স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে উত্তরণ জরুরি

26

 

করোনাার পর থেকে ভীষণ সংকটে মানুষ। সব কিছুর দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষ দিশেহারা। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষ খাদ্যতালিকা থেকে অনেক কিছুই বাদ দিয়েছে। আমিষের মধ্যেও বাদ পড়েছে অনেক কিছু। তারমধ্যে কম দামি মাছও রয়েছে। অন্যদিকে পোলট্রির মাংস খাওয়া বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।
দেশের পোলট্রি খামারগুলোতে দিন দিন বাড়ছে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার। সঙ্গত কারণেই খামারের প্রাণীদের মধ্যে বেড়ে যাচ্ছে ওষুধ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া। এরপর এগুলো মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করছে। এর মাধ্যমে মানুষের দেহেও বাসা বাঁধছে ওষুধ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া; স্বাস্থ্যঝুঁকি মারাত্মকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে পুরো মানবজাতিকেই। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের করা এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন ভয়ঙ্কর তথ্য।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পোলট্রি ড্রাগ ও ফিড বিক্রেতারা প্রাণী চিকিৎসকের গাইডলাইন না মেনে তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণেও খামারিদের কাছে বিক্রি করছেন অ্যান্টিবায়োটিক। অধিকাংশ খামারিই অ্যান্টিবায়োটিকের উইথড্রয়াল পিরিয়ড সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। খামার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জরুরি মুহ‚র্তে চিকিৎসক না মিললেও ফিড দোকানে পাওয়া যায় ওষুধ। এছাড়া ফিড ও ড্রাগ ব্যবসায়ীদের বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়েও অনেক খামারি যখন-তখন ব্যবহার করছেন অ্যান্টিবায়োটিক।
বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর ও জামালপুরের প্রান্তিক পোলট্রি খামারি এবং ফিড বিক্রেতাদের ওপর চালানো ওই গবেষণায় দেখা যায়, ৭০ শতাংশ ফিড ব্যবসায়ী অ্যান্টিবায়োটিক সম্পর্কে জানেন যাদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণু সম্পর্কে ধারণা রাখেন।
অ্যান্টিবায়োটিকের মেয়াদকাল সম্পর্কে জানেন ৫০ শতাংশ অপেশাদার পরামর্শদাতা। এসব ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ পরামর্শদাতা মানেন না পশু চিকিৎসকদের গাইডলাইন। তবে এদের মাঝে ৮০ শতাংশের দাবি তারা গাইডলাইন মেনে অ্যান্টিবায়োটিকের পরামর্শ দেন। এদের মাঝে ৪৫ শতাংশ বিক্রেতা একই সময়ে একটি মাত্র অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দেন; যেখানে ৫৫ শতাংশ একই সময়ে একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারেরর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ১৫ শতাংশ মাসে একবার অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দিলেও ৮৫ শতাংশ যথেচ্ছ ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রান্তিক পর্যায়ে অদক্ষ অপেশাদার পল্লী চিকিৎসক আছেন।
এদিকে খামারিরা বলছেন, সচেতনতার অভাবে অধিকাংশ পোলট্রি খামারে অ্যান্টিবায়োটিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার বাড়ছে। দেশের পোলট্রি খাতের সিংহভাগজুড়ে আছেন প্রান্তিক খামারিরা। তারা বলছেন, এর পিছনে দায়ী ফিড বিক্রেতাদের আগ্রাসী বিপণন মনোভাব। প্রান্তিক খামারিদের বক্তব্য হলো গ্রামপর্যায়ে যেখানে ডাক্তার থাকার কথা ছিল সেখানে ডাক্তার পাওয়া যায় না।
তবে ফিড কোম্পানির লোকরা নিয়মিত খামারিদের সাথে যোগাযোগ রাখেন। তারা খামারিদের বোঝায় এ ধরনের ওষুধগুলোকে মুরগির গ্রোথ বাড়াবে এবং সুস্থ রাখবে। অসচেতন খামারিরা এই ফাঁদে পড়ে মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন। পোলট্রি খামারে অ্যান্টিবায়োটিকের অনিয়ন্ত্রিত এমন ব্যবহার বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
আমরা মনে করি, যে প্রাণীটিকে খেতে হবে তাকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো যাবে না। তাছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে মুরগির গ্রোথ বাড়ে না বরং কমে যায়। এটা মানুষকে জানাতে হবে। এছাড়াও অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার রোধে সচেতনতা প্রয়োজন। তাহলে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার জিরোতে চলে আসবে।