সিন্টু রঞ্জন চন্দ
হবিগঞ্জে ৫২ দিনে ৭টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ২ জনের প্রাণহানী ও ৫ শতাধিক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করছেন এবং অনেক আহতরা এখনও সিলেট ও হবিগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতালে ও প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন নারী-শিশু ও আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। এসব সংঘর্ষে প্রাণহানির পাশাপাশি বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটছে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে জায়গা-জমি সংক্রান্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমন সহিংসতার ঘটনায় সামাজিকভাবে ভয়-আতংক যেমন বাড়ছে তেমনি আইন-শৃংঙ্খলারও অবনতি হচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতনমহল।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের পাহাড়পুর গ্রামে বাড়ির সীমানা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত রজব আলী (৩৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। ২২ ডিসেম্বর রবিবার দিবাগত রাতে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত রজব আলী একই গ্রামের গুল মামুদের ছেলে। জানা যায়, বানিয়াচং উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের কাজল মিয়া ও মুহিবুর মিয়ার মধ্যে জায়গা সংক্রান্ত ও বাড়ির সীমানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন। পরে আহদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা।
এ বিষয়ে বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সিলেটের ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রজব আলী নামে একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে। তবে মরদেহ এখনো বাড়িতে আসেনি।
২১ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ সদর উপজেলার তেঘরিয়া ইউনিয়নের টঙ্গিরঘাট গ্রামে মসজিদের টাকা নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষের নারীসহ শতাধিক লোকজন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রায় অর্ধশতাধিক লোকজনকে উদ্ধার করে জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যান্যদের দেয়া হয়েছে প্রাথমিক চিকিৎসা। খবর পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে। ২১ ডিসেম্বর শনিবার সকালে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টঙ্গিরঘাট গ্রামের জামে মসজিদের ১৪ লাখ টাকা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয় একই গ্রামের মুরুব্বি মোঃ তাইবুল্লাহ ও আলহাজ্ব মিয়ার মধ্যে। মসজিদের বর্তমানে কোন কমিটি না থাকায় ওই টাকা আলহাজ্ব মিয়া মসজিদের অন্য কোন কাজে লাগাতে চায়। আর তাউবুল্লাহসহ গ্রামবাসি উল্লেখিত পরিমান টাকা ব্যাংকে একাউন্ট করে রাখতে সম্মত হয়। এনিয়ে শুক্রবার রাতে এক বৈঠক হয় টঙ্গিরঘাট গ্রামে। এনিয়ে আলহাজ্ব মিয়ার সাথে বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে তাইবুল্লাসহ গ্রমাবাসীর। এরই জেরধরে শনিবার উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে- আলাছ মিয়া, আকল মিয়া, আফসর মিয়া, মাম্মদ আলী, মইনুল ইসলাম, জরিমান বেগম, মুশাহিদ, হাসান মিয়া, শ্যামল মিয়া, জনি মিয়া, আনছব আলী, মুন্না আক্তার, আতর আলী, ইসলাম উদ্দিন, আফজল মিয়া, জাকির আলী, মোহাম্মদ আলী, আহম্মদ আলী, কালাম মিয়া, শাহিদ মিয়া, আব্দুল মিয়া, সুমন মিয়া, মিজান আলী, আমান আলী, রমজান আলী, ফারজাহান আক্তার, আতাবুর রহমান, বিল্লাল মিয়া, ইরফান মিয়া, হাবিবুর রহমান, এংরাজ মিয়া, স¤্রাট মিয়া, আব্বাস আলী, জামান মিয়া ও সাদেক মিয়াকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মো. তাইবুল্লাহ জানান, ১৪ লাখ টাকা মসজিদের ফান্ডের টাকা। আমিসহ গ্রামবাসি স্বচ্ছতার জন্যেই এই টাকা ব্যাংকে একাউন্ট করে রাখার জন্য বলেছি। কিন্তু আলহাজ্ব মিয়া, সত্তর মিয়াসহ কিছু লোকজন এই টাকা অথযা খরচ করতে চায়। এর আগেও তাদের বিরুদ্ধে মসজিদের টাকা আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার (ওসি) আলমগীর কবির বলেন, মসজিদের টাকা নিয়ে দুটি পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে। বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৮ ডিসেম্বর রবিবার হবিগঞ্জের বাহুবলে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার ৫ টাকা ভাড়া দেওয়াকে কেন্দ্র করে চার গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশসহ অন্তত শতাধিক লোকজন আহত হয়েছে। গুরুতর আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। রবিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত একটানা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মৌছাক এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের সময় উভয় পক্ষের বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানবাহন আটকা পড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
