হরতালে গাড়ী ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ ॥ ১১ জামায়াত-শিবির কর্মী আটক

51

Untitled-1892স্টাফ রিপোর্টার :
দলের সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ডবহাল রাখার প্রতিবাদে তৃতীয় দফায় জামায়াতের টানা ২ দিনের হরতালের প্রথম দিন অতিবাহিত হয়েছে। হরতালকে সামনে রেখে পুলিশ গত মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ১১ জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীকে আটক করেছে। সকালের দিকে রাস্তাঘাটে থমথমে অবস্থা বিরাজ করলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে রিক্সা ও হালকা যানবাহন  চলাচল করতে থাকে। নগরীর বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী অফিস আদালত ও ব্যাংক খোলা থাকলেও লোক সমাগম কম ছিলো। সিলেটের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায়নি। তবে, ট্রেন চলাচল ছিল স্বাভাবিক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আইন-শৃংখলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে জামায়াত কর্মীদের মাঠে তেমন তৎপর দেখা যায়নি। সকালে নগরীর মিরাবাজারে পিকেটাররা গাড়ি ভাংচুরের চেষ্টা চালায়। সকাল ১০টার দিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের লামাকাজিতে তারা টায়ার পুড়িয়ে বিক্ষোভের চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং দুই পিকেটারকে আটক করে। দুপুর ১ টার দিকে লামাবাজার এলাকায় দুই মোটর সাইকেল দিয়ে ৫ যুবক হরতালের সমর্থনে মিছিল দিয়ে গাড়ি ভাংচুর করে। এ সময় বন্দরগামী দুটি সিএনজি অটোরিক্সা ভাংচুর করে পুলিশ আসার আগেই তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এর আগে বুধবার সকালে নগরীর মিরাবাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভাংচুর করেছে জামায়াত-শিবির। পরে পুলিশ আসার খবর পেয়ে পালিয়ে যায় তারা। এদিকে,  সকাল সোয়া ৭টা শহরতলীর ত্রিমুখী বাইপাস এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে সড়ক অবরোধ করে। পরে সোয়া ৮টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে হরতাল সমর্থকরা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে নেতাকর্মীরা পালিয়ে যান।s--05-11-14--5
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) রহমত উল্যাহ জানান, গত মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল বুধবার সকাল ১১টা পর্যন্ত ১১ জামায়াত-শিবির কর্মীকে আটক করা হয়েছে। যে কোন ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলায় নগরীতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলে জানান রহমত উল্যাহ।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নগরীর সাগরদীঘিরপার থেকে ১০টি পেট্রোল বোমা উদ্ধার করা হয় বলে জানান কোতোয়োলী থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই শাহ মোবাশ্বির আলী। এদিকে, জামায়াতের ডাকা হরতালের প্রতিবাদে নগরীতে হরতাল বিরোধী মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনসমূহ। গতকাল বুধবার বেলা ১টার দিকে কোর্ট পয়েন্টে জমায়েত হন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে আসেন কোর্ট পয়েন্টে। মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদের পরিচালনায় এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরারে সভাপতিত্বে  সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এডভোকেট রাজ উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নিজাম উদ্দিন, অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, আজাদুর রহমান আজাদ, এডভোকেট রণজিত সরকার, তপন মিত্র, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আলম খান মুক্তি, যুগ্ম আহ্বায়ক মুশফিক জায়গীরদার, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রাহাত তরফদার, সাধারণ সম্পাদক এমরুল হাসান, জেলা সভাপতি শাহরীয়ার আলম সামাদ, সাধারণ সম্পাদক রায়হান আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।
অপরদিকে, গতকাল বুধবার রাত পৌনে ৮টার দিকে সাগরদীঘিরপার রাস্তার মুখে সিলেট নগরীর সুবিদবাজার লন্ডনী রোড এলাকায় পেট্রোল ঢেলে একটি প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো ক-০৩-১০৭৯) পুড়িয়ে দিয়েছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। তারা ‘আল্লাহু আকবার’ শ্লোগান দিয়ে পেট্রোল ঢেলে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেটের সিনিয়র ষ্টেশন অফিসার জাবেদ হোসেন মোঃ তারেক জানান, খবর পেয়ে তারা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আগুনে গাড়িটির প্রায় ৫০ ভাগ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।s--05-11-14--6
গাড়ির মালিক মোঃ সোহেল আহমদ জানান, নগরীর হাউজিং এস্টেসে মিরাকল ‘হেলথ কেয়ার’ নামে তার একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখান থেকে প্রাইভেট কারযোগে তার বাসা আখালিয়া উপর পাড়া যাওয়ার পথে সাগরদীঘিরপার রাস্তার মুখে কতিপয় যুবক ‘আল্লাহ হু আকবার’ শ্লোগান দিয়ে গাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তারা তার গাড়ির ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি সাধিত হয়।
কোতয়ালী থানার ওসি(তদন্ত) মনিরুল ইসলাম জানান, গাড়িতে আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে।