মৌলভীবাজার জেলায় তিনদিনে পর্যটনখাতে আয় ৫ কোটি টাকা

13

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজার জেলায় পর্যটনখাতে টানা তিনদিনের ছুটিতে ২৫-৩০ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। এতে পর্যটন খাতে আয় হয়েছে ৫ কোটি টাকা এমনটাই জানিয়েছেন হোটেল- রিসোর্ট মালিকদের সংগঠন শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থা।
হোটেল রিসোর্ট মালিকরা জানান, জাতীয় অর্থনীতিতে পর্যটনের অবদান বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে জেলার বিভিন্ন পর্যটন আকর্ষণীয় এলাকায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হচ্ছে না। যার ফলে চাহিদা অনুযায়ী পর্যটকরা আসছেন না। তবে গতি ফিরতে শুরু করেছে পর্যটন শিল্পের।
মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো.শহিদুল ইসলাম বলেন, জেলায় পর্যটকের জন্য লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বর্ষিজোড়া ইকো পার্ক, মুরইছড়া ইকো পার্ক রয়েছে। তারমধ্যে শুধু লাউয়াছড়া উদ্যান থেকে গত (২৫ডিসেম্বর) শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত তিনদিনে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৪০৪ টাকা আয় হয়েছে। তারমধ্যে বিদেশী পর্যটক নারী পুরুষ, শিশুসহ ছিলো ২২জন এবং দেশি পর্যটক ৬ হাজার ৪১৯ জন। ছোট-বড় যানবাহন ছিলো ৩৪৭ টি।’
এছাড়াও জেলার চা বাগান বেষ্ঠিত এলাকা শ্রীমঙ্গল, বাইক্কাবিল হাওর, হাকালুকি হাওর, কাউয়াদিঘী হাওর, মাধবকুন্ড ইকো পার্ক, মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাতসহ অসংখ্যা পর্যটন স্পট রয়েছে। এসব পর্যটনকে আকর্ষণীয় করা হলেও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি প্রায় ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা পাঁচ তারকামানের হোটেলসহ ৭০ টিসহ জেলায় শতাধিক হোটেল রিসোর্ট রয়েছে।
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সভাপতি সেলিম আহমদ জানান, এই তিনদিনে মৌলভীবাজার জেলায় প্রায় ২৫-৩০ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। শুক্র ও শনিবার, রবিবার সবকটি হোটেল-রিসোর্ট শতভাগ বুকিং ছিলো। পর্যটকের থাকা-খাওয়া, পরিবহন, হকারসহ কেনাকাটা সবমিলিয়ে ৫ কোটি টাকা আয় করতে পেরেছে। বিশেষ করে পুরো শ্রীমঙ্গল উপজেলায় পাঁচ তারকা মানের রিসোর্টসহ সবাই ভালো ব্যবসা করেছে। ধারণা ছিলো অন্তত ২০ কোটি টাকা আয় হবে।’
পর্যটনখাতে বাঁধা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে সব পর্যটন স্পট রয়েছে সেগুলোকে আরো দৃষ্টিনন্দন করা এবং একই দৃশ্য বার বার পর্যটকরা দেখতে না হয় সেজন্য নতুনত্ব সৃষ্টি করা জরুরি।’
তবে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পর্যটকের সমাগম ঘটলেও ট্যুরিষ্ট পুলিশ ব্যতিত আর কোন সংস্থার তেমন কোন তৎপরতা ছিল না। এছাড়া বিভিন্ন চা বাগানসহ দর্শনীয় স্থানে সরু সড়ক থাকায় দুটি গাড়ি চলাচলে মারাত্মক বিঘœ ঘটে। এতে পর্যটকরা কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তিনি মাধবপুর লেকের রাস্তা এবং শ্রীমঙ্গল ডলুবাড়ি হয়ে নূরজাহানের চা বাগানের সড়কটি প্রশস্ত করার দাবি তুলেন।
পর্যটন সেলের দায়িত্বরত মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো.বেলায়েত হোসেনের কাছে পর্যটন খাতে কি পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার এধরণের কোন পরিসংখ্যান নাই, গত তিনদিনে মৌলভীবাজার জেলার পর্যটনখাত থেকে আয় হয়েছে। তবে তিনি খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানাবেন বলে আশ^স্ত করেন।’
উল্লেখ্য যে, সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র, শনিবারের সাথে খ্রিস্টানদের বড় দিন উপলক্ষে বাড়তি রবিবারের ছুটি থাকায় সারা দেশের সকল পর্যটক এলাকার ন্যায় চায়ের রাজ্যেও পর্যটকের ঢল নামে। বেসরকারী উদ্যোগে গড়ে উঠা এখানে পাঁচ তারকা মানের রিসোর্টসহ শতাধিক হোটেল রিসোর্টগুলো ছিল পর্যটকে ভিড় ছিল। এছাড়া সবুজ গালিচা চা বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, হরিনছড়া গলফমাঠ, পরিযায়ী পাখি ও বাইক্কা বিল হাইল হাওর, বধ্যভ‚মি-৭১সহ সকল দর্শনীয় স্থানগুলোতে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটে। বিশেষ করে বিভিন্ন এলাকা থেকে পিকনিকে বাস ভাড়া নিয়ে ডে ট্যুরে আসা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীসহ কর্পোরেট ট্যুরিস্টদের আগমনে মূখর হয়ে উঠে পুরো জেলা।
হোটেল মালিক সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করছেন, এবারের পুরো শীত মৌসুমে’ই পর্যটকের আগমন থাকবে। কারন এখানে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভ‚মি। রাজধানী ঢাকা থেকে খুব কাছের এবং নিরিবিলি পরিবেশে অবকাশ কাটানোর জন্য শ্রীমঙ্গল অতুলনীয়।