জানা যায়- অটোরিকশার পাঁচ টাকা ভাড়া নেওয়া-দেওয়া নিয়ে বাহুবল উপজেলার সাতপাড়িয়া গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে পাশের কবিরপুর গ্রামের এক ব্যক্তির বাকবিতÐা হয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয় এবং এক পর্যায়ে বিষয়টি উভয় গ্রামের লোকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় কবিরপুর গ্রামের পক্ষে ভেড়াখাল গ্রামের ও সাতপাড়িয়া গ্রামের পক্ষে বহরুয়া গ্রামের লোকজন অবস্থান নেয়। ভয়াবহ সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত শতাধিক লোকজন আহত হয়। এদিকে, ঢাকা সিলেট মহাসড়কের উপর সংঘর্ষ চলায় সড়কের দু’পাশে আটক পড়ে শত শত যানবাহন। চরম দূর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। ঘন্টার পর ঘন্টা সংঘর্ষ চলায় দীর্ঘ হতে থাকে যানবাহনের সাড়ি। পরে বাহুবল থানা পুলিশ ও হাইওয়ে থানা পুলিশের সহায়তায় সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এ বিষয়ে বাহুবল সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম বলেন- টমটম অটোরিক্সার ভাড়াকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসির মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আমাদের কয়েকজন পুলিশ সদস্যসহ অনেকেই আহত হয়েছে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
৩০ নভেম্বর শুক্রবার রাতে হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা সদরের ১নং উত্তর পূর্ব ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মজলিশপুর মহল্লাটি হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে উঠে। রাতের আধারে নুর মাম্মদ ও জালাল আবেদীন নামে দুই বয়স্ক ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। তারা দুইজনেই ওই মহল্লার বাসিন্দা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে জেলা সদরে নিয়ে আসা হলেও পরে আশঙ্কা জনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে এই হামলার ঘটনা ঘটে। জানা যায়- ওই সময় নূর মাম্মদ ও জালাল আবেদীন মোটরসাইকেলযোগে বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। মাতাপুর এলাকায় পৌঁছামাত্র ইউপি সদস্য মনছুর মিয়াসহ তার লোকজন মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে তাদেরকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়।
পরে স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে। এই হামলার পর থেকেই ওই এলাকায় উত্তপ্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। যে কোন সময় সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। খবর পেয়ে বানিয়াচং থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি টিম ওই এলাকায় টহল জোরদার করা হয়।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসন জানান, ঘটনার পর পরই থানা পুলিশ কয়েকবার ওই এলাকায় গিয়ে টহল দিয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
২৭ নভেম্বর বুধবার হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা ইউনিয়নের নোয়াগড় গ্রামে গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’গ্রæপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আজমিরীগঞ্জ থানার ওসিসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। আহত অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে জেলা সদর আধুনিক হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ওইদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, নোয়াগড় গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ও আওয়ামীলীগ নেতা শাজাহান মিয়ার সাথে দীর্ঘদিন যাবত গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল একই গ্রামের বশির মিয়াসহ তাদের লোকজনের। বশির মিয়া নোয়াগড় মাদরাসা ম্যানেজিং কমিটির আহবায়ক। বুধবার তাদের মধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির ফান্ডের টাকা নিয়ে বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে আজমিরীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বি এম মাঈদুল হাছান বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণের এক পর্যায়ে আমি আহত হই। ওসি বলেন, তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
