মৌ’বাজারে খরার কারণে সেচের পানি সংকটে বোরো আবাদকৃত জমি শুকিয়ে চৌচির

3

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজার জেলায় দীর্ঘ খরায় ও সেচের পানি সংকটে বোরো আবাদকৃত জমিগুলো শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে।
অন্যদিকে অনাবৃষ্টি ও দীর্ঘ মেয়াদি খরায় অধিকাংশই পানির উৎসস্থল খালের পানি শুকিয়ে যাওযায় প্রান্তিক কৃষকদের সেচ পাম্পও বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি এক ফসলা বৃষ্টি হলেও এখনও চৌচির বিভিন্ন হাওরের উপরিভাগ জমিগুলো। এতে জেলায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর ধান নষ্ট হওয়ার আশংকা করছেন কৃষকরা।
হাকালুকি হাওরের তীরবর্তী ভূকশিমইল ইউনিয়নের বোরো চাষি রফিজ মিয়া, রহিম মিয়া, করিম মিয়া জানান হাওরের বিল এলাকায় ধান ভালো হলেও পানিশূন্যতায় উপরিভাগের ধানগাছ মরে যাচ্ছে। তাদের মতো একই অবস্থা জেলার অন্যান্য হাওর তীরবর্তী এলাকার বোরো চাষিদের।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর হাওর অঞ্চলের উপরি ভাগে ২৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর বোরো ধান আবাদ হয়েছে।
সদর উপজেলার কৃষক পাবুল মিয়া জানান এ বছর ৩০ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। ধান বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করবো। খরার কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছি। তবুও হাল ছাড়ছি না। কখন খালে পানি আসবে আর সেচ পাম্প চালু করে জমিতে পানি দিবেন সে চিন্তায় রাত জেগে থাকেন।
ওই এলাকার গোবিন্দ সূত্রধর, ১২ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। নিজের ১২ বিঘা জমি সহ অন্যান্য কৃষকের ৫০-৬০ বিঘা জমিতে পাম্প মেশিন চালিয়ে সেচ দিতেন। সেচ কার্যক্রম চালাতে একটি বটগাছের নীচে অস্থায়ী শেড বানিয়ে রাত্রি যাপন করতেন।
কৃষক শফিক মিয়া. বশির মিয়া, পংকী মিয়া, রাহেলা বেগম নিতাই দাসসহ ওই এলাকায় অনেকের বোরো ধানের জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। তারা জানান, পাহাড় থেকে নেমে আসা কুদালী ছড়া ও ঢেউয়া ছড়ার দুইপাশে এ বছর বোরো ধান আবাদ হয়েছে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। চারা লাগানের পর ছড়া অথবা খাল থেকে পানি উত্তোলন করে জমিতে সেচ দিয়ে আসছেন কৃষকরা। দীর্ঘ মেয়াদি খরার কারণে ছড়া এবং খালগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় সেচ পাম্পও বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় কৃষকদের দাবি মনু নদী প্রকল্প থেকে সেচ ব্যবস্থা চালু হলে তাদের পানি সংকট থাকতো না। তাছাড়া আরও অধিক পরিমাণ অনাবাদি জায়গাও চাষাবাদের আওতায় আসত।
একই অবস্থা জেলার হাকালুকি, কাউয়াদিঘি, হাইল হাওর ও কমলগঞ্জের আদমপুর, মাধবপুর, ইসলামপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায়।
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী লৎফুল বারী জানান, চলতি বছর বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৬ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি। ধানের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর বোরো ধানের আবাদ বেড়ে ৫৭ হাজার ৭৫০ হেক্টর। গত কয়েকদিন আগে বৃষ্টি হয়েছে আবাদকৃত বোরো ধানের সহায়ক কিছুটা হয়েছে। এ বছর পোকা মাকড়ের আক্রমন নেই। মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা স্থানীয় কৃষকদের ধানের পরিচর্যায় পরামর্শ অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, কুদালী ছড়ার ৫ কিলোমিটার খনন কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আমাদের স্লইচ গেইট নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। স্লইচ গেইট দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে সেচ প্রকল্পের ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে ওই এলাকায় আরও ৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ সম্ভব। কুদালী ছড়াকে সেচ প্রকল্পের আওতায় নেয়ার জন্য একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে।