জগন্নাথপুরে ডিলারে অভাবী মানুষের দীর্ঘ লাইন, তবুও মিলছে না চাল-আটা

8

মো. শাহজাহান মিয়া জগন্নাথপুর থেকে :
জগন্নাথপুরে ওএমএস ডিলারে কমদামে ৫ কেজি চাল ও আটা কিনতে অভাবী মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। তবুও মিলছে না চাল-আটা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর যারা চাল অথবা আটা কিনতে পারেন, তাদের মুখে একটু হাসি ফুটে উঠে। আর যারা পান না, তারা মন খারাপ করে নিরাশ হয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব পড়েছে চাল বাজারে। হাট-বাজারে চালের দাম আরো বেড়েছে। যে কারণে কমদামে সরকারি চাল-আটা কিনতে ওএমএস ডিলারে দিনে দিনে বেড়েই চলছে অভাবী মানুষের লাইন। তাই দিনব্যাপী অপেক্ষার পর যাতে খালি হাতে ফিরতে না হয়, সে জন্য আরো বেশি করে চাল-আটা বরাদ্দের দাবি এখন জোরালো হয়ে উঠেছে।
৮ মার্চ মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, জগন্নাথপুর পৌর শহরের রাণীগঞ্জ রোডে থাকা ওএমএস ডিলার সুশান্ত কুমার রায় ও বটেরতল এলাকায় থাকা ডিলার বশির আহমদের দোকানে সারিবদ্ধ হয়ে নারী-পুরুষ জনতা দীর্ঘ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ডিলারদের লোকজন লাইনের প্রথমে থাকা মানুষের কাছে চাল-আটা বিক্রি করছেন। এতে আগে ক্রেতাদের নাম ও ঠিকানা রেজিস্টার খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়। পরে টিপসহি ও টাকা নিয়ে চাল ও আটা দেয়া হয়। এভাবেই সিরিয়াল বজায় রেখে দ্রুত চাল-আটা বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে সিরিয়ালের আগে যেতে রীতিমতো প্রতিযোগিতা করছেন লাইনে দাঁড়ালো লোকজন। এ সময় লাইনে অভাবী মানুষের মাঝে বেশ কয়েকজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সম্মানী মানুষকেও দেখা যায়। তারা মুখে মাস্ক অথবা কাপড় লাগিয়ে লোকলজ্জার ভয়ে রীতিমতো নিজেকে লুকিয়ে কমদামে সরকারি চাল ও আটা কিনতে এসেছেন। পরিবারে অভাব-অনটন না থাকলে কোন মানুষ লাইনে এসে দাঁড়াবেন না। বাস্তবে নিজ চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না। বুঝতেও পারবেন না অভাবী মানুষের কষ্ট। দীর্ঘ অপেক্ষা করেও যদি চাল বা আটা কেনা যায়, তাহলে পরিবারের মানুষের মুখে অন্য তুলে দেয়া যাবে। এমন আশায় দাঁড়িয়ে থাকেন মানুষ। তখন লাইনে থাকা নারীদের সাথে অবুঝ শিশুদেরও দেখা যায়।
এ সময় নাম প্রকাশ না করে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নারী-পুরুষ জনতাদের মধ্যে অনেকে বলেন, বাজারে চাল ও আটার দাম আরো বেড়ে গেছে। গত কয়েক দিন আগেও প্রতি কেজি চাল ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় পাওয়া যেত। বর্তমানে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হয়ে গেছে। ঠিক এভাবেই বেড়েছে তেল, আটা সহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। তাই দিশেহারা হয়ে ৩০ টাকা কেজিতে সরকারি চাল কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কখন চাল বা আটা কিনতে পারবো, কি পারবো না জানি না। ভোররাত থেকে অনেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। যে কারণে সিরিয়ালে তারা আগে রয়েছেন। পরে যারা এসেছেন, তারাই দুশ্চিন্তায় আছেন। এর মধ্যে অধিকাংশ মানুষ খেয়ে না খেয়ে লাইনে আছেন। তাই লাইনে থাকা এসব অভাবী মানুষের মুখের দিকে তাকানো যায় না। তাদের মনোকষ্টের চাপ চেহারাতে পড়ছে। শুধু চাল বা আটা পেলে একটু হেসেই বাড়ি ফিরছেন।
এ ব্যাপারে ওএমএস ডিলার সুশান্ত কুমার রায়, ডিলার বশির আহমদ ও তাদের সহযোগি ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ান তালুকদার জানান, সরকারি এসব চাল প্রতি কেজি ৩০ টাকা ও প্রতি কেজি আটা ১৮ টাকা দরে জনপ্রতি ৫ কেজি করে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন ভোর থেকে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। আমরা সকাল ৮ থেকে ৯ টার মধ্যে দোকান খোললেই মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েন। তখন তাদেরকে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়। তাই সিরিয়ালে চাল-আটা বিক্রি করছি। এক প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, আমরা প্রতিদিন বরাদ্দ পাই মাত্র একটন চাল-আটা। তা দিয়ে সবার কাছে বিক্রি করা সম্ভব হয় না। বেলা ১২ টার আগেই আমাদের চাল-আটা শেষ হয়ে যায়। তবুও থাকে মানুষের লাইন। তখন আমাদের কিছুই করার থাকে না। তাই অনেকে খালি হাতে যেতে হয়। চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অপ্রতুল। তাই সরকার বরাদ্দ আরো বাড়ালে সকল মানুষের কাছে চাল-আটা বিক্রি করা যাবে। তা না হলে এমন অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা যাবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আবদুর রব বলেন, বরাদ্দ আরো বাড়ানো প্রয়োজন। বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। সরকার বরাদ্দ বাড়ালে কাউকে আর খালি হাতে ফিরতে হবে না।