কাজির বাজার ডেস্ক
হামাস ও ইসরায়েল একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে আছে। কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারী প্রতিনিধিরা জানিয়েছে যে হামাস ও ইসরায়েলের সংশ্লিষ্টরা খুবই ফলপ্রসূ আলোচনা করেছে একটি চ‚ড়ান্ত যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর ব্যাপারে।
বুধবার কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধবিরতি চুক্তির শেষ পর্যায়ে আছি।’ তিনি বলেন, এর আগেও কয়েকবার যুদ্ধবিরতির আগ মুহুর্তে চুক্তি আলোচনা ভেস্তে গেছে। তাই যুদ্ধবিরতির চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার আগ পর্যন্ত দু’পক্ষকে সংযত আচরণ করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় সংশ্লিষ্ট মিশরের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘যুদ্ধবিরতির খসড়া ইতোমধ্যে চ‚ড়ান্ত এবং দু’পক্ষই এতে অনুমোদন দিয়েছে।’ প্রথম ধাপে ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতির কথা আলোচনা হয়েছে। হামাসের হাতে বন্দি ইসরায়েলের ৩৩ জিম্মিকে মুক্তি দিবে হামাস। এর বিপরীতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার কয়েকটি এলাকা থেকে সরে যাবে। ইসরায়েলের হাতে বন্দি ১০ হাজার ৩০০ ফিলিস্তিনি বন্দিদের থেকে অসুস্থ, শিশু, নারীদেরকে মুক্তি দেওয়া হবে। তবে কত সংখ্যক মুক্তি পাবে এর সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের পুনরায় একই অভিযোগে গ্রেপ্তার করা যাবে না। হামাসের কাছে ৯৮ ইসরায়েলি বন্দি ছিল যাদের মধ্যে অনেকেই ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। ১৫ মাসের যুদ্ধ ৪৬ হাজার ৬০০ ফিলিস্তিনির প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
জানা যায়, চুক্তির প্রথম দিন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। ধাপে ধাপে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা থেকে সরে যাবে। যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ অতিক্রান্ত হলে গাজার পুনর্গঠন, অবকাঠামো মেরামত এবং বাস্তুচ্যুতদের ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করা হবে। মানবিক সহায়তা ও পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক মানবিক সহায়তা গাজায় প্রবেশ করার কথা রয়েছে যার মধ্যে ৫০টি জ্বালানি ট্রাক থাকবে। উত্তর গাজায় বাস্তুচ্যুতরা ঘরে ফিরতে ৬০ হাজার অস্থায়ী ঘর এবং ২ লাখ তাবু সরবরাহ করা হবে বলে জানা গেছে। এদিকে যুদ্ধ বিরতির অংশ হিসেবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা ও মিশরের সীমান্তে ফিলাডেলফি করিডোর থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইসরায়েলি সম্প্রচারমাধ্যম কান জানিয়েছে, এসব পদক্ষেপ মূলত ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে বন্দি বিনিময়ের চুক্তি কার্যকর হওয়ার পরপরই বাস্তবায়িত হবে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেনাবাহিনীর দক্ষিণ কমান্ডে এই বিষয়ে বৈঠক ও পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর মিশরের সীমান্ত সংল্ল রাফা সীমান্ত ক্রসিং থেকে ইসরায়েলি সেনা দ্রæত প্রত্যাহার করা হবে। প্রথম কয়েক দিনের মধ্যেই ফিলাডেলফি করিডোর খালি করা হবে। তবে নেটজারিম অঞ্চলে স্থাপিত অবকাঠামো সরাতে এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
এছাড়া, গাজার সীমান্ত বরাবর একটি বাফার জোন তৈরির কাজ চলছে। ইতোমধ্যে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সব ভবন ধ্বংস করা হয়েছে। হামাসের হাতে থাকা বন্দিদের মুক্ত করে দেশে ফেরত নেওয়ার জন্য ইসরায়েলে লাগাতার বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মনে করা হয়, ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ চাপ ও যুদ্ধের ময়দানে ইসরায়েলি সেনাদের ক্ষয়ক্ষতি এবং অনেক সেনার যুদ্ধ করতে না চাওয়ার ত্রিমুখী চাপ নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করতে বাধ্য করছে। তবে হামাসের সঙ্গে কোনোপ্রকার যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করতে একেবারেই রাজি নন নেতানিয়াহুর মন্ত্রীপরিষদের কট্টরপন্থী প্রভাবসূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, আনাদুলু এজেন্সি