২৪ নভেম্বর রবিবার হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার পুরানগাঁও এলাকায় মোস্তাকিন মিয়া (১৭) নামের এক কিশোরের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে তদন্ত শেষে দ্রæত হত্যাকাÐের মূল রহস্য উদঘাটন করা হবে। ওইদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের পুরানগাঁও গ্রামের বসতঘর থেকে পুলিশ মোস্তাকিন মিয়ার লাশ উদ্ধার করে। নিহত মোস্তাকিন মিয়া উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের পুরানগাঁও গ্রামের মৃত জফর মিয়ার ছেলে। মোস্তাকিন পেশায় রাজমিস্ত্রী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়- উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের পুরানগাঁও গ্রামের মৃত জফর মিয়ার ৫ ছেলের মধ্যে নিহত মোস্তাকিন চতুর্থ, দুই ছেলে প্রবাসী ও অপর দুই ছেলে অন্যত্র কাজ করে। নিজ বাড়িতে মোস্তাকিম তার মা ও প্রবাসী দুই ভাইয়ের স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলো। রবিবার সন্ধ্যায় মৃত জফর মিয়ার শ্বাশুড়ি অসুস্থ হওয়ায় জফর মিয়ার স্ত্রী বসত ঘরে প্রবাসী দুই ছেলের স্ত্রী ও ছেলে মোস্তাকিন মিয়াকে রেখে পিত্রালয়ে চলে যান। সন্ধ্যার দিকে নিজ বসতঘরের খাটে মোস্তাকিন মিয়া ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ১০টার দিকে বাথরুমে যান মোস্তাকিন। পরে বাথরুম থেকে নিজ বসতঘরে প্রবেশের পর মোস্তাকিন মিয়ার চিৎকার-চেঁচামেচী শুনে দৌঁড়ে আসেন দুই ভাইয়ের স্ত্রী। পরে খাটের ওপর মোস্তাকিন মিয়ার গলাকাটা লাশ দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করেন তারা। এসময় আশপাশের স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেনসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মোস্তাকিন মিয়ার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। এদিকে বসতঘরে গলাকেটে কিশোর মোস্তাকিনকে হত্যার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন- হত্যাকাÐের আগে-পরে যারা ঘটনাস্থলে বা আশপাশে ছিলেন তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, আশা করছি দ্রæত হত্যাকাÐের মূল রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে।
১৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার হবিগেঞ্জর লাখাইয়ে দুই ইউপি সদস্য (মেম্বার) এর লোকজনের মধ্যে রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক লোকজন আহত হয়েছেন। আহত অবস্থায় তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ জনকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যান্যদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সকাল ১১টার দিকে উপজেলার বুল্লা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের গোয়াকারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে।
পুলিশ জানায়- ওই ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য আমিনুল ইসলাম ও সাবেক সদস্য নজরুল ইসলামের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তারসহ নানা বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। বৃহস্পতিবার নজরুল ইসলাম তাদের বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি পুকুরে পাটি বাঁধ দিয়ে মাছ ধরতে যায়। এসময় তাতে বাঁধা প্রদান করে আমিনুল ইসলামসহ তার লোকজন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় ঘন্টা ব্যাপী চলা সংঘর্ষে অন্তত ৩৫ জন আহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে লুৎফুর রহমান (৬০), কুদ্দুছ মিয়া (৫৫), জয়নাল মিয়া (৩৫), রুবেল মিয়া (৩০), আক্তার হোসেন (২৫), মাখন মিয়া (৩৫), জিলাউর রহমান (৩৭), কামাল মিয়া (৩৫), আউয়াল মিয়া (৩৫), হেলাল মিয়া (৩০), মোশাহিদ মিয়া (৩২), মিজানুর রহমান (২০), জালাল মিয়া (৪০), ইলিয়াছ মিয়া (৫০), মইন উদ্দিন (৩৫), মানিক মিয়া (৫০), সুয়েব আলী (৫০), রনি মিয়া (৩০), খোকন মিয়া (৩০), এখলাছ মিয়া (৪০), ইদু মিয়া (৪০), সালাউদ্দিন (৩০), আমির মিয়া (৩৫), জনি মিয়া (২৫) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ বিষয়ে লাখাই থানার (ওসি) বন্দে আলী জানান, বর্তমান ইউপি সদস্য আমিনুল ইসলাম ও সাবেক সদস্য নজরুল ইসলামের মধ্যে পুর্ব বিরোধ রয়েছে। একটি পুকুরে পাটি বাঁধ দিয়ে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে তাদের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।