অটিস্টিক একাডেমী করা হোক

11

অটিস্টিক শিশুদের জন্য একটি একাডেমি প্রতিষ্ঠার প্রকল্পের ক্ষেত্রে। ২০১৪ সালে হাতে নেওয়া প্রকল্পের কাজ ছয় বছরেও শুরু হয়নি। অথচ দেশে নানা কারণেই অটিজমে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে ঠিক কতজন শিশু অটিজমে আক্রান্ত, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। চিকিৎসকরা বলছেন, অটিজম কোনো রোগ নয়। মস্তিষ্কের বিকাশজনিত এক ধরনের সমস্যার কারণে একটি শিশু সামাজিক যোগাযোগ ও সম্পর্ক তৈরি করতে পারে না। দ্রুত শনাক্ত করতে পারলে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারলে এই শিশুরাও অন্যান্য শিশুর মতো উন্নতি করতে পারে। দেশের মেডিক্যাল কলেজগুলোর ১৬টিতে শিশু বিকাশ কেন্দ্র রয়েছে, যেগুলোতে অটিজম শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শহর বা গ্রাম পর্যায়ে রয়েছে শুধু সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবন্ধী সাহায্য ও সেবা কেন্দ্র। ফলে অটিজম বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ শহরের ঘরে ঘরে যতটা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে, শহরের বাইরে তেমনটি হচ্ছে না। অটিজম সচেতনতায় বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রীকন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। এ বিষয়ে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন নানা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও। তাঁরই অনুপ্রেরণায় সরকার অটিজম শিশুদের জন্য একটি একাডেমি করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের আওতাধীন ‘ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিস-এবিলিটিজ’, সংক্ষেপে ‘এনএএএনডি’ নামে ২০১৪ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু অনিয়ম আর অদক্ষতায় ডুবতে বসেছে সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এই প্রকল্প। অটিজম ও এনডিডি বিষয়ক মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষণে আটটি ব্যাচে এখন পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ৪০০ জনকে। অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণে ২১৪টি ব্যাচে ৯ হাজার ২০ জনকে এবং উপজেলা পর্যায়ে দিনব্যাপী ওরিয়েন্টেশন ওয়ার্কশপে ৩৯২টি উপজেলায় ৩৯ হাজার ২০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এসব প্রশিক্ষণে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হলেও মাউশি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রশিক্ষণের প্রায় পুরো টাকাই জলে গেছে। কারণ একাডেমি স্থাপিত হলে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের কাজ শুরু হবে। পাঁচ-ছয় বছর আগে যাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাঁদের কিছু মনে থাকার কথা নয়। এ ছাড়া প্রশিক্ষণের নামে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে লুটপাট করা হয়েছে বেশির ভাগ টাকাই। গত জুন মাসে প্রকাশিত মাউশি অধিদপ্তরের ২০১৮ সালের মনিটরিং রিপোর্টেও প্রকল্পটি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে বিশেষভাবে ভাবতে হবে। অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত একটি প্রকল্প কেন বিলম্বিত হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।