নেই সিসিকের অনুমোদন : পাঠানটুলায় ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে সবজি-মাছের বাজার, জনদুর্ভোগ

5

স্টাফ রিপোর্টার

সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের পাঠানটুলায় অবস্থিত একটি স্বনামধন্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের সামনের প্রধান সড়ক দখল করে বাজার বসানো হয়েছে। সিলেট নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এমন একটি সড়কের বেশীর ভাগ অংশ ও ফুটপাত দখল করে বাজার বসানোর কারণে চরম জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন ঘটছে নানা ধরনের দুর্ঘটনা। এর আগেও এই সড়ক দখল করে বসানো হয়েছিল অবৈধ মাছ বাজার। পরবর্তীতে এ নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রচারের পর সিলেট সিটি কর্পোরেশন অভিযান চালিয়ে তা উচ্ছেদ করে।
কিন্তু গত ৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর একটি চক্র পূর্বের জায়গা (মদিনা মার্কেট) ছেড়ে পাঠানটুলায় অবস্থিত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান স্কলার্স হোমের বিপরীতে সামনের মূল সড়কে নবাবী ঈদগাহ সংলগ্ন স্থানে আবারও বাজার বসিয়ে দেয়। প্রায় দু’শতাধিক মাছ ও সবজি ব্যবসায়ীরা সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪/৫টা পর্যন্ত এখানে ব্যবসা করে থাকেন। বাজারকে কেন্দ্র করে শত শত ক্রেতা-বিক্রেতা প্রতিদিন এখানে জড়ো হন। অনেকেই আবার রাস্তার পাশে গাড়ী পার্কিং করে বাজার করেন। পাশাপাশি স্কুল শুরু ও ছুটির সময় অভিভাবকরাও তাদের যানবাহন নিয়ে উপস্থিত হলে প্রতিদিন ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয় অত্র এলাকায়, ঘটে নানা ধরনের দুর্ঘটনা। এনিয়ে অনেক অভিভাবককে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
আলম চৌধুরী নামে একজন অভিভাবক বলেন- স্কুলের সামনে মূল সড়ক ও ফুটপাতে কোন অনুমতি ছাড়া বাজার বসানো রীতিমত আইন অমান্য করা। তিনি বলেন- অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যার যেরকম ইচ্ছে সে সেরকমই করছে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা কেউ চিন্তা করছে না। তিনি অবিলম্বে এ বাজার উচ্ছেদ করে জন ও যান চলাচল স্বাভাবিক করার আহবান জানান।
আসমা নামের আরেক অভিভাবক বলেন- এমনিতে স্কুলের সামনে সবসময় যানজট থাকে। কারণ এ সড়কের পাশে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় ১০টির মতো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাছাড়া সিলেট-সুনামগঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এটি। মদিনা মার্কেটে বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে সব ধরণের পণ্যের বাজার। অথচ এরকম একটি বাজার থাকার পরও এর পাশে রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে আরেকটি বাজার বসানো কোন ভাবেই নাগরিক হিসেবে স্বস্তিদায়ক নয়। তিনি সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থা বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশনের দৃষ্টি আকর্ষন করে দ্রæত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
স্কলার্সহোমের শিক্ষার্থী সারা বলেন- এমনিতেই এখানে যানজট থাকে। তার উপর বাজার বসানোর কারনে আমাদের ক্লাস ধরতে প্রায়ই দেরি হয়ে যায়। ৫ আগষ্টের গনঅভ্যুানের ফলাফল যদি হয় যার যা ইচ্ছা তাই করবে তাহলে কিছু বলার নেই। তিনি বলেন- বাজার উচ্ছেদ করে আমাদের স্বাভাবিক চলাচলের সুযোগ করে দেওয়া হোক।
স্কুলের সামনে সবজি ও মাছের বাজার বসানোয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে স্কলার্সহোম এর প্রিন্সিপাল মো. আজিজুর রহমান বলেন, আগে এখানে ময়লার ভাগাড় ছিল, এখন সবজি ও মাছের বাজার হয়েছে। আমরা সিটি করপোরেশনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি এখনো পর্যন্ত ।
এই সবজি ও মাছের বাজার সম্পর্কে সিলেট সিটি করপোরেশনের বাজার শাখার প্রধান আলতাবুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমরা এই বাজার সস্পর্কে অবগত নয়। অনুমোদনহীন বাজার হলে অবশ্যই উচ্ছেদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, এ বাজার সম্পর্কে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। আমরা খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
সিসিকের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বাজার স্থাপনের বিষয়ে বলেন, সিটি করপোরেশনের অনুমতি ছাড়া কোনো বাজার বৈধ নয়। এখানে বড় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরকম একটি স্থানে রাস্তার উপরে সবজি বাজার করে জনগণের ভোগান্তি তৈরির জন্য, আমরা ব্যবস্থা নেবো।
এদিকে একাধিক সূত্রের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ বাজারকে কেন্দ্র করে একটি চক্র প্রতিদিন মাছ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা ও সবজি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১৪০ টাকা আদায় করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সচেতন এলাকবাসীর পক্ষ থেকে বাজারের নামে এরকম চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।