আন্তর্জাতিক সুখী দিবস আজ

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
কোন মানুষ অল্পতেই সুখী। কেউ অর্থের ভান্ডারে বসে সুখী (!)। কেউ অঢেল অর্থে সুখী হয়েও মনে করে আরও চাই। কেউ সীমিত সাধ্যের মধ্যে যা আছে তাতেই সুখী। সুখ কি! সুখী হওয়ার উপায় কি! সুখ কতটা ভাগাভাগি করে নেয়া যায়। এমন সব বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে জাতিসংঘ প্রতি বছর ২০ মার্চকে আন্তর্জাতিক সুখী দিবস ঘোষণা করে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে। পরবর্তী বছর (২০১৩) থেকে প্রতি বছর দিবসটি পালন করছে ১৯৩টি দেশ। দশম বর্ষে (চলতি বছর ২০২২) আন্তর্জাতিক সুখী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘কিপ কাম, স্টে ওয়াইজ এ্যান্ড বি কাইন্ড’। ভাবার্থ করলে দাঁড়ায় নিজেকে শান্ত ও স্থির রাখো, বিচক্ষণ ও জ্ঞানী হও এবং হৃদয়বান হও।
জাতিসংঘ ঘোষিত অনেক দিবস ঘটা করে আসে অনেক দিবস আড়ালেই চলে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে পৃথিবীর মানুষকে বাঁচাতে ২৪/৭ (সপ্তাহের ৭ দিনই ২৪ ঘণ্টা) গবেষণা করে টিকা আবিষ্কার করিয়েছে। বাংলাদেশ দ্রুত টিকা আমদানি করে দেশের মানুষকে বাঁচিয়ে সুখ এনে দিয়েছে। বাংলাদেশ ভ্যাকসিন প্রদানে অন্যতম দেশ।
সুখের সংজ্ঞা কি! কোন মনস্তাত্ত্বিক গবেষণা করেও সুখের প্রকৃত সংজ্ঞা দিতে পারেননি। বলেছেন সুখ খুঁজে নিতে হয়-সুখ লুকিয়ে আছে নিজের মধ্যে, নিজের কর্মের মধ্যে। এমন একটি মনস্তাত্ত্বিক জটিল বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে জাতিসংঘ ২০১২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিশেষ অধিবেশনে প্রতিবছর ২০ মার্চকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে অব হ্যাপিনেস’ ঘোষণা করে। জাতিসংঘের সদস্য ১৯৩টি দেশ সম্মতি দেয়। তৎকালীন মহাসচিব বান কি মুন দিবসের ঘোষণা দেন। পরবর্তী বছর (২০১৩) দিবসটি প্রথম পালিত হয়। এই দিনে দক্ষিণ আফ্রিকায় নেতা নেলসন মেন্ডেলার নাতি এনডাবা মেন্ডেলা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের কন্যা চেলসি বিশ্বের সকল মানুষের সুখের জন্য প্রার্থনা করেন। তারা বিশ্বকে সুখী রাখার উপায় বা ইস্যু নিয়ে প্রতিটি দেশকে কাজ করার আহ্বান জানান।
আন্তর্জাতিক সুখী দিবসটির ধারণা প্রথম দেন বিশ্বের অন্যতম ফিলানথ্রপিস্ট (মানবহিতৈষী) জাতিসংঘের বিশেষ উপদেষ্টা জায়মি ইলিয়েন। ভূমিষ্ঠের পর তাকে ফেলে দেয়া হয় কলকাতার পথের ধারে। দৃষ্টিতে আসে মাদার তেরেসার। কোলে তুলে নেন। এক পর্যায়ে দত্তক নেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিঙ্গেল মাদার এ্যানা বিলি ইলিয়েন। নাম দেন জায়ামী ইলিয়েন। উচ্চ শিক্ষা লাভ করে মানব প্রেমিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। নিজেকে দিয়ে বুঝতে পারেন জীবনে সুখের প্রয়োজন কতটা। বিষয়টি জাতিসংঘে সুখী দিবস করার প্রস্তাব করার সঙ্গেই কণ্ঠভোটে অনুমোদিত হয়।
বিশ্ব সুখী দিবসের গত দশ বছরের পর্যালোচনায় বিদেশী একটি বার্তা সংস্থা জানায়, সুখী দিবস হোঁচট খায় কোভিড-১৯ কালে ২০২০ সালে। সেই থেকে টানা দু’বছর (এখন পর্যন্ত) কোভিড-১৯ এর হাত থেকে রক্ষা পেয়ে সুখী থাকতে বিশ্বের সকল দেশের গলদঘর্ম এখনও আছে। ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর করোনা ধীরে ধীরে পালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যভাগে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ ওই দুই দেশের সুখ কেড়ে নিয়েছে। সুখ নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছে বড় দেশগুলোর মধ্যে। অবশ্য বাংলাদেশের মানুষ অল্পতেই তুষ্ট। সামান্য সুখ ভাগাভাগি কিরে নিতে পারে বাঙালী জাতি। আন্তর্জাতিক সুখী দিবসের ডেফিনেশনে জাতিসংঘ বলেছে : দিবসের মূল উদ্দেশ্য সুখে থাকা। ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টেকসই উন্নয়ন দারিদ্র দূরীকরণ এবং পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষের সুখ নিশ্চিত করতে দিবসটি পালন করা হয়।
এবারের বিশ্ব সুখী দিবসে কয়েকটি দেশ জাতিসংঘের কাছে প্রস্তাব রেখেছে শুধু পৃথিবী নয় মহাকাশের গ্রহ কৃত্রিম উপগ্রহ যেন শান্ত থাকে সেই ব্যবস্থা করা দরকার। বিজ্ঞানীরা যখন মহাকাশ পর্যন্ত গেছে সেই মহাকাশ যেন শান্ত থাকে। দশম আন্তর্জাতিক বিশ্ব সুখী দিবসের রিপোর্টে সবচেয়ে বেশি সুখী দেশ ফিনল্যান্ড। পঞ্চম বারের মতো এই দেশটি বিশ্ব সুখী দিবসের আন্তর্জাতিক খেতাব পেয়েছে। প্রথম থেকে দশম স্থানগুলোর মধ্যে অন্য দেশগুলোর মধ্যে আছে ডেনমার্ক, নরওয়ে, আইসল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, নেদারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, নিউজিল্যান্ড ও ইসরাইল। গত বছর পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া প্রথম দশের মধ্যে ছিল এবার ছিটকে পড়েছে।