দামও বাড়তি। এক কেজি খোলা আটা ৬৫ টাকা এবং এক কেজির প্যাকেটের দাম ৭৫ টাকা।
ভোজ্য তেলের দাম নিয়ে ভোক্তাদের ক্ষোভের অন্ত নেই। ডাল, আদা, রসুন কিংবা মসলার দাম ক্রমেই বাড়ছে। সম্প্রতি ভোক্তাদের সবচেয়ে বড় ভোগান্তির কারণ হয়েছে চিনি। প্যাকেটজাত চিনি উধাও। খোলা চিনিও পাওয়া যায় কম। কোনো দোকানে পাওয়া গেলেও দাম দিতে হয় অনেক বেশি। সম্প্রতি চিনির দাম ১২ টাকা বাড়িয়ে ১০২ টাকা করা হয়েছে। সেই খোলা চিনি এখন কিনতে হয় ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। পাড়া-মহল্লার দোকানে আরো বেশি। মানুষ চলবে কিভাবে?
কয়েক মাস ধরেই বাজার এমন লাগামছাড়া। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে। তারপর ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনও ব্যবসায়ীদের সামনে দাম বাড়ানোর একটি বড় অজুহাত হয়ে দেখা দিয়েছিল। এটা ঠিক, যুদ্ধ শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু পণ্যের দাম বেড়ে গিয়েছিল। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে বেশির ভাগ খাদ্যপণ্যের দাম যুদ্ধের আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। কিন্তু দেশের বাজারে তার কোনো প্রভাব নেই। চাল তো আমাদের দেশেই হয়। ডলারের দাম বাড়ার প্রভাবও চালে খুব একটা পড়ে না। তার পরও চালের দাম কমে না কেন?
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই। টিসিবির পণ্য বিক্রি বাজারে কোনো প্রভাব ফেলছে বলেই মনে হয় না। বাজারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সরকারের কিছু সংস্থা রয়েছে। বাজারের সাম্প্রতিক সময়ের অবস্থা দেখে মনে হয়, সেসব সংস্থা শীতকাল আসার আগেই শীতঘুমে গেছে। তারই কিছুটা প্রতিফলন পাওয়া যায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামানের কথায়। তিনি বলেছেন, ‘সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে দোকানে চিনির দাম বেশি রাখা হচ্ছে, ভোক্তাদের কাছে এটার ডকুমেন্ট (ক্রয়ের রসিদ) থাকলে আমরা অভিযানে নামব। কারণ ব্যবসায়ীরা চিনির দাম বেশি রাখার বিষয়টি স্বীকার করেন না। ’ তিনি প্রকারান্তরে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার দায় চাপালেন ভোক্তাদের ওপর। যে ভোক্তা ১০ দোকান ঘুরে এক দোকানে চিনি পেলেন, দোকানদার রসিদ না দিলে তিনি কি সেই চিনি না কিনে ফিরে আসবেন? বাসায় থাকা ছয় মাসের শিশুটির কথা কি তিনি ভাববেন না? সেই শিশুটি কি দুধ না খেয়ে অভুক্ত থাকবে? এ ধরনের কথা বলে দায় এড়ানোর এমন অপচেষ্টা কেন? বাজার থেকে চিনি উধাও হয়ে গেলে দোকানিরা রসিদ ছাড়া বেশি দামে চিনি বিক্রি করলে সরকারের কি কিছুই করণীয় থাকবে না?
ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণের দায়িত্ব সরকারের। আন্তর্জাতিক বাজারে কোন পণ্যের দাম কতটা বাড়ছে এবং দেশে কতটা বাড়ছে তা দেখতে হবে। অসংগতি থাকলে তা নিরসন করতে হবে। এর মধ্যে কোনো অসাধু প্রক্রিয়া থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।