আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো…..

44

জেড.এম. শামসুল :
মহান ভাষা আন্দোলনের মাস হিসাবে শুধু বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়েই অতিবাহিত হচ্ছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা সংবিধান অনুযায়ী “বাংলাভাষা” হলেও তার কতটুকু জাতীয় জীবনে প্রবর্তন হয়েছে, না তার প্রাপ্য মর্যাদা অর্জন হয়েছে এসব এখনো অসীমাংসিত।
বাংলাভাষাকে তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে ঘোষণার দাবীতে সেদিন পূর্ববঙ্গের সরকারের নিকট জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে বাংলাভাষা রাষ্ট্রীয় ভাষা করার দাবী করছিল। পূর্ববঙ্গের সর্বস্তরের হিন্দু-মুসলমানদের প্রাণের ভাষা বাংলাভাষা, তাই রক্ত ঝরাতেও দ্বিধাবোধ করেনি। ভারতবর্ষের অন্যান্য ভাষার মধ্যে বাংলাভাষা ছিল অনন্য তাই এ ভাষার বিকাশ ও সমৃদ্ধিতে ছিল বাঙালি জাতির অগ্রণী পদক্ষেপ। তাই বাংলাভাষাকে সমৃদ্ধ করতে প্রতি বছর অনেক কর্মসূচী গ্রহণ করা হতো। এসব কর্মসূচীর মধ্যে অফিস আদালতে বড় বড় প্রতিষ্ঠানে ইংরেজীর পরিবর্তে বাংলার ব্যবহার প্রতিষ্ঠানের সাইন বোর্ড সমূহ বাংলায় লেখার প্রচলন। এসব দৃষ্টান্ত দিয়ে ছাত্ররা প্রতিরোধ গড়ে তুলত। সর্বত্র বাংলা চালুর জন্য আমাদের ছাত্র জীবনে কম তৎপর ছিলাম না। ভাষা দিবস আসলে দোকানে দোকানে গিয়ে বাংলা ভাষায় সবকিছু করার ও সাইন বোর্ড লেখার, সকালে প্রভাত ফেরিতে ছাত্র জনতার জমায়েতে কম তৎপর ছিলাম না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলাম। তাই একুশের ভাষা মাস আসার সাথে সাথে দিবস পালনের যতসব কর্মসূচী গ্রহণ করতে হয়েছে। মহান ভাষা দিবস পালন করার জন্যে অনেক কষ্টের বিনিময়ে ১৯৭৩ সালে আমি নিজে উদ্যোগ নিয়ে জকিগঞ্জে স্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপন করেছিলাম। এখনও সেই শহীদ মিনার সংস্কার করে দিবসটি পালন হচ্ছে। এ দিবস পালন করতে গিয়ে অনেক সময় অনেক তর্ক বিতর্কের সম্মুখীন হয়েছি। আমাদের পূর্বসূরীরাও সবচেয়ে বেশী ত্যাগ তিতিক্ষা রক্ত দিতেও প্রস্তুত ছিলেন। তবু তারা থামেননি। মাতৃভাষা বাংলার ব্যবহার, চর্চা ও সমৃদ্ধির জন্য আরো সোচ্চার হতে হবে। এ ভাষার জন্যে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৫০ সালের এই দিনে পূর্ব পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রের মূলনীতির খসড়ায় পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীদের স্বার্থের পরিপন্থী বিষয় সম্পৃক্ত হওয়ার প্রতিবাদে সভা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে থাকে। এদিকে অধ্যাপক আবুল কাসেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বলা হয়, পাকিস্তানের গঠনতন্ত্রে জোর করে সিদ্ধান্ত পাশ করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়, তাহলে পূর্ববঙ্গের সকল সদস্য পরিষদ বর্জন করে করাচি ত্যাগ করার আহবান জানানো হয়। এ বছরের ১২ নভেম্বর গণতান্ত্রিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় গণপরিষদ’র মূলনীতি কমিটির সুপারিশের বিরুদ্ধে সারা পূর্ব বাংলায় বিক্ষোভ কর্মসূচী পালিত হয় এবং ১৭ নভেম্বর গণপরিষদ’র আলোচনা স্থগিত ঘোষণা করা হয়। পূর্ব পাকিস্তান গণপরিষদ’র সদস্যবৃন্দের অনুরোধে লিয়াকত আলী খান গণপরিষদ’র আলোচনা স্থগিত রাখতে সম্মত হন। ফলে আন্দোলন সংগ্রাম তীব্রতর হতে থাকে।