দেশে দিন দিন চিকিৎসা সেবা বাড়ানো হচ্ছে, যাতে এজন্য দেশের মানুষকে বাইরে যেতে না হয় – পররাষ্ট্রমন্ত্রী

6
সিলেট ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত জনসচেতনতামূলক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি।

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাম্পাসের পূর্ব দক্ষিণ অংশে ১৭ তলা ভবনের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। তাতে হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং কিডনি রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করা হবে। যাতে আগামীতে চিকিৎসার জন্য আর আমাদের দেশের বাইরে যেতে না হয়। এছাড়াও সিলেট ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল সরকার থেকে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রবাসীদের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে তা কাজে লাগিয়ে হৃদরোগীদের জন্য অলাভজনক ও সেবামূলক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি সংস্থায় রিজলভ টু সেইভ লাইভস এর সহযোগিতায় শনিবার সকালে সিলেট ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং জালালাবাদ এসোসিয়েশন মিলে উচ্চ রক্তচাপের উপর সিলেট জেলায় জনসচেতনতামূলক পাইলট প্রকল্পের আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন একথাগুলো বলেন। তিনি আরো বলেন, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের জীবনধারার পরিবর্তন আনতে হবে। খাদ্যাভ্যাসসহ সহ হাঁটাচলা বাড়াতে হবে। এ প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, খেলাধূলার জন্য খেলার মাঠ সৃষ্টি করতে হবে। তিনি বলেন, খেলাধূলা মনোরঞ্জনের জন্য শাহী ঈদগাহে কালাপাথরে একটি খেলার মাঠ চালু হচ্ছে। ড. মোমেন বলেন, যে কোনো কাজ বলেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কথাই বলেন, তার জন্য ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং জালালাবাদ এসোসিয়েশন আপনারা হাল ছাড়বেন না। অর্থাৎ আপনারা লেগে থাকবেন। তিনি বলেন, জনগণের কল্যাণের কোনো ধরনের কাজে আমাকে কাজে লাগানোর অনুরোধ ব্যক্ত করছি। এমনকি মহতী উদ্যোগ সরকার সবসময় সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ এ আমাদের মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, আমেরিকার মতো দেশে লোকসংখ্যা আমাদের চেয়ে দ্বিগুণ থাকার পরও করোনায় মৃত্যুর হার ৭ লক্ষ ২০ হাজার। সেই হিসেবে আমাদের দেশে মারা যাবার কথা সাড়ে ৩ লক্ষ মানুষ। কিন্তু আমাদের দেশে মারা গেছেন ২৭ হাজার মানুষ।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন সিলেটের পাবলিসিটি সেক্রেটারি আবু তালেব মুরাদের পরিচালনায় এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ব্রিগেডিয়ার (অব:) আব্দুল মালিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার এবং হাবিবুর রহমান হাবিব।
সভাপতির ভাষণে জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব:) আব্দুল মালিক বলেন, উচ্চ রক্তচাপ একটি নিরব ঘাতক। অর্থাৎ আমরা অনেকেই জানি না, আমাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ যদি আমরা ঠিকমতো সেবন না করি তাহলে আমাদের অনেক সমস্যা হতে পারে। এমনকি একজন মানুষ অন্ধত্ব ভোগ করতে পারে। তাই আমাদের জীবনধারার পরিবর্তন আনতে হবে। অর্থাৎ কায়িক পরিশ্রম, ফাস্টফুড পরিত্যাগ করা, ধূমপান এবং তামাক সেবন না করা। আজকের আলোচনার মুখ্য উদ্দেশ্য হলো জনগণকে সচেতন করা এবং জানা জিনিস বার বার বলতে হবে। বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকেন। দেশে উচ্চ রক্তচাপ শনাক্তকরণ ও নিয়ন্ত্রণের হার বাড়াতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা রিজলভ টু সেইভ লাইভসের সহযোগিতায় আমরা যে পাইলট প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি সেই প্রজেক্টকে বাস্তবায়ন করার জন্য জালালাবাদ এসোসিয়েশন এগিয়ে এসেছেন। তাদেরকে আমি ধন্যবাদ জানাই।
বিশেষ অতিথির ভাষণে হাফিজ আহমদ মজুমদার এমপি বলেন, আমাদের দেশের উন্নয়নের যে উড়োজাহাজ তা আমরা রানওয়ের মাথায় নিয়ে এসেছি। এখন প্রয়োজন যুব সমাজের ভূমিকা। অর্থাৎ যুব সমাজ ইচ্ছা করলে এই উড়োজাহাজের উন্নয়নের গতি আরো ত্বরান্বিত করতে পারে। তিনি বলেন, বিরাট সম্ভাবনার দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। সুতরাং এই সম্ভাবনার জন্য কাজ করে যেতে হবে। সিলেট ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনও সম্ভাবনার একটি অংশ।
বিশেষ অতিথির ভাষণে হাবিবুর রহমান হাবিব এমপি একটি প্রস্তাবনা রেখে বলেন, সুরমার পাড়কে যদি ১০ কিলোমিটার জুড়ে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে করা যায় তাহলে সেমিনার করে মানুষকে সচেতন করার প্রয়োজন পড়বে না। তিনি বলেন, সিলেটের উন্নয়ন নিয়ে এখন থেকে আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে। তিনি উপজেলা পর্যায়ে হৃদরোগ চিকিৎসা আরো বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।
এর আগে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী বলেন, উপজেলা পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের শুধু চিকিৎসাসেবা দিলে এবং ফ্রি মেডিসিন দিলে হবে না। তারা তা ঠিকমতো করছে কিনা তার জন্য ফলোআপ করতে হবে। এবং এই কাজগুলো প্রান্তিক লেভেলে করতে গেলে জনসচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি ড. এ কে আব্দুল মোবিন বলেন, সিলেট বিভাগে ৪ টি জেলায় ৩৭টি উপজেলায় উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত জনসচেতনতার যে কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে, তাতে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সাথে আমরা জালালাবাদ এসোসিয়েশন সম্পৃক্ত হয়ে আশা করি সাফল্যজনক ভূমিকা রাখতে পারবো।
সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডাঃ হিমাংশু লাল রায় বলেন, অসংক্রামক ব্যাধির কারণে আমাদের দেশে প্রতি বছর মৃত্যুর পরিমাণ ১০.৫ মিলিয়ন অর্থাৎ করোনা ভাইরাসের মৃত্যুর দ্বিগুনের চেয়ে বেশি। সুতরাং মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা বাড়িয়ে অসংক্রামক ব্যাধির হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করতে হবে।
হাইপারটেনশন কমিটি অব ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক এপিডেমিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে বলেন, হৃদরোগে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। শতকরা ৩০ ভাগ মানুষের মৃত্যু হয় অসংক্রামক ব্যাধি হৃদরোগের কারণে। সেজন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করে মানুষকে হৃদরোগের কারণ সম্বন্ধে বোঝাতে হবে। এর মধ্যে প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ এবং এই উচ্চ রক্তচাপ যেসব কারণে হয়ে থাকে সেদিকে আমাদের সচেতন হতে হবে। বিজ্ঞপ্তি