সবার জন্য টিকা

4

পরিস্থিতি যেমন দাঁড়িয়েছে তাতে করোনা নিয়েই চলতে হবে আরও বেশ কিছুকাল। বিশ্বের কোন দেশ এখন আর লকডাউন বা কঠোর নিষেধাজ্ঞার কথা ভাবছে না। বাংলাদেশও নয়। করোনা থাকবে। এর মধ্যেই সুরক্ষা নিশ্চিত করে চলতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, নাগরিকদের সুরক্ষায় সবার জন্য টিকার ব্যবস্থা করবে সরকার। মাস্ক ব্যবহার করে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে নাগরিকরা তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবেন। টিকার অভাব হবে না। দেশে যথেষ্ট পরিমাণ টিকা রয়েছে। আরও টিকা নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হবে।
টিকা দেয়ার প্রক্রিয়ার মূল মাধ্যম হচ্ছে সুরক্ষা এ্যাপস। সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এই এ্যাপস তৈরি করেছে। এর মাধ্যমেই সুষ্ঠুভাবে চলছে টিকাদান প্রক্রিয়া। কে কখন, কোথায় টিকা নেবেন সবকিছু নির্ধারিত হচ্ছে এ্যাপসের মাধ্যমে। সারাদেশের কোটি কোটি মানুষের তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং প্রদর্শন করছে দেশে তৈরি সুরক্ষা এ্যাপস। এমন একটি এ্যাপস তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ ধন্যবাদ পেতেই পারে। সুরক্ষা এ্যাপসের সাফল্য ভবিষ্যতে দেশের সকল মানুষকে এক ছাতার নিচে ধরে রেখে তথ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করার পথ দেখাচ্ছে। এর আগে অবশ্য জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জন্ম নিবন্ধন এ্যাপস। এসব এ্যাপসের সুবিধা এখনও মানুষ শতভাগ ভোগ করতে পারছে না। নতুন নিবন্ধন প্রক্রিয়া কিংবা ভুল সংশোধনে মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সুরক্ষা এ্যাপসের সেবা প্রক্রিয়া আরও একধাপ উন্নত হবে।
এ্যাপসটির কিছু কিছু ঘাটতিও রয়ে গেছে। এই কারণে সমাজের কিছু মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন করোনার টিকা থেকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দেশের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা জন্ম নিবন্ধনের আওতায় আসেনি। অনেক দরিদ্র মানুষ এতদিন মনে করেছে এসবে তাদের কোন প্রয়োজন নেই। এখন টিকা দিতে গিয়ে তারা সমস্যা বুঝতে পারছেন। জটিলতার কারণে তারা তাৎক্ষণিকভাবে এনআইডি বা জন্মনিবন্ধন করতেও পারছেন না। নিতে পারছেন না টিকা। বিশেষ করে বস্তিবাসী বা ভাসমান মানুষই এই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন বেশি। সরকার একবার বস্তিতে গিয়ে টিকা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। পরে তা বন্ধ হয়ে যায়।
এর বাইরেও অনেকে বিদেশ থেকে একটি বা দুটি টিকা নিয়ে দেশে ফিরে সুরক্ষা এ্যাপসের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারছেন না। এ কারণে তারা টিকার দ্বিতীয় বা বুস্টার ডোজ নিতে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। সুরক্ষা এ্যাপসের এ ধরনের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এনআইডি কিংবা জন্ম নিবন্ধন না থাকলে কিংবা বিদেশ থেকে আংশিক টিকা নিয়ে দেশে ফিরলে সুরক্ষা এ্যাপসের মাধ্যমে কিভাবে টিকা নেয়া যায়, তা ভেবে দেখতে হবে। প্রয়োজনে এ্যাপসটিতে আরও কিছু সুবিধা সংযুক্ত করতে হবে। সকলকে টিকা দেয়ার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা বা কর্মপ্রক্রিয়া নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। ছোটখাটো সব সমস্যা দূর করতে পারলেই সবার জন্য টিকার বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।