হবিগঞ্জে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ, গাড়ী ভাংচুর, ৭ পুলিশ সদস্যসহ আহত ৩৩

2

 

হবিগঞ্জ সংবাদদাতা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই হবিগঞ্জ শহরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ৭ পুলিশ সদস্যসহ ২৫ জন আহত হয়েছেন। বুধবার রাত ৮ টার দিকে শহরের শায়েস্তানগর কবরস্থান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রায় আধা ঘণ্টা সংঘর্ষ চলাকালে দুটি প্রাইভেট কারসহ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বুধবার সন্ধ্যায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, এর পরপরই বিএনপির নেতা-কর্মীরা হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর কবরস্থান এলাকায় জড়ো হন এবং বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। রাত আটটার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। আধা ঘণ্টা ধরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এতে ৭ পুলিশ সদস্যসহ ২৫ জন আহত হন। পরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন।
এদিকে ওই সংঘর্ষের আধা ঘণ্টা আগে শহরের টাউন হল এলাকায় বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। পাশাপাশি প্রাইভেট কারসহ বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হলে যানবাহন ভাঙচুরকারীরা পালিয়ে যান। পুলিশের পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য আবু জাহিরের নেতৃত্বে দলের নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসেন। তারা শহরের প্রধান সড়কের ওপর পথসভা করেন। এ সময় শহরে প্রধান সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অজয় চন্দ্র দেব জানান, বিএনপির নেতা-কর্মীরা শহরে তিন-চারটি গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। পুলিশের ওপর ইটপাকেল নিক্ষেপ করেছেন। এতে সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ছাড়া শহরের টাউন মসজিদ এলাকায় আকস্মিক হামলা করে তিনটি ইজিবাইকসহ আরও কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। হামলাকারীরা আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিলকে স্বাগত জানিয়ে মিছিলকে কেন্দ্র করে বাকবিতন্ডার জেরে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দু’গ্রæপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিকসহ অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন। আহত অবস্থায় তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় উপজেলাজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে দু’পক্ষই শহরে অবস্থান নিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিলকে স্বাগত জানিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন উদ্যোগে মিছিল বের করা হয়। নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে সাধারণ সম্পাদক গতি গোবিন্দ দাশসহ নেতারা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে তারা স্থানীয় নতুন বাজার মোড়ে এসে পথসভায় মিলিত হয়। একই সময়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিক ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহŸায়ক লোকমান খানসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী মিছিল ও পথসভায় যোগ দেয়।
পথসভা শেষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিক নামাজে রেখে কেন মিছিল শুরু করা হলো এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক গতি গোবিন্দ দাশের কাছে জানতে চান।
এ সময় বিষয়টি নিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু ও পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য বাবলু আহমদের মধ্যে বাকবিতন্ডায় হয়। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
নবীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ মাসুক আলী বলেন, দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে ইটের আঘাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহত হয়েছেন। পুলিশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
অপরদিকে, তফসিল ঘোষণার পরপরই বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শহরের তিনকোণা পুকুরপাড় ও সবুজবাগ এলাকায় হবিগঞ্জ শহরে ৫টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করে এ ভাঙচুর চালায়। এ সময় আওয়ামী লীগ, পুলিশ ও বিএনপির মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ধাওয়া খেয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়।
হবিগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বলেন, বিএনপি সমর্থিত নেতাকর্মীরা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করেছে।
হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির এমপি বলেন, হবিগঞ্জের মাটিতে কখনো চোরাগুপ্তা হামলা হয়নি। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনকে বানচাল করতে এখন চোরাগুপ্তা হামলা শুরু করেছে। এতে তারা নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না।