স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করুন

3

দেশের বেশির ভাগ মানুষের বসবাস গ্রামাঞ্চলে। তাদের বঞ্চিত রেখে দেশের স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতি কোনোভাবেই উন্নত হতে পারে না। সেই লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইউনিয়ন পর্যায়ে চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়।
কিন্তু নানা ধরনের অব্যবস্থাপনার কারণে সেসব উদ্যোগ কাক্সিক্ষত ফল দিতে পারছে না। জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের রানাশাল কমিউনিটি ক্লিনিক। ক্লিনিকটি কবে খোলা হবে, তা-ও জানে না এলাকাবাসী। প্রতিদিন ক্লিনিকটিতে চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছে স্থানীয় রোগীরা। এতে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মা ও শিশুরা।
জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে পর্যায়ক্রমে ৫৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। তারই একটি রানাশাল কমিউনিটি ক্লিনিক। এখানে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ চিকিৎসা নিতে আসে। কিন্তু ২০১১ সালে এখানকার পরিবার কল্যাণ সহকারী এবং ২০১৬ সালে স্বাস্থ্য সহকারী অন্যত্র বদলি হয়ে যান। এরপর একজন কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রভাইডার (সিএইচসিপি) স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছিলেন। সিএইচসিপি চামেলী আক্তার গত ১৩ মার্চ থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। এর ফলে ক্লিনিকটির স্বাস্থ্যসেবা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, উপজেলায় স্বাস্থ্য সহকারীর ৬৯টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ৩৯ জন। ফলে সংকট হচ্ছে। তিনি জানান, ওই ক্লিনিকে শিগগিরই একজন স্বাস্থ্য সহকারী দেওয়া হবে।
অব্যবস্থাপনার এমন চিত্র শুধু রানাশাল কমিউনিটি ক্লিনিকের নয়, সারা দেশের আরো অনেক কমিউনিটি ক্লিনিকেরই এমন করুণ দশা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর অবস্থাও ভালো নেই। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নেই। বিনা মূল্যে বিতরণের ওষুধ রোগীরা পায় না। রোগ পরীক্ষার জন্য ছুটতে হয় বেসরকারি ক্লিনিকে। সরকারি সংস্থার গবেষণায়ই দেখা যায়, সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা ৯৩ শতাংশ রোগী হাসপাতাল থেকে ওষুধ পায় না। তাদের মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ রোগীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ছুটতে হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। ফলে ব্যক্তিগত চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি হচ্ছে। ২০১২ সালে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের কৌশলপত্রে বলা হয়েছিল, ২০৩২ সালের মধ্যে চিকিৎসায় ব্যক্তির ব্যয় ৩২ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে উল্টোটা। ২০১২ সালে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় ছিল ৬৪ শতাংশ, ২০১৫ সালে বেড়ে হয় ৬৭ শতাংশ এবং ২০২১ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৬৮.৫ শতাংশ। ফলে চিকিৎসা করাতে গিয়ে বহু মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে।
গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিকগুলোকে যথাযথভাবে সচল করতে হবে।