মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
মৌলভীবাজারে একের এক খুনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। এতে করে জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গত ১০ দিনে (১০-১৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত জেলার কুলাউড়া, বড়লেখা ও কমলগঞ্জ উপজেলায় পাঁচটি হত্যাকাÐ ঘটে। এসব হত্যাকাÐের ঘটনায় সচেতন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের কুরমা চা-বাগানের ফাঁড়ি কুরঞ্জি এলাকার একটি পাহাড়ের ছড়া থেকে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দিপেন মুন্ডা (৩৫) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
দিপেন মুন্ডা চা বাগানের কুরঞ্জি এলাকার প্রসাদ মুন্ডার ছেলে। তার শরীরে আঘাতের চিহৃ ছিল। পুলিশ বলছে, তাকে কেউ হত্যা করে ফেলে গেছে।
এ ছাড়া একই দিন সন্ধ্যা ৭টায় একই উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের পাত্রখোলা চা বাগানের বাজার লাইনে এলাকায় পূর্ব শত্রæতার জেরে দেবরের হাতে ভাবি খুন হন। পরে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত মঞ্জুর মিয়াকে (৪২) আটক করে পুলিশ।
খুন হওয়া কারিমা বেগম (৪২) পাত্রখোলা চা বাগানের পূর্বপাড়া দুই নম্বার এলাকার মর্তুজ মিয়ার স্ত্রী।
এর আগে গত ১২ জানুয়ারি সকালে কমলগঞ্জে উপজেলার সদর ইউনিয়নের আলেপুর গ্রামে পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যার পর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন স্বামী আজাদ বক্স (৬০)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ বালিগাঁও গ্রামের নিজ বাড়িতে প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন আজাদ বক্স। এক পর্যায়ে আলেপুর গ্রামের মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। পরে তাকে বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৩০) বাবার বাড়িতে থাকতেন। সম্প্রতি তিনি পরকীয়ায় জিড়িয়ে পড়েছেন এমন সন্দেহে আজাদ বক্স ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।
এ ব্যাপারে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আজাদ বক্স মনোয়ারার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন।
কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামে শুক্রবার ১৭ জানুয়ারি রাতে খুন হন নাজমা বেগম (৪০)। নিহত নারী পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের ফখরু মিয়ার স্ত্রী। পাওনা টাকা নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
সর্বশেষ গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বড়লেখা উপজেলার বাড্ডা বাজারে ছুরিকাঘাতে নোমান আহমদ (৩৫) নামে যুবদল নেতার মৃত্যু হয়েছে। নিহত নোমান উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নের রাঙ্গিনগর গ্রামের লেচু মিয়ার ছেলে। তিনি সুজানগর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
সুজানগর ইউনিয়নের দশঘরি গ্রামের সবির মিয়ার ছেলে মারজান আহমদ ও কালাইউরা গ্রামের আব্দুস শহীদের ছেলে রেহান আহমদ নোমান আহমদকে খুন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে নোমান বাড্ডা বাজারে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় হঠাৎ দুই যুবক এসে নোমানের বুকে ছুরিকাঘাত করে দ্রæত পালিয়ে যান। পরে নোমানকে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সুজানগর ইউনিয়ন যুবদলের আহŸায়ক সাবুল আহমদ বলেন, সুজানগর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের নেতা নোমান আহমদকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে মারজান আহমদ গং। নোমান দীর্ঘদিন ধরে যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার এমন মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। এই ঘটনায় জড়িতদের দ্রæত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
বড়লেখা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জহিরুল ইসলাম বলেন, লেনদেন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে নোমানকে অভিযুক্তরা ছুরিকাঘাত করতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে জেনেছেন।
জানতে চাইলে মানবাধিকারকর্মী সাইদুল ইসলাম শাহেদ বলেন, খুন-খারাবির খবরে মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। অর্থনৈতিক ও সামাজিক নানা কারণে প্রভাব পড়ে। ফলে এসব খুনখারাবি ঘটনা ঘটে।
তিনি আরো বলেন, এসবের পেছনে মূলত ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের অভাব এবং সুশিক্ষা না থাকা দায়ী। পাশাপাশি সামাজিক ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক সঙ্কটও দায়ী।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. শামসুল হক বলেন, সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে এসব খুনের ঘটনা ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অন্য সময়ের চেয়ে এখন অনেক ভালো। এ পর্যন্ত যেসব খুন হয়েছে, তার মধ্যে অধিকাংশই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।