দুর্ভোগের শেষ নেই ওসমানীনগর ও নবীগঞ্জের দুই উপজেলার ১০ গ্রামের মানুষের

13
ওসমানীনগরের ইসলামপুর ও নবীগঞ্জের গালিমপুর গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কালনী নদীর উপর অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত হেলে পড়া ব্রিজের উপর বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করে এভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পারাপার হচ্ছে দুই উপজেলার ১০ গ্রামের বাসিন্দারা।

শিপন আহমদ ওসমানীনগর থেকে :
দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ও সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সিলেটের ওসমানীনগর ও হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ১৫ গ্রামের বাসিন্দারা। শুকনো মৌসুমে কোনো রকম পায়ে হেঁটে চলাচল করা গেলেও বর্ষায় নৌকাই হচ্ছে একমাত্র ভরসা। ফলে দুই উপজেলার স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ, অসুস্থ রোগীসহ নানা দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করছেন ১৫ সহস্রাধিক বাসিন্দাসহ পথচারীরা। দক্ষিণ কালনিচর-ইসলামপুর পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তা পাকা করণের দাবি জানিয়ে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে দক্ষিণ কালনিচর গ্রামের হাকীম মাওলানা আনছার আহমদ সিদ্দেকী ও মো: শাহাজান আলী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বরাবরে লিখিত আবেদন করলে কোনো কাজ হচ্ছে না। পরবর্তীতে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এর ডিও লেটার সম্মেলিত রাস্তা পাকাকরণ ও কালনি নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণে গ্রামবাসীর পক্ষে হাকীম মাওলানা আনছার আহমদ সিদ্দেকী আবেদন করলেও কাগজ চালাচালিতে তা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আসার পর হয়ে আছে ফাইল বন্দি। বিগত বিএনপি সরকারের আমলে দুই উপজেলার সংযোগ সড়ক কালনি নদীর উপর অপরিকল্পিতভাবে একটি ব্রিজ নির্র্মাণ হলেও নির্মাণ কাজ শেষের পূর্বেই হেলে পরে ব্রিজটি। দীর্ঘদিন অকেজো অবস্থায় থাকার পর বিকল্প রাস্তা না থাকায় বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করে জরাজীর্ণ ওই ব্রিজ দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন দুই উপজেলার বাসিন্দারা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ওসমানীনগর উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের কালনিচর-ইসলামপুর পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা। সেই রাস্তা ধরেই ইসলামপুর ও নবীগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর গ্রামের মধ্যেবর্তী স্থান দিয়েই প্রবাহিত কালনি নদী। দুই উপজেলার সীমানা অনেকটাই কালনি নদী ভাগ করে দিয়েছে। দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী কালনি নদীতে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে প্রয়োজনের তুলনায় ছোট ক্রুটিপূর্ণ একটি ব্রিজ নির্মাণ করে দায় সাড়ে কর্তপক্ষ। অপরিকল্পিত ভাবে ছোট এই ব্রিজটি নির্মাণ ও দুই পাশে মাটি ভরাট না করায় নদীর মধ্যখানে নির্মিত সেতুটি পানির প্রভাবে ধিরে ধিরে এক পাশে হেলে পড়ে। ফলে যানবাহন তো দূরের কথা পায়ে হেঁটেও সেতু পারাপার অসম্ভব হয়ে উঠায় ব্রিজের দুই দিকে বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করছেন স্থানীয়রা।
দক্ষিণ কালনিচর গ্রামের হাকীম মাওলানা আনছার আহমদ সিদ্দেকী, মাধবপুর গ্রামের মাষ্টার আব্দুস ছত্তার, দক্ষিণ কালনিচর গ্রামের মাহবুবুল আলম, ইসলামপুরের মুক্তার মিয়া গালিমপুর গ্রামের আব্দুল কাইয়ুমসহ গ্রামবাসী জানান, ওসমানীনগরের দক্ষিণ কালনিচর, ইসলামপুর, সুরিকোনা, লামাতাজপুর, তাজপুর, নবীগঞ্জ উপজেলার গালিমপুর, মাধবপুর, আটঘর, নোয়াগাঁওসহ পাশ্ববর্তী প্রায় ১৫ গ্রামের বাসিন্দাসহ শতশত স্কুলগামী শিক্ষার্থী স্বাধীনতার পর থেকে দুই কিলোমিটার পাকারাস্তা ও কালনি নদীর উপর একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগের স্বীকার হচ্ছেন। দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় অবহেলিত এই এলাকার উন্নয়নে দায়সারাভাব প্রকাশ করে যাচ্ছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা।এ বিষয়ে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন নিবেদন কারার পরও তা মাপ-যোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। অবহেলিত এলাকার দীর্ঘদিনের দাবি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রক্রিয়াধীন থাকা কালনি নদীর উপর ১৩০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটি দ্রুত বাস্তবায়ন ও দক্ষিণ কালনিচর-ইসলামপুর দুই কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ হলে দুই উপজেলার শতশত স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ প্রায় ১৫ গ্রামের বাসিন্দারের দুর্ভোগের অবসান হবে।
উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী এস এম আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দক্ষিণ কালনিচর-ইসলামপুর এলাকার দুই কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণসহ কালনি নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ব্রিজটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।