শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে জিতে শিরোপা ইংল্যান্ডের ঘরে

26

স্পোর্টস ডেস্ক :
তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচ উপভোগ করল ক্রিকেটবিশ্ব। রবিবার লর্ডসে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে সুপার ওভারের নাটকীয়তায় নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলল স্বাগতিকরা। এর আগে তিনবার ফাইনালে উঠলেও ইংল্যান্ড শিরোপা জিততে পারেনি। চতুর্থবার ফাইনালে উঠে তারা শিরোপার দেখা পেল। অন্যদিকে, টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠে রানার্স আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো নিউজিল্যান্ডকে।
এদিন লর্ডসে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৪১ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। পরে ইংল্যান্ড ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৪১ রান সংগ্রহ করে অলআউট হয়। টাই হওয়ায় পরবর্তীতে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। সুপার ওভারেও ম্যাচ টাই হয়। প্রথমে ব্যাট করে বিনা উইকেটে ১৫ রান করে ইংল্যান্ড। পরে নিউজিল্যান্ড এক উইকেটে ১৫ রান করতে সক্ষম হয়। কিন্তু ম্যাচে বাউন্ডারি মারার দিক থেকে এগিয়ে থাকায় ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হয়। ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ১৪টি চার ও ২টি ছয় মারে। অন্যদিকে, ইংল্যান্ড ২২টি চার মারে ও ২টি ছক্কা হাঁকায়।
সুপার ওভারে ইংল্যান্ডের হয়ে ব্যাট করতে নামেন বেন স্টোকস ও জস বাটলার। এক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ডের বোলার ছিলেন ট্রেন্ট বোল্ট। ওভারের প্রথম বল থেকে ৩ রান নেন স্টোকস। দ্বিতীয় বল থেকে এক রান নেন বাটলার। তৃতীয় বলে চার মারেন স্টোকস। চতুর্থ বল থেকে ১ রান নেন তিনি। পঞ্চম বলে ২ রান নেন বাটলার। শেষ বলে বাটলার বাউন্ডারি মারেন। মোট রান হয় ১৫।
ইংল্যান্ডের দেয়া ১৬ রানের জয়ের টার্গেট সামনে রেখে মার্টিন গাপটিল ও জেমস নিশামকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় নিউজিল্যান্ড। আর জফরা আর্চারকে বোলিংয়ের দায়িত্ব দেয় ইংল্যান্ড। ওভারের প্রথম ডেলিভারিটি ওয়াইড হয়। পরের বল থেকে ২ রান নেন নিশাম। দ্বিতীয় বলে তিনি ছক্কা হাঁকান। তৃতীয় বল থেকে ২ এবং চতুর্থ বল থেকে ২ রান নেন নিশাম। পঞ্চম বল থেকে তিনি ১ রান নিতে সক্ষম হন। শেষ বলে জয়ের জন্য নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ২ রান। এক্ষেত্রে ব্যাটসম্যান ছিলেন গাপটিল। তিনি বল মিড-উইকেটে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু বল সরাসরি ফিল্ডারের হাতে চলে যায়। তাই দ্বিতীয়বার রান নিতে গিয়ে রান আউট হন গাপটিল।
নিউজিল্যান্ডের দেয়া ২৪২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ড ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে প্রথম উইকেট হারায়। দলীয় ২৮ রানে ম্যাট হেনরির বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ হন ওপেনার জ্যাসন রয়। ২০ বলে ১৭ রান করেন রয়। এরপর দলীয় ৫৯ রানে গ্র্যান্ডহোমের বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ হন জো রুট। ৩০ বলে তিনি করেন মাত্র ৭ রান। দলের রান যখন ৭১ তখন লকি ফার্গুসনের বলে বোল্ড হন বেয়ারস্টো। ৫৫ বল খেলে বেয়ারস্টোর সংগ্রহ ৩৬ রান।
বেয়ারস্টো ফেরার পর জুটি বাঁধেন মরগ্যান ও স্টোকস। দুজন ভালো খেলছিলেন। কিন্তু ২৪তম ওভারে নিশামের বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে পয়েন্ট লকি ফার্গুসনের হাতে ধরা পড়েন মরগ্যান। দুর্দান্ত একটি লো ডা ডাউন ক্যাচ নেন ফার্গুসন। ২২ বলে ৯ রান করেন ইংলিশ অধিনায়ক।
