ভোটের আগে বাড়তে পারে সহিংসতা

21

কাজির বাজার ডেস্ক

জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে ভোটবিরোধীদের সহিংস আচরণও বাড়তে পারে বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ভোট ঠেকানোর নামে জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর ও জানমালের ক্ষতির মতো অপতৎপরতা বাড়তে পারে। এমন পরিস্থিতিতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মাঠপর্যায়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নাশকতাকারীদের ন্যূনতম ছাড় দেওয়া যাবে না। নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আগাম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার। পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে।
পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ২৩ ডিসেম্বর থেকে খুব প্রয়োজন না হলে পুলিশে ছুটি নিতে নিরুৎসাহী করা হয়েছে। সবাইকে নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।
এক সপ্তাহের মধ্যে রেলপথে দুটি বড় নাশকতায় প্রাণ গেছে নারী, শিশুসহ পাঁচজনের। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, হরতাল ও অবরোধকারীরাই এ ধরনের নাশকতায় যুক্ত। ১৩ ডিসেম্বর গাজীপুরে রেললাইনে কেটে নেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া সাতজনই বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত। এ ছাড়া থেমে থেমে যাত্রীবাহী বাসেও দেওয়া হচ্ছে আগুন। এসব ঘটনায় সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার ব্যক্তিরাও দলটির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
সাম্প্রতিক সময়ে রেলপথে বড় নাশকতার পর সাধারণ মানুষের মধ্যেও দানা বাঁধছে আতঙ্ক। এমন অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নানা কৌশলে নাশকতা ঠেকাতে কার্যক্রম চালাচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, জানমালের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব সময় প্রস্তুত থাকে। নানা পরিস্থিতিতে নানা কৌশল নেওয়া হয়। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশ সারা দেশে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
তিনি বলেন, জানমালের ক্ষতি করে, জ্বালাও-পোড়াও করে কেউ রক্ষা পাবে না। নাশকতাকারীদের কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। অপরাধীকে আইনের আওতায় নেওয়া পুলিশের কাজ। পুলিশের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করার জন্য সারা দেশে নির্দেশনা রয়েছে। কয়েকটি জেলা পুলিশের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচন সহিংসতা মুক্ত এবং নির্বিঘেœ যাতে ভোটাররা ভোট দিতে পারেন, সেজন্য নিরাপত্তা ছক ধরে কাজ করছে পুলিশ। এর মধ্যে প্রতিদ্ব›দ্বী দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে প্রভাবশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মীদের সংঘাত-মারামারির বিষয়টিও মোকাবিলা করতে হচ্ছে জেলা পুলিশকে। এ ছাড়া ২৮ অক্টোবর থেকে বিরোধী পক্ষের সহিংসতা মোকাবিলায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়ার পর তা নিয়ে পুলিশের নানা স্তরে আলোচনা চলছে। মনে করা হচ্ছে, মূলত এ ধরনের আন্দোলনের নামে নাশকতা চালানো হতে পারে। জ্বালাও-পোড়াও ছাড়াও চোরাগোপ্তা হামলা বাড়তে পারে। বাস, রেলসহ নানা গণপরিবহনে নাশকতার পর এবার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নাশকতাকারীদের টার্গেটে পরিণত হতে পারে। এদিকে সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত ১০০ সদস্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এপিবিএনের অতিরিক্ত ৬০ সদস্য এবং চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অতিরিক্ত ৫৪ আনসার সদস্য নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানায়, বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সিভিল এভিয়েশনের নিজস্ব পাঁচ শতাধিক নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এর পাশাপাশি এপিবিএনের ১ হাজার ৮৫ জন ও আনসারের ৯০২ জন সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। এর বাইরে ‘ইন্সট্রাকশন রিগার্ডিং এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ আওতায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের মাধ্যমে বিমানবাহিনী ও জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে সংযুক্ত পুলিশ ও আনসারের আরও কয়েকশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পোশাক ছাড়াও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা কার্যক্রম চলছে। থানা পুলিশ ছাড়াও বিজিবি ও র্যাব সদস্যরাও সারা দেশে দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচনের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসবে নিরাপত্তা বলয় ততই বাড়তে থাকবে।
পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, নাশকতার পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতাদের অনেকেই নানা মামলায় কারাগারে রয়েছে। এরপরও অনেকেই পালিয়ে থেকে নাশকতার নানা ছক কষছে। সে ছক বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে তৃণমূলের কর্মীদের। পুরো নির্দেশনা আসছে অনলাইনের নানা সিক্রেট অ্যাপস ব্যবহার করে। রাজনৈতিক নির্দেশনা পালনের অংশ হিসেবে কর্মীদের অনেকেই নাশকতায় যুক্ত হচ্ছে। অনেকে মাদকাসক্ত ও ভবঘুরে ব্যক্তিদের ভাড়া করে গাড়িতে আগুন দিচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন্স) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, অসহযোগ বা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে পুলিশের কিছু বলার নেই। তবে কেউ যদি রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে মানুষের ক্ষতি করে, সম্পদের ক্ষতি করে, তাহলে ন্যূনতম ছাড় দেওয়া হবে না। নাশকতাকারীরা যত বড়ই হোক, পদ যত বড় হোক, অপরাধ বিবেচনায় কাউকেই ছাড় দেবে না পুলিশ। যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা সহিংসতা ঠেকানোর মতো প্রস্তুতি-কৌশল সবকিছুই রয়েছে পুলিশের। তিনি বলেন, রেলপথ বা যে কোনো নাশকতার ঘটনায় নির্দেশদাতা, পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নেওয়া হবে।