কিয়েভের আরও কাছে রুশ বাহিনী ॥ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করতে চাই না- বাইডেন

5

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দ্রুততম সময়ে কিয়েভ দখলের লক্ষ্য নিয়ে শহরটির আশপাশের এলাকায় হামলার তীব্রতা আরও বাড়িয়েছে রুশ বাহিনী। যুদ্ধের ১৭তম দিন শনিবার কিয়েভ, লাভিভ, খারকিভ, ইরপিন, সুমি ও চেরকাসিস শহরে আক্রমণ অব্যাহত রাখে রুশ সৈন্যরা। ইউক্রেনের মারিয়াপোলে ঐতিহাসিক একটি মসজিদও রুশ গোলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মসজিদটিতে অন্তত ৮০ জন আশ্রয় নেন।
ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ জানায়, মারিয়াপোলে তুরস্কের সাবেক শাসক সুলতান সুলেমান এবং তার স্ত্রী হুররাম সুলতানের নামে নির্মিত জাঁকজমকপূর্ণ মসজিদটি রুশ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে তুর্কী নাগরিকসহ ৮০ জনের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এবং শিশু আশ্রয় নিয়েছিল। তবে আশ্রয় নেয়াদের কেউ আহত অথবা নিহত হয়েছেন কিনা তা জানা যায়নি। দীর্ঘদিন অবরুদ্ধ কিয়েভে খাবারসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের মজুদ ফুরিয়ে আসছে বলে খবরে বলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারী মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সার টেকনোলজিস প্রকাশিত স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, কিয়েভের দিকে এগোতে থাকা বিশাল রুশ সাঁজোয়া বহর শনিবার শহরটির আরও কাছে চলে গেছে। মূল আক্রমণের জন্য বহরটি কিয়েভের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শহরগুলোতে গতিবিধি বাড়িয়েছে। ফলে শনিবার সকাল থেকেই কিয়েভেবাসীকে সতর্ক করতে সাইরেন বাজানো হয়। ওদিকে ইউক্রেন যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে আত্মসমর্পণের পরামর্শ দিয়েছিলেন ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট। শনিবার প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরাইল ইউক্রেনের মিত্র হিসেবে পরিচিত। তবুও ইউক্রেনে রুশ হামলার সময় ইসরাইল জোরালো ভূমিকা নেয়নি। এখন শোনা যাচ্ছে, ইউক্রেনকে আত্মসমর্পণের পরামর্শ দিয়েছিল ইসরাইল। তবে জেলেনস্কি তা প্রত্যাখ্যান করেন। খবর দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি, আলজাজিরা ও ইন্টারফ্যাক্স অনলাইনের।
রুশ বাহিনী কিয়েভে পুনরায় গোলাবর্ষণ জোরদার করার পর ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলছেন, কিয়েভ ‘লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। তারা বলছেন, ইউক্রেনের প্রতিটি রাস্তা ও বাড়িকে দুর্গে পরিণত করা হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করে বলেন, দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে ‘একটি নজিরবিহীন ট্র্যাজেডি’ শুরু হতে যাচ্ছে।
এদিকে ইউক্রেনে সেনা না পাঠানোর বিষয়টি ফের স্পষ্ট করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, আমরা ইউক্রেনে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করতে চাই না। তবে ন্যাটোর সীমারেখার প্রতিটি ইঞ্চি রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র পূর্ণ সমর্থন দেবে। ফিলাডেলফিয়ায় হাউস অব ডেমোক্র্যাটিক ককাস সম্মেলনে স্থানীয় সময় শুক্রবার বাইডেন বলেন, রুশ বাহিনীর মোকাবেলায় ইউক্রেন যেন অস্ত্র পায় সেটা নিশ্চিত করব আমরা। ইউক্রেনীয়দের জীবন বাঁচাতে খাবার ও অর্থ সাহায্য পাঠানোর কথাও বলেন তিনি। এ সময় ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন দেয়ার জন্য হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভদের ধন্যবাদ জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, আমি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে ঘণ্টাখানেক কথা বলেছি। তার সঙ্গে আমার প্রায় প্রতিদিনই কথা হয়।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শনিবার জানায়, কিয়েভের কেন্দ্রস্থল থেকে রুশ বাহিনী এখনও কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। খারকিভ, চেরনিহিভ, সুমি, ও মারিয়াপোল ঘিরে রেখে অবিরাম বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে রুশরা। মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার জানায়, কিয়েভের দিকে এগোতে থাকা রুশ সাঁজোয়া বহর কিছুদিন স্থবির ছিল। এ সময় রসদ সরবরাহ ও ফ্রন্টলাইন ইউনিটকে পুনরায় সজ্জিত করেছে রাশিয়া।
ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, চলমান সংঘাতে একটি কৌশলগত টার্নিং পয়েন্টে পৌঁছেছে তার দেশ। তিনি বলেন, স্বাধীন ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড টিকিয়ে রাখতে আমাদের কতদিন সময় লাগবে তা বলা মুশকিল। কিন্তু আমরা বলতে পারি যে, এটি আমরা করবই। আমরা ইতোমধ্যে আমাদের লক্ষ্য, আমাদের বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
কিয়েভের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক ইতোমধ্যে শহর ছেড়েছেন বলে মেয়র ভিটালি ক্লিটস্কো জানান।