জৈন্তাপুরে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদন্ড

5

স্টাফ রিপোর্টার :
জৈন্তাপুর এলাকায় স্ত্রী হত্যার দায়েরকৃত মামলায় এক স্বামীর যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ের পাশাপাশি দন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ২ বছরের বিনাশ্রমে কারাদন্ড দেওয়া হয়। গতকাল রবিবার ২০ ফেব্রুয়ারী দুপুর ১ টার দিকে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক মিজানুর রহমান ভূঁইয়া এ রায় প্রদান করেন।
দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর নাম, উমর ফারুক উরফে দোলন (২৭)। সে জৈন্তাপুর থানার নিজপাট পূর্ববাজারের (পুকুরপাড়) সৎপিতা হেলাল মিয়ার পুত্র। বর্তমানে সে জৈন্তাপুরের শ্রীপুর আলু বাগানের বাসিন্দা। রায় ঘোষনার সময় দন্ডপ্রাপ্ত আসামী আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলো।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বেঞ্চ সহকারী সৈয়দ আনোয়ারুল ইসলাম।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, বি-বাড়ীয় জেলার নাসিরনগর থানার ফান্দাউক গ্রামের রফিক মিয়ার কন্যা বর্তমানে নগরীর পাঠানটুলা নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার ১২ নং বাসার বাসিন্দা পুতুল বেগমের (২১) সাথে চাকুরী করাকালীন সময়ে শহরতলীর মেজরটিলা স্কলার্স হোম কলেজের পিয়ন উমর ফারুক উরফে দোলনের প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে। ২০১১ সালের ২ মে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে তামিম ইকবাল নামের এক ছেলের জন্ম হয়। এরপর থেকে তাদের সংসারে পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ চলে আসছিলো। এক পর্যায়ে ঘটনার এক বছর পূর্বে পুতুল বেগম ছেলেকে নিয়ে পিতার বর্তমান বাসায় চলে আসেন। এদিকে দোলন ঘটনার ৭/৮ মাস পূর্বে জৈন্তাপুর ব্লক ফ্যাক্টরীতে চাকুরী করতে থাকেন। মাঝে মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর ফোনে কথা হতো। ২০১৫ সালের ১৯ অক্টোবর দুপুরের দিকে ফোন পেয়ে পুতুল বাসায় ছেলেকে রেখে স্বামী দোলনের কাছে চলে যান। এরপর পুতুলের আর খোঁজখবর পাওয়া যায়নি। ঐদিন রাতে স্বামী দোলন তার স্ত্রী পুতুল বেগমকে নৃশংস ভাবে মাথায় পাথর দিয়ে হত্যা করে জৈন্তাপুর এলাকার মোকামবাড়ী আলু বাগান সংলগ্ন জাফলং ভ্যালী বোর্ডিং স্কুলের টিলার নিচে পাহাড়ী নালার জঙ্গলে ফেলে পালিয়ে যান। ৩১ অক্টোবর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পুতুল বেগমের অজ্ঞাতনামা গলিত লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেটে ওসমানী হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। পরে পুলিশ বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে নগরীর মানিকপীর টিলায় দাফন করে। বিষয়টি জানতে পেরে নিহত পুতুলের পরিবার জৈন্তাপুর থানায় গিয়ে তার কাপড়-চোপড় দেখে লাশ সনাক্ত করেন। এ ঘটনায় নিহত পুতুলের মা মোছা: আনোয়ারা বেগম বাদি হয়ে সুকৌশলে হত্যা করে লাশ গুম করার অপরাধে একমাত্র উমর ফারুক উরফে দোলনকে আসামী করে জৈন্তাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং- ২ (০৪-১১-২০১৫)।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ১২ মার্চ সিলেট জোনের সিআইডির সাব-ইন্সপেক্টর মো: আবুল কালাম একমাত্র আসামী উমর ফারুক উরফে দোলনকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। একই বছরের ২০ নভেম্বর থেকে আদালত এ মামলার বিচারকায্য শুরু করেন।
দীর্ঘ শুনানী ও ১৪ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গতকাল আদালত আসামী উমর ফারুক উরফে দোলনকে ১৮৬০ সালের পেনাল কোড ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ১ লক্ষ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ২ বছরের বিনাশ্রমে কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট জসিম উদ্দিন ও আসামীপক্ষে এডভোকেট মইনুল ইসলাম মামলাটি পরিচালনা করেন।