ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনা : যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

41

দেশের পুরনো এই রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি বাংলাদেশ রেলওয়ে। সরকার রেলওয়েকে নতুন করে গড়ে তুলতে আন্তরিক। নতুন নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া পুরনো রেলপথ নতুন করে চালু করা হচ্ছে। কোনো দিন ট্রেন চলেনি এমন অনেক এলাকায় রেললাইন স্থাপনের কাজ চলছে। অনেক এলাকায় এরই মধ্যে রেলপথ স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। ট্রেন চলাচল শুরুও হয়েছে। বর্তমান সরকার রেলওয়েকে আধুনিক করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে নতুন কোচ ও ইঞ্জিন। কিন্তু যাত্রীদের সুরক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়ে এখনো প্রশ্ন আছে।
গত সোমবার বিকেলে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে জংশন স্টেশন এলাকায় জগন্নাথপুর আউটার সিগন্যালের সামনে মালবাহী ট্রেনের ধাক্কায় যাত্রীবাহী ট্রেনের দুটি বগি উল্টে যাওয়ার ঘটনায় অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ঘটনা তদন্তে কমিটি করেছে ফায়ার সার্ভিস। পাঁচ সদস্যের এই কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। দুর্ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। একটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে এবং অন্যটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ ঘটনায় কনটেইনারবাহী ট্রেনের চালক (লোকো মাস্টার), সহকারী লোকো মাস্টার ও পরিচালককে (গার্ড) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা এগারসিন্ধুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার দিকে যাচ্ছিল আর কনটেইনারবাহী ট্রেনটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল। রেলওয়ের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কনটেইনারবাহী ট্রেনটির চালক ও সহকারী চালক সিগন্যাল অমান্য করায় এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। তাঁদের দাঁড়ানোর কথা ছিল ভৈরব স্টেশনের আউটার সিগন্যালে, কিন্তু তাঁরা সেটি না করে সিগন্যাল অমান্য করে ট্রেনটি চালিয়ে চলে আসেন। মালবাহী ট্রেনটির ইঞ্জিন এগারসিন্ধুরের পেছন থেকে তৃতীয় বগিতে আঘাত করে। সাধারণত অন্য ট্রেনকে জায়গা দিতে আউটার সিগন্যাল এলাকায় ট্রেন থামার সংকেতবাতি আগেই জ্বালিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই সংকেতবাতি জ্বলেনি, নাকি কনটেইনার ট্রেনের চালক সংকেত দেখতে পাননি? জানা যাবে তদন্তের পর।
এর আগে ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগ স্টেশনে ঢাকামুখী ত‚র্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস ট্রেনটির ইঞ্জিন চট্টগ্রামমুখী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের পেছনের কয়েকটি বগিতে আঘাত করলে সে সময়ও ১৭ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়। যেকোনো দুর্ঘটনাই ভুক্তভোগী পরিবারের জন্য বেদনাদায়ক। এসব দুর্ঘটনায় অনেক পরিবারই পথে বসে যায়। সোমবারের দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সময়ের বিবেচনায় এই অর্থমূল্য কম কি না, সেটি ভেবে দেখা একান্ত প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। ট্রেনভ্রমণ নিরাপদ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।