সুইস ব্যাংকের পাশাপাশি বিদেশে অর্থপাচারের তথ্যও চায় সরকার

3

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কারিগরি সহযোগিতার পাশাপাশি কূটনৈতিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুইস ব্যাংকের পাশাপাশি অবৈধভাবে অন্যান্য দেশে অর্থপাচারের তথ্যও জানতে চায় সরকার।
যেসব দেশে বেশি অর্থপাচার হয় বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, সেসব দেশের সঙ্গে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিট্যান্স (এমএলএ) চুক্তির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চায় সরকার। একই সঙ্গে নিজেদের সক্ষমতাও বাড়ানো হবে।
গত সপ্তাহে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুইজারল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশে পাচারকৃত অর্থ সংক্রান্ত তথ্যাদি যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করার বিষয়ে একটি আন্তমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে সভায় অংশগ্রহণ করেন স্বরাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, ব্যাংক, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।
মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা জানান, সুইস ব্যাংক থেকে মোট জামানতের একটি সংখ্যা পাওয়া গেলেও অন্যান্য দেশে পাচার হওয়া অর্থের তথ্য সংগ্রহে জটিলতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, হংকং, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্যান্য দেশ থেকে অর্থপাচারের তথ্য সংগ্রহের উপায় বের করার বিষয়ে কাজ করা হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
এমএলএ চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের সরকার কূটনৈতিকভাবে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে এবং এটি সব জায়গায় ব্যবহারও করা যায়।
এদিকে সুইস ব্যাংকে অর্থ রাখা বাংলাদেশিদের তথ্য জানানোর বিষয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ডের বক্তব্য ভুল ছিল বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে সুইস এম্বাসি। এ বিষয়ে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে বলেও একটি সূত্রে জানা গেছে।
ওই প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সুইস ব্যাংকের তথ্য চাওয়া নিয়ে বক্তব্য ভুল ছিল বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে সুইস এম্বাসি।
এর আগে গত ১০ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড বলেছিলেন, ‘সুইস ব্যাংকে জমা রাখা অর্থের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির জন্য তথ্য চায়নি। সুইস ব্যাংকের ত্রুটি সংশোধনে সুইজারল্যান্ড কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে আমি আপনাদের জানাতে চাই, সুইজারল্যান্ডে কালো টাকা রাখার কোনো নিরাপদ ক্ষেত্র নয়।’
অর্থপাচার, সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন ও সংশ্লিষ্ট অপরাধ প্রতিরোধের জন্য কাজ করে ‘এগমন্ট গ্রুপ’ নামের একটি সংগঠন। দেড় শর বেশি সদস্যের এই সংগঠনে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট সদস্যপদ লাভ করে ২০১৩ সালে।
টেকনিক্যাল স্তরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাধীন সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করে। তবে এগমন্ট গ্রুপের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য অন্য কাউকে জানানোর ক্ষেত্রে আইনি বাধা রয়েছে এবং এ তথ্য আদালতে উপস্থাপন করা যায় না।
যে ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হচ্ছে, তার নাম, যে ব্যাংকে অর্থ গচ্ছিত আছে সেটির নাম, অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং ওই অর্থ যে অবৈধভাবে অর্জিত হয়েছে, তার প্রাথমিক প্রমাণসহ আবেদন করা হলে, অর্থ রাখা দেশটি তা বিবেচনায় নিয়ে তথ্য দিতেও পারে, আবার নাও দিতে পারে।