ভ্যাটে ভোক্তার উপর চাপ কমাতে হবে

4

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভ্যাট বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা কার্যকর হলে ভোক্তার ওপর চাপ বাড়বে বলে অনেকে মনে করছেন। নতুন বছরের প্রথম দিন হঠাৎ ভ্যাট, সম্পূরক শুল্কসহ বিভিন্ন ধরনের কর বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্র্বর্তী সরকার। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে। সেই ধাক্কা এখনো কাটিয়ে ওঠা যায়নি।
দুই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। অন্তর্র্বর্তী সরকার নীতি সুদহার বৃদ্ধিসহ নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও কিছুতেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো। বর্ধিত কর আরোপের ফলে পণ্য ও সেবার খরচ বাড়বে। এতে খরচ বাড়বে ভোক্তাদের। তাদের কষ্ট আরও বেড়ে যাবে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের শুল্ক কমিয়ে শূন্য করা হয়েছে। ফলে ভ্যাটের হার বাড়লেও পণ্যের দামে কোনো প্রভাব পড়বে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বলছে, আয়কর অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসার ধারাবাহিকতায় আয়কর অব্যাহতির বেশ কিছু বিধান বাতিল ও সংশোধন করা হয়েছে। আরও কিছু কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। গত চার মাসে বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি ও মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে চাল, আলু, পেঁয়াজ, চিনি, ডিম, খেজুর, ভোজ্যতেল, কীটনাশকসহ আটটি পণ্যে শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর ছাড় দেওয়া হয়। এতে ব্যাপকভাবে রাজস্ব আদায় হ্রাস পায়। রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যবর্তী সময়ে এসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে এ পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে বলে জানা যায়। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়বে না বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। সূত্র বলছে, চলতি সপ্তাহে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে এনবিআর বিশেষ অধ্যাদেশ জারি করে নতুন ভ্যাট হার কার্যকর করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাট একটি প্রত্যক্ষ কর। এটি ভোক্তা দিয়ে থাকেন বলে একে ভোক্তা করও বলা হয়। যেহেতু ভ্যাট ভোক্তা দেন, কাজেই ভ্যাট বাড়ানোর অর্থই হচ্ছে তাদের ওপর বাড়তি করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া। বর্ধিত ভ্যাটহার কার্যকর হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবেন। ফলে ভোক্তা বা জনগণকে আগের চেয়ে বেশি দামে পণ্য কিনতে হবে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ভ্যাটহার বাড়ানোর ফলে জিনিসপত্রের দাম আরেক দফা বাড়বে। এ উদ্যোগ মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে। এতে বিশেষ করে নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনযাপন আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
দুই বছর আগে এনবিআরের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সেবা খাতে আদায়যোগ্য ভ্যাটের ৭০ শতাংশই ফাঁকি দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই খাতে নিবিড় তদারকি ও বড় ধরনের সংস্কার করা হলে ভ্যাট আদায় অনেক বাড়বে। তখন আর নতুন করে ভ্যাটের হার বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিত না। ফাঁকি বন্ধ করতে হলে ভ্যাট ও আয়কর বিভাগকে একীভ‚ত করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ভ্যাটের হার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে নতুন করে যাতে ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি না হয়, সে জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আশা করছি, সরকার জনগণের স্বস্তি ফেরাতে বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।