আন্দোলনের অপসংস্কৃতি বন্ধ হউক

20

সরকারের শেষ বছর বা নির্বাচনের বছরটি নানা দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষভাবে এ বছর নানা আন্দোলন-কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মাঠ গরম রেখে সরকারি দলকে চাপে রাখতে চায় এবং আসন্ন নির্বাচনে সুবিধা আদায় করতে চায়। আবার বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনও সরকারের শেষ বছরে আদাজল খেয়ে রাস্তায় নেমে যায় বেতন বৃদ্ধিসহ নানা ধরনের দাবি আদায় করে নিতে। কখনো কখনো বিরোধী দলগুলোও পেছনে থেকে পেশাজীবীদের আন্দোলনকে উৎসাহিত করে। এটা অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। সরকারও নিজেদের জনসমর্থন ধরে রাখতে যথাসাধ্য তাদের দাবি মেনে নেয় এবং বর্ধিত রাজস্ব সংগ্রহের জন্য জনগণের কাঁধে করের বোঝা বাড়িয়ে দেয়। এটাই বাংলাদেশে সরকারের শেষ বছর বা নির্বাচনী বছরের সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে বেশ কয়েকটি পেশাজীবী সংগঠন আন্দোলনে রয়েছে। আরো বেশ কিছু সংগঠন এ মাসেই তাদের আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে রেখেছে। দেশের প্রায় পাঁচ হাজার ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ১১ দিন লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট পালন করার পর গত ৯ জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশন চালিয়ে আসছেন। তাঁদের দাবি, মাদরাসাগুলোকে জাতীয় করতে হবে। এর আগে নন-এমপিও শিক্ষকরাও অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাওয়া আশ্বাসের ভিত্তিতে অনশন ত্যাগ করেছেন। বিক্ষোভ-স্মারকলিপির মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু করেছেন বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় সাত লাখ শিক্ষক-কর্মচারী। তাঁদের প্রধান দাবি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারি করা। দাবি পূরণ না হলে ২২ থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হবে। ২৮ তারিখে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। অথচ আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে সমাধান না হলে বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থী জিম্মি হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অভিভাবকরা। সরকারি স্বাস্থ্য সহকারীরা দেশব্যাপী কর্মবিরতি পালন করছেন। পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ঘোষিত কর্মসূচিতে গতকাল ও আজ পৌরসভাগুলোতে সেবা বন্ধ রয়েছে। দাবি পূরণ না হলে ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব সেবা বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং শহীদ মিনারের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন অধিদপ্তর, দপ্তর ও সরকারি সংস্থায় আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। তবে সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে আসছে সম্ভবত প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় স্টিয়ারিং কমিটির আন্দোলনের প্রস্তুতি। এ ব্যাপারে শিগগিরই তারা অফিসার্স ক্লাবে বৈঠকে মিলিত হবে বলে জানা গেছে। বছরজুড়েই চলবে এমন আয়োজন।
সরকারের শেষ বছরে দাবি আদায়ে মাঠে নামার যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তা চাইলেই বদলানো যাবে না। আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে পেশাজীবীদের ন্যায্য দাবিদাওয়া মেনে নিতে হবে। এসব আন্দোলনের পেছনে থাকা রাজনৈতিক উসকানি সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। আন্দোলনকারীদেরও দাবিদাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে যথাসাধ্য যৌক্তিক অবস্থান নিতে হবে।