মিয়ানমার সেনারা রোহিঙ্গা দালালদের সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে

4

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আশ্রয় ক্যাম্পে তালিকাভুক্ত মিয়ানমারের সন্ত্রাসী গ্রুপ আরসা ক্যাডারদের রাখাইন রাজ্যে মাদক কারবার ও চিংড়ি ঘের করার সুযোগ দিয়ে যাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া বহু রোহিঙ্গা মিয়ানমার আর্মির তাঁবেদার হিসেবে কাজ করছে। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে জাতিসংঘ একমত পোষণ করায় মহাখুশি আশ্রিতরা। তবে মিয়ানমার সেনাদের দালালদের কারণে অতিষ্ঠ বলে জানিয়েছে সাধারণ রোহিঙ্গারা।
জানা যায়, সরকারী বাহিনীর সঙ্গে একমত হয়ে কাজ করার ও প্রত্যাবাসন ঠেকানোর শর্তে গত এক বছর ধরে কিছু রোহিঙ্গা অবাধে মিয়ানমারে গিয়ে চিংড়ি চাষ করছে। আর বাংলাদেশে নিয়ে আসছে লাখ লাখ পিস ইয়াবার চালান। ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গা আল-ইয়াকিন তথা আরসা ক্যাডাররা চলতি বছরের শুরুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক করেছে। বৈঠকে সশস্ত্র রোহিঙ্গারা দেশটির সরকারের বিরুদ্ধাচারণ করবেনা। বরং বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ঠেকাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এজন্য তাদের ইয়াবা, স্বর্ণ ও চিংড়ি চাষ করার সুযোগ দিয়েছে মিয়ানমার সেনা কর্তৃপক্ষ। সুবিধাভোগী রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে রেশনও পাচ্ছে-ওপারে গিয়ে মাদক ও পরিত্যক্ত চিংড়ি ঘেরে মাছ চাষ এবং বাগদা চিংড়ি বাংলাদেশে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকাও আয় করছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরে ঘুমধুম থেকে রহমতেরবিল বরাবর নোম্যান্স ল্যান্ডে দাঁড়ালেই আশ্রিত রোহিঙ্গারা যে ওপারে চিংড়ি ঘেরে চাষাবাদ করছে, তা স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায়।
সীমান্তের একাধিক সূত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গারা রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসার পর সেখানে হাজার হাজার একর জমি ও চিংড়ি ঘের পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। মিয়ানমারের সরকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, ওইসব মৎস্য ঘেরে চিহ্নিত রোহিঙ্গাদের চাষাবাদের নামে পাহারায় রাখা দরকার। সশস্ত্র বিদ্রোহীরা যে কোন সময় রাখাইন রাজ্যে ঢুকে পড়তে পারে সন্দেহে মিয়ানমার সেনারা কিছু রোহিঙ্গা দালাল ঠিক করে। ওইসব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার আর্মির তাঁবেদার (তাদের ভাষায় থাব্যে) হিসেবে রাখা হয়। উল্লেখ্য, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সৃষ্টি আরাকান বিদ্রোহী একাধিক গ্রুপ রয়েছে। তন্মধ্যে কিছু কিছু রোহিঙ্গা গ্রুপ মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনাদের পক্ষে কাজ করে থাকে। ওই রোহিঙ্গাদের কাছে রয়েছে ইন্টারনেট সুবিধার দামী মোবাইল সেট। তারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রতিদিন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কাছে বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর ঘাঁটি, ক্যাম্প-কমান্ডারের নামসহ বহু রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ফাঁস করছে। উখিয়া টেকনাফ অঞ্চলের আশ্রয় ক্যাম্পে সরকার কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছে, কোন কোন দেশের প্রতিনিধি দল সফরে আসছে, তারা মিয়ানমারকে নিয়ে কী মন্তব্য করেছে- ইত্যাদি এখানে অনেকে জানার আগেই জেনে যায় মিয়ানমার সরকার। অথচ, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বর্বর নির্যাতন চালিয়ে রোহিঙ্গাদের ঠেলে দিয়েছে বাংলাদেশে। তারা নিজেদের ঘরবাড়ি ফেলে প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। কিছু টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের একাংশ সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা ওইসব নির্যাতনের কথা বেমালুম ভুলে যায়। তারা বিজিপি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গুপ্তচর হিসেবে কাজ করে চলেছে।
কিছুদিন আগে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তির কামাল নামে এক রোহিঙ্গা যুবককে মিয়ানমারের গুপ্তচর সন্দেহে উত্তম-মাধ্যম দিয়ে উখিয়া থানা পুলিশে দিয়েছিল রোহিঙ্গারা। সে মিয়ানমারের মংডু বলি বাজারের আয়ের চরের মৃত সৌরভ হোসনের পুত্র। বস্তির রোহিঙ্গারা জানায়, ধৃত কামাল কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি এলাকায় বসবাস করে সব তথ্য মিয়ানমারে পাচার করত। রোহিঙ্গা ক্যাম্প অভ্যন্তরে মোবাইল কোম্পানিগুলোর ফ্রিকোয়েন্সি বলবৎ থাকায় মিয়ানমারের ওইসব দালাল (থাব্যে) বাংলাদেশের গোপনীয়তা ফাঁস করার সুযোগ পাচ্ছে বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
জানা গেছে, আরাকানের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার, নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার অজুহাতে তৎকালীন বিএনপির জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের একাধিক জঙ্গী সংগঠন তৎপর ছিল। রোহিঙ্গা প্যাটরিওটিক ফ্রন্টের (আরপিএফ) উস্কানিতে ১৯৭৮ সালে স্বদেশ ত্যাগ করে চার লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। ওই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চলাকালীন বিএনপি-জামায়াতের কতিপয় নেতার ইন্ধনে কিছু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ফাঁকি দিয়ে থেকে যায় এদেশে। পরবর্তীতে তৎকালীন বিএনপি সরকার ওসব রোহিঙ্গা নেতাদের পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে মূল্যবান ভূমি বরাদ্দ দিয়ে এদেশে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। ওই সময় মধ্যপ্রাচ্যের কুয়েত, কাতার, দুবাই, সৌদি আরবসহ কয়েকটি রাষ্ট্র থেকে তারা বিপুল আর্থিক সহায়তা লাভ করত। এদের দেখাদেখিতে গঠন করা হয় আরএসও, এআরএনও, এআরআইএফ এবং নূপাসহ বহু আরাকান বিদ্রোহী সংগঠন। সর্বশেষে সশস্ত্র রোহিঙ্গারা গঠন করে আল ইয়াকিন তথা আরসা।
টেকনাফের নয়াপাড়া ও উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের একাধিক রোহিঙ্গা ক্ষোভের সঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, কিছু থাব্যের (দালাল) জন্য গোটা রোহিঙ্গা জাতি মিয়ানমারে রাখাইনেও পুলিশ-সেনার হাতে হত্যা এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে, এখানেও ওই দালালদের জন্য শান্তিতে বসবাস করতে পারছেনা। তাদের জন্য নিরীহ রোহিঙ্গারা হয়রানির শিকার হচ্ছে।