টিপ নিয়ে ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্ট দেয়ায় সিলেটের সেই পুলিশ পরিদর্শককে রংপুরে বদলি

3

স্টাফ রিপোর্টার :
টিপ নিয়ে ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্ট দেয়ায় সিলেট জেলা পুলিশের পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে রংপুরে বদলি করা হয়েছে। মঙ্গলবার পুলিশ হেড কোয়ার্টারের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (আইজি) ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী সাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই বদলির আদেশ জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত জনস্বার্থে বদলি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
ফেসববুকে বিতর্কিত পোস্ট দেয়ায় সোমবার লিয়াতক আলীকে ক্লোজ করেন সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. ফরিদ উদ্দিন। সেই সঙ্গে স্ট্যাটাসের বিষয়টি তদন্তের জন্য ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয় এবং স্ট্যাটাসের বিষয়টি সদর দপ্তরকে অবহিত করা হয়। লিয়াকত আলী সিলেট জেলা পুলিশের আদালত পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সোমবার তাকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
টিপ পরায় কলেজ শিক্ষককে এক পুলিশ সদস্যের হেনস্তার অভিযোগ নিয়ে দেশজুড়ে যখন তোলপাড় হচ্ছিল ঠিক সেই সময় পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকতের ওই ফেসবুক স্ট্যাটাস সমালোচনা সৃষ্টি করে।
কলেজ শিক্ষককে হয়রানির পর ফেসবুকজুড়ে নারীদের পাশাপাশি অনেক পুরুষও কপালে টিপ পরে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন লিয়াকত। যদিও পরে তিনি সেটি মুছে দেন। তার আগেই সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে, চলছে সমালোচনা।
তিনি সোমবার ওই স্ট্যাটাসে লিখেছেন (মূল পোস্টের বানান অপরিবর্তিত), ‘টিপ নিয়ে নারীকে হয়রানীর করার প্রতিবাদে অনেক পুরুষ নিজেরাই কপালে টিপ লাগাইয়া প্রতিবাদ জানাচ্ছে। কিন্তু আমি ভবিষ্যত ভাবনায় শংকিত। বিভিন্ন শহরে অনেক নারীরা যেসব খোলামেলা পোষাক পড়ে চলাফেরা করেন – তারমধ্যে অনেকেরই ব্রায়ের উপরে দিকে প্রায় অর্ধেক আনকভার থাকে। পাতলা কাপড়ের কারশে বাকী অর্ধেকও দৃশ্যমান থাকে। এখন যদি কোনো পুরুষ এইভাবে ব্রা পড়ার কারণে কোনো নারীকে হয়রানী করে তবে কি তখনও আজকে কপালে টিপ লাগানো প্রতিবাদকারী পুরুষগণ একইভাবে ব্রা পড়ে প্রতিবাদ করবেন???’ এই স্ট্যাটাসের ব্যাপারে জানতে চাইলে সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী বলেন, ওই স্ট্যাটাস আমি ডিলিট করে দিয়েছি। যেটা ডিলিট করে দিয়েছি, যেটার অস্তিত্বই নাই, সেটা নিয়ে আমি কথা বলব না। পুরুষ হয়ে টিপ পরে প্রতিবাদ জানানোর ভাষাটা আমার কাছে সঠিক মনে হয়নি। সেটা নিয়ে লিখেছি। স্ট্যাটাস কেন ডিলিট করেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে লিয়াকত বলেন, আমার ভালো লাগছিল তাই দিয়েছিলাম। পরে ভালো লাগে নাই, তাই সরিয়ে দিয়েছি। তাছাড়া ওটা আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। প্রাতিষ্ঠানিক কিছু না।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদুল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, একজন পুলিশ সদস্যের এমন মন্তব্য খুবই আপত্তিকর ও মানহানিকর। তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত। আমি আশা করব, কর্তৃপক্ষ দ্রুত তাকে অপসারণ করবে।
পুলিশের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর একজন সদস্য ফেসবুকে এ ধরনের মন্তব্য করতে পারেন কি না- সোমবার সে প্রশ্ন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) লুৎফুরকে।
তিনি বলেন, পুলিশ প্রবিধানে ফেসবুক নিয়ে কিছু নেই। কারণ যখন প্রবিধান তৈরি হয় তখন ফেসবুক ছিল না। তবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া ও মন্তব্য করা নিয়ে একটি গাইডলাইন রয়েছে। লিয়াকত আলীল স্ট্যাটাসে ওই গাইডলাইনের ব্যৎয় ঘটেছে কি না তা আমরা যাচাইবাছাই করছি।
টিপ পরায় গত শনিবার রাজধানীতে হেনস্তার শিকার হন তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক ড. লতা সমাদ্দার। এ ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল তারেককে সোমবার বরখাস্ত করা হয়েছে।