দলীয় ৮৬ রানে চার উইকেট পড়ে যাওয়ার পর দলের হাল ধরেন স্টোকস ও বাটলার। দুজনে মিলে ১১০ রানের জুটি গড়েন। দলীয় ১৯৬ রানে ফার্গুসনের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে টিম সাউদির হাতে ক্যাচ হন বাটলার। ৬০ বলে ৬টি চারের সাহায্যে ৫৯ রান করেন তিনি। বাটলার ফেরার পর বিপাকে পড়ে যায় ইংল্যান্ড।
শেষ ৫ ওভারে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৪৬ রান, হাতে ৫ উইকেট। ৪৬তম ওভারে জেমস নিশাম বোলিংয়ে এসে ৭ রান দেন। ৪৭তম ওভারে লকি ফার্গুসন এসে ওভারের প্রথম বলেই ক্রিস ওয়েকসকে ফিরিয়ে দেন। এই ওভারে তিনি মাত্র ৫ রান দেন। শেষ তিন ওভারে দরকার ছিল ৩৪ রান। ৪৮তম ওভারে বোল্ট এসে দেন ১০ রান। সুতরাং, শেষ দুই ওভারে স্বাগতিকদের প্রয়োজন পড়ে ২৪ রান। ৪৯তম ওভারের তৃতীয় বলে প্লানকেটকে ফিরিয়ে দেন নিশাম। ওভারের শেষ বলে জফরা আর্চারকে বোল্ড করেন তিনি। এই ওভারে নিশাম দেন ৯ রান।
শেষ ওভারে ইংল্যান্ডের দরকার পড়ে ১৫ রান, হাতে দুই উইকেট। বেন স্টোকস উইকেটে ছিলেন বলেই স্বপ্ন দেখছিল ইংল্যান্ড। এই ওভারে বোলিংয়ে আসেন ট্রেন্ট বোল্ট। ওভারের প্রথম দুইটি বল ডট হয়। তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকান স্টোকস। চতুর্থ বল থেকেও আসে ছয় রান। এই বল থেকে দুই রান হতে পারতো। কিন্তু ওভারথ্রো থেকে আসে অতিরিক্ত চার রান। পঞ্চম বলে স্টোকস এক রান নিলেও রান আউট হয়ে যান আদিল রশীদ। আর শেষ বলে এক রান নিয়ে দ্বিতীয় রান নেয়ার সময় রান আউট হন মার্ক উড। যার ফলে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে।
এদিন সকাল থেকেই লর্ডসে বৃষ্টি ছিল। বৃষ্টির কারণে ১৫ মিনিট দেরিতে শুরু হয় খেলা। বৃষ্টিভেজা উইকেটে ইংলিশ পেসারদের দাপুটে বোলিংয়ের সামনে রান করতে হিমশিম খায় নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে উইকেটে ৮ রান ২৪১ সংগ্রহ করে কিউইরা।
নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৫ রান করেন ওপেনার হেনরি নিকোলস। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন টম লাথাম। ইংল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে লিয়াম প্লানকেট ৩টি, ক্রিস ওয়েকস ৩টি, জফরা আর্চার ১টি ও মার্ক উড ১টি করে উইকেট শিকার করেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস। আর ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার পেয়েছেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ফল: সুপার ওভারে জয়ী ইংল্যান্ড।
নিউজিল্যান্ড ইনিংস: ২৪১/৮ (৫০ ওভার)
(মার্টিন গাপটিল ১৯, হেনরি নিকোলস ৫৫, কেন উইলিয়ামসন ৩০, রস টেইলর ১৫, টম লাথাম ৪৭, জেমস নিশাম ১৯, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ১৬, মিচেল স্যান্টনার ৫*, ম্যাট হেনরি ২, ট্রেন্ট বোল্ট ১*; ক্রিস ওয়েকস ৩/৩৭, জফরা আর্চার ১/৪২, লিয়াম প্লানকেট ৩/৪২, মার্ক উড ১/৪৯, আদিল রশীদ ০/৩৯, বেন স্টোকস ০/২০)।
ইংল্যান্ড ইনিংস: ২৪১ (৫০ ওভার)
(জ্যাসন রয় ১৭, জনি বেয়ারস্টো ৩৬, জো রুট ৭, ইয়ন মরগ্যান ৯, বেন স্টোকস ৮৪*, জস বাটলার ৫৯, ক্রিস ওয়েকস ২, লিয়াম প্লানকেট ১০, জফরা আর্চার ০, আদিল রশীদ ০, মার্ক উড ০; ট্রেন্ট বোল্ট ০/৬৭, ম্যাট হেনরি ১/২৫, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ১/৪০, লকি ফার্গুসন ৩/৫০, জেমস নিশাম, মিচেল স্যান্টনার ০/১১)।
সুপার ওভার
ইংল্যান্ড: ১৫/০ (১ ওভার)
নিউজিল্যান্ড: ১৫/১ (১ ওভার)
ম্যাচ সেরা: বেন স্টোকস (ইংল্যান্ড)।
ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট: কেন উইলিয়ামসন (নিউজিল্যান্ড)।