মরার উপর খাঁড়ার ঘা

4

জল্পনা-কল্পনাসহ বাংলাদেশ এ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশনের উদ্যোগে গণশুনানি চলছিল কয়েকদিন থেকেই। ক্যাবসহ ভোক্তাদের তরফ থেকে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর দাবিও ছিল। তবু শেষ পর্যন্ত বাড়ল গ্যাসের দাম। ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম বেড়েছে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ। বাসার রান্নার চুলায় ব্যবহৃত দুই চুলার জন্য জুনের ১ তারিখ থেকে দিতে হবে ১ হাজার ৮০ টাকা। যা আগে ছিল ৯৭৫ টাকা। আর এক চুলার জন্য দিতে হবে ৯৯০ টাকা। যা আগে ছিল ৯২৫ টাকা। বিভিন্ন রকম শিল্পকারখানাসহ মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প এবং চা-বাগানগুলোতেও আনুপাতিক হারে বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের দাম। এই মূল্যবৃদ্ধিকে যৌক্তিক বলে স্বাগত জানিয়েছে দেশের শীর্ষ বণিক সমিতি এফবিসিসিআই এবং বাংলাদেশ টেক্সাইল মিলস এ্যাসোশিয়েশন। বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাস সংযোগের দাম বাড়ানোর ফলে রান্নার খরচ বৃদ্ধির চাপ গিয়ে পড়বে দৈনন্দিন আহার্য তালিকায়। কেননা, ইতোমধ্যে সব জিনিসের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। সারকারখানা ও শিল্পের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিতে এর দায়ও বহন করতে হবে ভোক্তাশ্রেণী বিশেষ করে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, গরিব মানুষ ও কৃষকদের। যে বা যারা বাসাবাড়িতে প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করেন তাদের প্রতি মাসে বাড়তি খরচ করতে হবে প্রায় ৪৩ শতাংশ। তবে পরিবহন খাতে পণ্য ও যাত্রী পরিষেবার খরচ স্থিতিশীল রাখতে সিএনজির দাম বাড়ানো হয়নি। এটি প্রতি ইউনিট আগের মতো ৩৫ টাকাই থাকছে। বিইআরসি বলেছে, জনজীবনে প্রভাব বিবেচনা করে নেয়া হয়েছে সিদ্ধান্ত। দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তারা বলেছে, মূলত এলএনজি আমদানি করতে গিয়েই এই মূল্যবৃদ্ধি। এলএনজি আমদানি করা না হলে ব্যাহত হবে গ্যাসের সরবরাহ। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্তকে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা না বলে বোঝার উপর শাকের আঁটি বলাই অধিকতর যুক্তিসঙ্গত হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে দফায় দফায় জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিসহ প্রায় সব নিত্যভোগ্য পণ্যের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। বাড়ছে ডলারের দাম। কমছে টাকার দাম। কবে নাগাদ পরিস্থিতি শান্ত স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল হবে এবং গতি আসবে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে তা বলতে পারে না কেউ। বাংলাদেশ এই পরিস্থিতির বাইরে থাকবে সেটিও ভাবা হবে অর্বাচীনতা। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির অভিঘাত পড়বে বাংলাদেশেও, সেটাই স্বাভাবিক ও সঙ্গত। তবে সেটা যেন যথাসম্ভব যৌক্তিক ও সহনশীল হয় এবং মানুষের দুঃখ, কষ্ট ও দুর্ভোগ না বাড়ায় সেদিকে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে অবশ্যই।