রেকর্ড পরিমাণ চালের মজুদ

15

কাজিরবাজার ডেস্ক :
শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এবার বোরো মৌসুমে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার শতভাগেরও বেশি অর্জিত হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ১০ লাখ মেট্রিক টন থাকলেও এবার সরকার ১১ লাখ ৭৪ হাজার ৯৮০ মেট্রিক চাল সংগ্রহ করেছে। পাশাপাশি রেকর্ড পরিমাণ চালের মজুদও গড়ে উঠেছে। বর্তমানে সরকারের মজুদের পরিমাণ ১৯ লাখ ৯৬ হাজার ২১৬ মেট্রিক টন। যা মজুদের দিক দিয়ে সরকারকে স্বস্তিদায়ক অবস্থায় নিয়ে এসেছে। এছাড়া চাল ও গম মিলিয়ে আরও প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মেট্রিক টন আমদানির প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
আরও ৫ লাখ টন গম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। তাতে সরকারের মজুদ সর্বকালের রেকর্ডে পরিণত হবে। এদিকে বেসরকারীভাবে বিদেশ থেকে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। এসবের কারণে দেশের বাজারে চালের দাম কমতে শুরু করেছে।
এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আমরা দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। এ লক্ষ্যে খাদ্য মজুদের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ইতোমধ্যে আমরা শতভাগ সংগ্রহ করেছি। টার্গেট পূরণের পর আগ্রহীদের নতুন করে আবার বরাদ্দ দেয়া হয়। তাও আমরা সংগ্রহ করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ পরিমাণ চালের মজুদ রয়েছে। তারপরও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য চাল আমদানি বাড়াতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে দেশে আমন আবাদ কিছুটা ব্যাহত হতে পারে। শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বেই খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বোরো মৌসুমে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগের বেশি অর্জিত হয়েছে। বোরো চাল সংগ্রহ অভিযানের শেষ দিন ছিল ৩১ আগস্ট বুধবার। তার আগেই মন্ত্রণালয় শতভাগের বেশি চাল সংগ্রহে সফলতা দেখিয়েছে।
খাদ্যসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, এবার চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১০ লাখ মেট্রিক টন। ৩১ আগস্ট লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯৮০ মেট্রিক টন চাল বেশি সংগৃহীত হয়েছে। এছাড়া ধান সংগ্রহ করা হয় ২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৭৪ মেট্রিক টন। ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ছিল সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন। এটি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি।
তিনি বলেন, সরকারীভাবে প্রায় সাড়ে আট লাখ মেট্রিক টন চাল-গম আমদানির পথে রয়েছে। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এগুলো চলে আসবে। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে ৫ লাখ মেট্রিক টন গম, ভিয়েতনাম থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ভারত থেকে ১ লাখ মেট্রিক টন চাল আনা হচ্ছে। সে হিসেবে আগামী দুই-এক মাসের মধ্যে সরকারের মজুদে যোগ হবে আরও প্রায় সাড়ে আট লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য।
এছাড়া সম্প্রতি ৩৮০টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল বেসরকারীভাবে আমদানির অনুমতি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। বেসরকারীভাবে এই চাল আসা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার শুল্কমুক্ত চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে।
দেশে বর্তমানে সর্বোচ্চ পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট মজুদের পরিমাণ ১৯ লাখ ৯৬ হাজার ২১৬ মেট্রিক টন। চাল মজুদের পরিমাণ ১৮ লাখ ৫৫ হাজার ৮৩৩ মেট্রিক টন। এটি এ যাবত কালের চালের সর্বোচ্চ মজুদ। এর আগে চালের মজুদ সর্বোচ্চ ছিল প্রায় ১৭ লাখ মেট্রিক টন।
চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত ১২ আগস্ট চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে এনবিআর। এখন চাল শুল্কমুক্ত আমদানির সুযোগ দিয়েছে সরকার। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে আমদানির চাল স্থলবন্দরসমূহ দিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে।
পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দামও কমতে শুরু করেছে। এর আগে দেশে রেকর্ড পরিমাণ খাদ্য মজুদ গড়ে ওঠে ২০১৯ সালে। তখন আগের রেকর্ডের চেয়ে তিন মেট্রিক টনেরও বেশি খাদ্যশস্য মজুদ ছিল। চাল ও গম মিলে সরকারের খাদ্যগুদামে মজুদ ছিল ১৯ লাখ ৮ হাজার ৬৮৮ মেট্রিক টন।